ধাক্কাধাক্কি, গালাগালি, লাল কার্ড ও দর্শক লাঞ্ছনার ম্যাচ

পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেছেন পুলিশ সদস্যরা।ছবি: প্রথম আলো

ঢাকার ফুটবলে যেন সোনালি অতীতের ছায়া! আশি-নব্বইয়ের দশকের মতো ডাগআউটে দুই কর্মকর্তার ধাক্কাধাক্কি। এরপর লাল কার্ড দেখিয়ে মাঠ থেকে দুই দলের দুই কর্মকর্তাকে বহিষ্কার করলেন রেফারি। এর একটু পরই গ্যালারিতে সাধারণ দর্শক লাঞ্ছিত।

মোহামেডানের সমর্থকদের হাত থেকে সাধারণ দর্শককে পুলিশ উদ্ধার করলে তবেই রক্ষা। ফুটবল ছাপিয়ে মাঠের বাইরে এমন উত্তেজনা দেখা গেল আজ সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে। চট্টগ্রাম আবাহনীর বিপক্ষে মোহামেডানের ম্যাচটি শেষ হয়েছে ১-১ গোলে। কিন্তু মাঠের ফুটবলের চেয়ে স্টেডিয়ামজুড়ে রইল বাইরের এই উত্তেজনার রেশ।    

আরমানকে লাল কার্ড দেখাচ্ছেন রেফারি।
ছবি: প্রথম আলো

ঘটনার সূত্রপাত ম্যাচের ৬২ মিনিটে। মোহামেডানের ডিফেন্ডার আতিকুজ্জামান থ্রো–ইনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু আতিকুজ্জামানের একেবারে সামনে এসে থ্রো–ইন আটকানোর চেষ্টা করেন চট্টগ্রাম আবাহনীর রাকিব হোসেন। আতিকুজ্জামান বলটা রাকিবের গায়ে মারলে রেফারি ভুবন মোহন তরফদার ফাউলের বাঁশি বাজান মোহামেডানের বিপক্ষে। কিন্তু মোহামেডান কোচ শন লেন রেফারির কাছে এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানান।

ওই সময় চট্টগ্রাম আবাহনীর ম্যানেজার আরমান আজিজ শন লেনের দিকে এগিয়ে কিছু একটা বলতে গিয়েছিলেন। কিন্তু ডাগআউট থেকে দৌড়ে এসে আরমান আজিজকে দৃষ্টিকটুভাবে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দেন মোহামেডানের দলনেতা আবু হাসান চৌধুরী। এরপর দুজনই দুজনের দিকে তেড়ে আসেন। কিন্তু দুই দলের অন্যান্য কর্মকর্তা ও পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। আবু হাসান চৌধুরী শারীরিকভাবে লাঞ্ছনা করলেও রেফারি অবশ্য দুজনকে লাল কার্ড দেখিয়ে মাঠ থেকে বের করে দেন।

ডাগ আউটে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
ছবি: প্রথম আলো

অবশ্য আবু হাসান চৌধুরীর দাবি, আরমান আজিজ শন লেনকে গালি দিয়েছেন। এ জন্যই তিনি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি, ‘‌আরমান আজিজ আমাদের কোচকে অকথ্য ভাষায় গালি দিয়েছি। আমি এসে ওকে কোচের সামনে থেকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়েছি।’

ম্যাচের এই উত্তেজনা এরপর ছড়িয়ে পড়ে গ্যালারিতেও। পশ্চিম গ্যালারিতে এক দর্শক মোহামেডানের পতাকা ছিঁড়ে ফেলেছেন, এই অভিযোগে তাঁকে ঘিরে ধরে বেশ কয়েকজন সাদা-কালো সমর্থক। ওই দর্শককে মারতে মারতে গ্যালারির কাঁটাতারের নিরাপত্তা ঘেরের দিকে টেনে আনেন মোহামেডান সমর্থকেরা। শেষ পর্যন্ত পুলিশ এসে তাঁকে উদ্ধার করে গ্যালারি থেকে নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে যায়।

আক্রমণ প্রতিআক্রমণে ম্যাচটা ছিল উপভোগ্য।
ছবি: প্রথম আলো

মাঠের বাইরের মতো মাঠেও ছিল উত্তেজনা। আক্রমণ ও প্রতি–আক্রমণে উপভোগ্য ছিল ম্যাচ।

১৫ মিনিটে রাকিব হোসেনের গোলে প্রথমে এগিয়ে যায় চট্টগ্রাম আবাহনী। বক্সের মধ্যে থেকে ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড নিক্সন গিয়াহামের জোরালো শট প্রথমে মোহামেডান গোলরক্ষক সুজন হোসেনের হাত ফসকে বেরিয়ে যায়। ফিরতি শটে সুযোগসন্ধানী রাকিব আলতো টোকায় করেন ১-০। লিগে এটা রাকিবের তৃতীয় গোল।

গোল শোধে মরিয়া মোহামেডানকে ৫৪ মিনিটে সমতায় ফেরান রাকিব খান। বক্সের বাইরে থেকে স্ট্রাইকার সোলেমান দিয়াবাতের সঙ্গে বল দেওয়া–নেওয়া করে বক্সে ঢোকার চেষ্টা করেন রাকিব। এরপর দুই ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে ঠান্ডা মাথায় প্লেসিংয়ে করেন ১-১। বাকি অবশ্য দুই দল চেষ্টা করেও আর গোল পায়নি।

টানা তিন জয়ের পর আজ আবারও ড্র করেছে মোহামেডান। ১০ ম্যাচে ৪ জয়, ৪ ড্র ও ২ হারে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে পাঁচে মোহামেডান। ১১ ম্যাচে ৪ জয়, ৪ ড্র ও ৩ হারে সমান ১৬ পয়েন্ট নিয়ে ছয়ে চট্টগ্রাম আবাহনী।