দুর্ব্যবহার করাই বার্সার অভ্যাস

বার্সেলোনা ছেড়ে সুয়ারেজের ঠিকানা এখন আতলেতিকো।ছবি: রয়টার্স

এই তো, গত দশকের শেষ দিকের কথা। সে সময় উরুগুয়ের স্ট্রাইকার দিয়েগো ফোরলান ছিলেন আতলেতিকো মাদ্রিদের সবচেয়ে বড় তারকা। দলকে জিতিয়েছিলেন ইউরোপা লিগ ও উয়েফা সুপার কাপ। মোটামুটি এক দশক পর যখন ফোরলানের এক সময়ের স্বদেশি সতীর্থ লুইস সুয়ারেজ যোগ দিলেন আতলেতিকোতে, ফোরলানের তো আনন্দ হবেই।

তবে আনন্দের মধ্যেও বার্সেলোনাকে একটা ধাক্কাই দিলেন ফোরলান। বার্সা থেকে সুয়ারেজের বিদায়ের ধরন ও তার আগের নাটক দেখে ফোরলানের মনে হচ্ছে, সুয়ারেজই প্রথম নন, বার্সা এমন দুর্ব্যবহার আরও অনেকের সঙ্গেই করেছে।

উরুগুয়ের ইতিহাসের তর্কসাপেক্ষে সেরা দুই স্ট্রাইকার ফোরলান ও সুয়ারেজ।
ছবি : টুইটার

সুয়ারেজের মতো কার্যকরী এক স্ট্রাইকার আতলেতিকোতে এসেছেন, ফোরলানও তাই স্বপ্ন দেখছেন লিগ জয়ের। সুয়ারেজের ছোঁয়ায় বার্সেলোনা ও রিয়াল মাদ্রিদকে হটিয়ে আতলেতিকো আবারও উঠবে স্প্যানিশ ফুটবলের চূড়ায়, এমনই আশা তাঁর। রেডিও মার্কাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ফুটে উঠেছে সেই আশাবাদ, ‘সুয়ারেজের মতো একজন খেলোয়াড় আতলেতিকোর সঙ্গে বেশ ভালো যায়। আমার মনে হয় ও এই ক্লাবটাকে নিজের বাড়ি মনে করে থাকবে। আশা করব, ও যেন ক্লাবকে স্প্যানিশ লিগের শীর্ষে উঠতে সাহায্য করে।’

তবে ফোরলান এটাও বেশ ভালো জানেন, আজ বার্সেলোনার ভেতরে টালমাটাল অবস্থা না থাকলে সুয়ারেজ আতলেতিকোয় যেতেন না। তর্কযোগ্যভাবে বার্সেলোনার ইতিহাসের সেরা এই স্ট্রাইকারের বিদায়টা হয়েছে নীরবে-নিভৃতে। চুক্তিতে এক বছর বাকি থাকা সত্ত্বেও ক্লাব সেটা বাতিল করেছে। কোনো রকমে সুয়ারেজকে ক্লাব থেকে বের করতে পারলেই যেন বার্সা বাঁচে!

গোটা প্রক্রিয়াটা মন খারাপ করা হলেও, ফোরলান মোটেও আশ্চর্য হননি, ‘ক্লাবটা সুয়ারেজের সঙ্গে যা করল, অমনটা এর আগেও করেছে ওরা। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ও ক্লাবের হয়ে নিজের সামর্থ্যের সবটুকু ঢেলে দিয়েছে। ওর আক্ষেপ করার কিছু নেই।’

সুয়ারেজ চলে যাওয়ায় বার্সেলোনার কতটুকু লাভ বা ক্ষতি হলো, তা এই মৌসুমে বোঝা যাবে। তবে দৃশ্যত আতলেতিকোর লাভই হয়েছে। যার ফলে ফোরলান স্বপ্ন দেখছেন, ওয়ান্দা মেত্রোপলিতানোতে গড়ে উঠবে নতুন এক আক্রমণভাগ, ‘আতলেতিকোর আক্রমণভাগ-ত্রয়ী গড়ে উঠবে লুইস সুয়ারেজ, জোয়াও ফেলিক্স ও দিয়েগো কস্তাকে নিয়ে।’

২০১৪ সালে লিভারপুল থেকে ক্যাম্প ন্যু-তে যাওয়ার পর থেকে ২৮৩ ম্যাচে ১৯৮ গোল করে বার্সেলোনার কিংবদন্তিদের একজন বনে গেছেন সুয়ারেজ। লিওনেল মেসি ও নেইমারের সঙ্গে মিলে তৈরি করেছিলেন ভয়ংকর ত্রিফলা ‘এমএসএন।’

২০১৭ সালে নেইমার পিএসজিতে যাওয়ায় সেই ত্রিফলা ভেঙে গেছে আগেই। মেসি ত্রিশ পেরিয়ে আগের চেয়েও বেশি ভয়ংকর হয়ে উঠলেও ধার হারিয়ে ফেলেছিলেন সুয়ারেজ। আগের মতো প্রথম স্পর্শেই ডিফেন্ডারদের ছিটকে ফেলতে পারেন না, অনেক বেশি গোলের সুযোগ হাতছাড়া করেন। এখন আর মাঠে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়তে পারেন না। গত মৌসুমে বড় একটা অংশ সময় তো মাঠের বাইরেই ছিলেন। তাই বার্সেলোনার নতুন কোচ রোনাল্ড কোমান দায়িত্ব নিয়েই ক্লাব থেকে বের হয়ে যাওয়ার দরজা দেখিয়ে দিয়েছেন তাঁকে।

আর সে সুযোগটা দু’হাত ভরে নিয়েছে আতলেতিকো। দেখা যাক, বার্সেলোনার ফেলে দেওয়া রত্ন কুড়িয়ে আতলেতিকো ফোরলানের স্বপ্ন পূরণ করতে পারে কি না!