ধর্মের কারণে অবসর নেওয়ার খবরকে মিথ্যা বললেন পগবা

ফ্রান্স জাতীয় দল থেকে অবসর নেননি পগবা।ফাইল ছবি রয়টার্স

আজ সকাল থেকেই ছড়িয়ে পড়ে ফ্রান্স জাতীয় দল থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন পল পগবা। ফ্রান্সে চলমান অস্থিরতার মাঝে প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁর একটি মন্তব্যে সে দেশের মুসলমানদের মধ্যে অসন্তুষ্টি ছড়িয়েছে। পগবা নিজেও পারিবারিকভাবে ইসলাম ধর্মে অনুসারী। ইসলাম ধর্মকে জড়িয়ে সন্ত্রাসবাদের কথা বলাতেই নাকি প্রতিবাদ হিসেবে এমন সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন ফ্রান্স দলের মিডফিল্ডের প্রাণ।

ইংল্যান্ডের পত্রিকা দ্য সান এ খবর প্রকাশ করার পর দাবানলের মতো সেটা ছড়িয়ে পড়ে। মধ্যপ্রাচ্যের কিছু গণমাধ্যমেও এই খবরটি প্রকাশ করা হয়। কিন্তু আজ বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পগবা জানিয়েছেন খবরটি একেবারেই মিথ্যা এবং এই খবরটির জন্য তিনি খুবই হতাশ। সকল ধরনের জঙ্গিবাদ ও সহিংসতার বিরোধী পগবা এমন ভিত্তিহীন খবরে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

ফ্রান্সে এক শিক্ষককে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় কিছুদিন আগে। এরপর থেকেই দেশটিতে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়েছে। দেশটির দ্বিতীয় প্রধান ধর্ম ইসলাম। বিপথগামী এক মুসলিম শরণার্থীর কারণে এ ঘটনা ঘটায় ইসলামি জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ডাক দিয়েছেন মাখোঁ। এভাবে সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে ইসলামকে জড়ানোয় দেশটির ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা শঙ্কিত হয়ে উঠেছেন। মাখোঁর সমালোচনা চলছে মুসলমানদের মাঝে। বিশ্বের মুসলিম প্রধান অঞ্চলেও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে যেন বারুদ জুগিয়েছিল পগবার ফ্রান্স দল থেকে সরে যাওয়ার খবর।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে আলোড়ন পড়ে যাওয়ার পরও কিছু জানাননি পগবা। কিন্তু পরিস্থিতি এভাবে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার পর আর চুপ থাকতে পারলেন না। সানের সেই খবরের ছবির ওপর বড় করে লিখেছেন, ‘অগ্রহণযোগ্য মিথ্যে খবর।’ তারপর সে ছবি তাঁর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অ্যাকাউন্টগুলোতে পোস্ত করেছেন।

এরপরই মিথ্যা খবর ছড়ানোর জন্য সানকে ধুয়ে দিয়েছেন পগবা। বড় এক পোস্টে লিখেছেন, ‘সান আবারও করল(গুজব ছড়াল)... আমার সম্পর্কে একেবারেই শতভাগ ভিত্তিহীন খবর ঘুরে বেড়াচ্ছে। যা আমি কখনে বলিনি বা ভাবিনি। ফ্রান্সের বর্তমান স্পর্শকাতর বিষয়ের সঙ্গে আমার ধর্ম ও জাতীয় দলকে যুক্ত করে সম্পূর্ণ মিথ্যা শিরোনাম প্রকাশ করায় আমি আতঙ্কিত, রাগান্বিত ও হতাশ।’

২০১৩ সালে ফ্রান্স দলে অভিষেক হয়েছে পগবার। দুটি বিশ্বকাপ খেলেছেন, জিতেছেন ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপ। জাতীয় দলের হয়ে ৭২ ম্যাচে ১০ গোল আছে এই মিডফিল্ডারের। বর্তমান পরিস্থিতি একজন মুসলমান হিসেবে শান্তি ও সম্মানের বার্তা দিয়েছেন পগবা। বলেছেন সব ধরনের সহিংসতা ও জঙ্গিবাদের বিরোধী তিনি, ‘আমি যে কোনো ধরনের জঙ্গিবাদ ও সহিংসতার বিরুদ্ধে। আমার ধর্ম শান্তি ও ভালোবাসার কথা বলে এবং সবার সম্মানের। দুঃখজনক যে কিছু সংবাদমাধ্যম দায়িত্বজ্ঞান হারিয়ে সংবাদ করে, নিজেদের ক্ষমতার অপব্যবহার করে কী লিখছে বা দিচ্ছে সেটা সত্যি কি না সেটা দেখছে না। এর ফলে যে গুজবের সৃষ্টি হচ্ছে তা যে সাধারণ মানুষ ও আমার জীবনে কী প্রভাব ফেলছে তা নিয়ে কোনো চিন্তা করছে না।’

সকল সহিংসতা ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান পগবার।
ফাইল ছবি রয়টার্স

সানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন পগবা। তাঁর দীর্ঘ বার্তায় এই মিডফিল্ডার বলেছেন, ‘আমি সম্পূর্ণ মিথ্যা এই খবর যারা ছেপেছে এবং ছড়িয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেব। সানের উদ্দেশ্যেও বলি, আপনারা তো কখনো এসব নিয়ে মাথা ঘামানও না। তবু আপনাদের মধ্যে কয়েকজন হলেও নিশ্চয় বিদ্যালয়ে পড়েছেন এবং নিশ্চয় মনে আছে আপনাদের শিক্ষক বলেছে সব সময় সূত্র পরখ করে দেখতে। অবিশ্বাস্য কিছু না লিখতে। কিন্তু আপনারা আবারও এমন কিছু করলেন এবং খুবই গুরুতর এক বিষয়ে। লজ্জা হওয়া উচিত আপনাদের!’