দেড় দশকের সম্পর্কের ইতি, ছাঁটাই হলেন সুয়ারেজদের গুরু

উরুগুয়ের কোচ পদ এতদিন সামলেছেন অস্কার তাবারেজছবি: এএফপি

উরুগুয়ে জাতীয় দল আর অস্কার তাবারেজ—দুটো নাম যেন সমার্থক হয়ে গিয়েছিল। হবে না-ই বা কেন? সেই যে ২০০৬ সালের মার্চে উরুগুয়ের দায়িত্ব নিয়েছিলেন, এরপর আর অন্য কোনো স্থায়ী ম্যানেজারের অধীন খেলতে হয়নি সুয়ারেজ-কাভানিদের।

সে ধারার ইতিও ঘটে গেল গত রাতে। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে দলের বাজে ফর্মের খেসারত দিয়ে চাকরি হারিয়েছেন এই বর্ষীয়ান কোচ। ১৫ বছর ধরে চলতে থাকা একটা অধ্যায়ও শেষ হয়ে গেল এর সঙ্গে।

প্রক্রিয়া, বা স্প্যানিশ ভাষায় ‘দ্য প্রসেসো’—তাবারেজের কোচিং ক্যারিয়ারের একটা গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে ছিল। ২০০৬ সালের বিশ্বকাপে সুযোগ না পাওয়া উরুগুয়ের দায়িত্ব যখন সাবেক বোকা জুনিয়র, কালিয়ারি ও এসি মিলানের এই ম্যানেজারের হাতে তুলে দেওয়া হয়, শুধু মূল একাদশের ১১ জনই নয়, বরং বয়সভিত্তিক দলগুলো থেকে শুরু করে মূল স্কোয়াড সবকিছুর জন্য একটা নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া বা সংস্কৃতি চালু করেছিলেন তাবারেজ।

যে প্রক্রিয়ার ওপর ভর করেই ২০১০ বিশ্বকাপে তৃতীয় হয় উরুগুয়ে, জেতে পরের বছর আয়োজিত হওয়া কোপা আমেরিকা। কিন্তু বর্তমান যুগে সে প্রক্রিয়া যে বড্ড সেকেলে ঠেকছে! না হয় বাছাইপর্বে উরুগুয়ের এমন বেহাল দশা হবে কেন?

দলে আছেন লুইস সুয়ারেজ, এদিনসন কাভানি, দিয়েগো গদিন, নাহিতান নান্দেজ, রদ্রিগো বেনতাঙ্কুর, লুকাস তোরেইরা, হোসে হিমেনেজের মতো অভিজ্ঞ খেলোয়াড়েরা। সঙ্গে রোনালদ আরাউহো, দারউইন নিউনেজদের প্রতিভা তো আছেই।

এমন দল হেসেখেলে যেকোনো বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে অংশ নেবে, এমনটা মনে করাই স্বাভাবিক। কিন্তু তেমনটা হচ্ছে না। দুদিন আগেই বলিভিয়ার মতো খর্বশক্তির দলের কাছে ৩-০ গোলে হেরেছেন সুয়ারেজরা। এ নিয়ে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে টানা চার ম্যাচ হারল উরুগুয়ে।

নিজেদের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো বাছাইপর্বে টানা চার ম্যাচ হার—ফলে কাতার বিশ্বকাপে আদৌ সুয়ারেজদের খেলা হবে কি না, তা নিয়ে দেখা যাচ্ছে ঘোরতর সংশয়। লাতিন অঞ্চলের বাছাইপর্বের সেরা চার দল সরাসরি খেলবে বিশ্বকাপ। পঞ্চম দল খেলবে প্লে-অফ। পয়েন্ট তালিকার বর্তমান অবস্থা অনুযায়ী উরুগুয়ে প্লে-অফেও সুযোগ পাবে না। ১৪ ম্যাচ খেলার পর মাত্র ১৬ পয়েন্ট নিয়ে ৭ নম্বরে আছে দলটি।

সুয়ারেজ, কাভানিরা থাকার পরও গোল করতে খাবি খাচ্ছে উরুগুয়ে। ১৪ ম্যাচ খেলে মাত্র ১৪ গোল করেছে তারা, হজম করেছে আরও সাত গোল বেশি। দলে এহেন অবস্থার জের ধরে বেশ কয়েক দিন ধরেই তাবারেজকে যেন ছাঁটাই করা হয়, সেই শোরগোল উঠেছিল। সেটাই হলো।

তবে যাওয়ার বেলায় বেশ কিছু রেকর্ড নিজের করে যাচ্ছেন তাবারেজ। লাতিন আমেরিকার বাছাইপর্বে তাঁর চেয়ে বেশি ম্যাচ (৭৪) কোচিং করাননি আর কেউ, তাঁর চেয়ে আর কেউ বেশি ম্যাচ জেতেননি (৩১)।

এর আগে ১৯৮৮ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত উরুগুয়ের দায়িত্বে ছিলেন এই ৭৪ বছর বয়সী। পরে ইউরোপের বিভিন্ন দলে কোচিং করিয়ে আবারও ২০০৬ সালে ফিরে আসেন দেশের টানে।

আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে উরুগুয়ের ফেডারেশন জানিয়েছে, ‘বর্তমান পরিস্থিতি, ভবিষ্যৎ ও আগামী ইতিবাচক ফলাফলের জন্য সিদ্ধান্তটা নেওয়া, যা আমাদের জন্য বেশ কঠিন ছিল। তাবারেজের পেশাদারিত্ব ও আনুগত্যের জন্য আমরা তাঁকে সম্মান জানাই।’