নতুন বছরে যা চাইবে বড় ক্লাবগুলো

এসেছে ২০২১। ২০২০ সালের সব গ্লানি ঘুচিয়ে এই বছরটা আনবে সাফল্য, এমনটাই চাওয়া প্রতিটি ক্লাবের। সেই সাফল্যটা কেমন হতে পারে? একেক ক্লাবের দৃষ্টিভঙ্গিতে সেই সাফল্যের সংজ্ঞা একেক রকম। দেখে নেওয়া যাক কেমন হতে পারে সেই সংজ্ঞাগুলো!

বার্সেলোনা

নতুন বছরে বার্সেলোনায় চাওয়া হবে এক এবং একটাই। লিওনেল মেসি যেন ক্লাবটার সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করেন। আর মাত্র ছয় মাস বাকি আছে মেসির চুক্তিতে। আগামী জুনে শেষ হতে চলেছে বার্সেলোনার সঙ্গে মেসির চুক্তি। এই ছয় মাস পর মেসি যদি আসলেই বার্সেলোনা ছাড়তে চান, তাহলে আগামী জুনে নতুন কোন ক্লাবে যোগ দেবেন, সেই আগ্রহী ক্লাবের সঙ্গে চাইলে এখনই আলোচনা করা শুরু করে দিতে পারেন মেসি। বার্সেলোনা বাধা দিতে পারবে না। তবে বার্সেলোনা অবশ্যই চাইবে, অমন আলোচনা যেন কখনোই না হয়। মেসি যেন তাঁর প্রিয় ক্লাবেই কাটাতে পারেন বাকি ক্যারিয়ারটা।

বার্সেলোনা কি পারবে মেসিকে ধরে রাখতে?
ছবি: রয়টার্স

রিয়াল মাদ্রিদ

ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো যাওয়ার পর তাঁর অভাব ঠিক কতটা পূরণ করতে পেরেছে রিয়াল? গতবার লিগ জিতলেও সান্তিয়াগো বার্নাব্যুর কোনায় কোনায় এখনো এই প্রশ্নের গুঞ্জরণ শোনাই যায়। রোনালদোর জায়গায় এদেন হ্যাজার্ড নামের আরেকজন তারকা আনা হলেও তাঁকে দিয়ে রোনালদোর অভাব পূরণ করা গেছে সামান্যই। চোট-বাধা পেরিয়ে বেলজিয়ান এই উইঙ্গার আদৌ আগের ফর্ম ফেরত পাবেন কি না, কেউ জানে না। এদেন হ্যাজার্ড প্রত্যাশিত ফর্মে ফিরুক বা না ফিরুক, বহুদিন ধরেই বার্নাব্যুর আগামীর মহাতারকা হিসেবে কিলিয়ান এমবাপ্পেকে পাখির চোখ করে রেখেছে রিয়াল। পিএসজির এই তারকাকে দলে ভেড়ানোটাই হবে স্প্যানিশ চ্যাম্পিয়নদের সবচেয়ে বড় লক্ষ্য এই বছরে। রিয়াল কী পারবে?

কিলিয়ান এমবাপ্পেতে পাখির চোখ রিয়ালের।
ছবি: রয়টার্স

আতলেতিকো মাদ্রিদ

রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনা—লিগের সবচেয়ে বড় দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর ফর্ম এবার আগের মতো নয়। আর এই সুযোগটাই নিতে চাইবে আতলেতিকো। দলে নতুন আসা লুইস সুয়ারেজ এই মৌসুমে হয়তো পর্তুগিজ তরুণ জোয়াও ফেলিক্সকে পরিণত করবেন বড় কোনো তারকায়, যিনি গত মৌসুমে দলে এলেও সেভাবে এখনো আলো ছড়াতে পারেননি। সঙ্গে কোকে, সল নিগেজ কিংবা ইয়ান ওবলাকদের সঙ্গী করে রিয়াল-বার্সায় লিগে আধিপত্য আরেকবারের মতো থামাবে আতলেতিকো—এমনটাই আশা দলটার সমর্থকদের। নতুন বছরে তাই মাদ্রিদের ‘ছোট’ দলটার আশা এই একটাই।

লা লিগায় আধিপত্যটা ধরে রাখতে চায় আতলেতিকো।
ছবি: রয়টার্স

লিভারপুল

গত মৌসুমেই ক্রীড়াসামগ্রী নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ‘নিউ ব্যালেন্স’–এর সঙ্গে চুক্তি শেষ করে বিশ্বের সবচেয়ে খ্যাতনামা ক্রীড়াসামাগ্রী নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের অন্যতম ‘নাইকি’র সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছে লিভারপুল। বেরসিকের মতো করোনা হানা না দিলে, আর আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি না হলে হয়তো মোহাম্মদ সালাহ, সাদিও মানে, রবার্তো ফিরমিনোরা আক্রমণভাগে আরেকজন বড় তারকাকে পেতেন সঙ্গী হিসেবে, নাইকির সাহায্যে।

সাফল্য ধরে রাখাই লক্ষ্য বায়ার্নের।
ছবি: রয়টার্স

নাইকিও চাইছে তাঁদের পৃষ্ঠপোষকতার ছায়াতলে আসা নতুন এই ক্লাবটায় এমন একজন বড় তারকা আসুন, যে ব্যক্তিগতভাবেও নাইকির একজন দূত। সে হিসাবে পিএসজির কিলিয়ান এমবাপ্পে, বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের জেডন সানচো কিংবা আর্লিং হরলান্ডের লিভারপুলে আসার সম্ভাবনাটা ঠিক উড়িয়ে দেওয়া যায় না। অবিশ্বাস্য এই স্বপ্নপূরণের আশাতেই এই বছরটা কাটাবেন হয়তো লিভারপুল সমর্থকেরা, সঙ্গে ৩০ বছর পর জেতা লিগটা ধরে রেখে নিজেদের আধিপত্য পাকাপাকি করার ব্যাপারটা তো থাকবেই।

নাইকির বড় এক দূতকে দলে ভেড়াতে চাচ্ছে লিভারপুল।
ছবি: রয়টার্স

ম্যানচেস্টার সিটি ও পিএসজি

একটা চ্যাম্পিয়নস লিগ। আর কিচ্ছু নয়। বিরাট বড়লোক মালিকের অধীনে থাকা এই দুই ক্লব ঘরোয়া লিগে নিজেদের আধিপত্য কায়েম করতে পারলেও ইউরোপীয় প্রতিযোগিতায় এখনো কিছুই করতে পারেনি। নতুন বছরে সেই অপ্রাপ্তি ঘোচানোর অপেক্ষায় থাকবে ক্লাব দুটি।

চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ই লক্ষ্য সিটির।
ছবি: রয়টার্স

চেলসি, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও আর্সেনাল

তিনটা ক্লাবেরই মিল এক জায়গায়। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের পরাশক্তি এই তিন ক্লাবই বর্তমানে কোচ হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছে এমন তিনজনকে, যাঁরা আগে ক্লাবটায় খেলে গেছেন, পেয়েছেন কিংবদন্তির তকমা।

সিরি ‘আ’তে জুভেন্টাসের আধিপত্যে ভাগ বসাতে চায় ইন্টার।
ছবি: রয়টার্স

কিন্তু কোচ হিসেবে ওই তিনজনকে কিংবদন্তির তকমা পেতে পাড়ি দিতে হবে বহু বহুদূর। চেলসির ফ্র্যাঙ্ক ল্যাম্পার্ড, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ওলে গুনার সুলশার কিংবা আর্সেনালের মিকেল আরতেতার অধীনে ক্লাবগুলোর তাই একমাত্র চাওয়া হবে, নতুন বছরে সেই বিরাট পথের অনেকটুকুই যেন পাড়ি দিয়ে ফেলেন নিজেদের কোচ!

পিএসজির অপ্রাপ্তি তো চ্যাম্পিয়নস লিগই।
ছবি: রয়টার্স

টটেনহাম হটস্পার

বহু বছর ধরেই প্রিমিয়ার লিগের অন্যতম শক্তি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে টটেনহাম। সাবেক কোচ মরিসিও পচেত্তিনোর অধীনে দলে উন্নতির ছাপটা স্পষ্ট হলেও ট্রফির ভাঁড়ারটা শূন্যই থেকেছে। ট্রফির খোঁজে তাই পোড় খাওয়া ম্যানেজার জোসে মরিনিওকে নিয়োগ দিয়েছে ক্লাবটা এর মধ্যেই। নতুন বছরে টটেনহামের চাওয়া হবে ক্রমাগত বিজয়ী এই কোচ যেন তাদেরও দু-একটা ট্রফি জেতাতে সাহায্য করেন!

একটি শিরোপা জিততে চায় টটেনহাম।
ছবি: রয়টার্স

জুভেন্টাস

যে আশায় ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর মতো মহাতারকাকে দলে এনেছিল জুভেন্টাস, সে আশাটা পূরণ হয়নি একদম। আর সেটা হলো একটা চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়। নতুন বছরেও আন্দ্রেয়া পিরলোর দলের মূল লক্ষ্য থাকবে ওটাই। ঘরোয়া লিগের শিরোপা তো অনেক হলো, রোনালদোর মতো একজনকে দলে নিয়েও যদি ইউরোপীয় প্রতিযোগিতায় বারবার শূন্য হাতে ফিরতে হয়, তাহলে কেমন দেখায়?

ইংলিশ ফুটবলে নিজেদের আভিজাত্য ফেরাতে চায় চেলসি।
ছবি: রয়টার্স

বায়ার্ন মিউনিখ

২০২০ সালটা দুহাত ভরে দিয়েছে বায়ার্নকে। জিতেছে ট্রেবল, সম্প্রতি অন্যতম সেরা দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে নিজেদের। নতুন বছরে বায়ার্নের লক্ষ্য থাকবে অর্জিত এই সাফল্যটাকেই ধারাবাহিক বানানো।

সব সাফল্যই এসেছে। এবার জুভেন্টাসের চাই চ্যাম্পিয়নস লিগ।
ছবি: রয়টার্স

এসি মিলান

দশ বছর ধরে লিগ জেতে না এসি মিলান। সাতবারের চ্যাম্পিয়নস লিগজয়ীদের কাছে ইউরোপীয় সাফল্যও এখন সোনার হরিণ। নতুন কোচ স্তেফানো পিওলির অধীনে গত মৌসুম থেকেই উন্নতির ছাপটা দেখা যাচ্ছে এসি মিলানের খেলায়। চলতি লিগে এখন পর্যন্ত শীর্ষে আছে ক্লাবটা। নতুন বছরে মিলানের আশা থাকবে তাই এই শীর্ষস্থান যেন একদম মৌসুমের শেষ পর্যন্ত থাকে!

ইতালীয় ফুটবলে আবার ‘অভিজাত’ হওয়াই লক্ষ্য এসি মিলানের।
ছবি: রয়টার্স

ইন্টার মিলান

জুভেন্টাসের কাছ থেকে লিগ মুকুট কেড়ে নেওয়ার জন্য বহু বছর ধরেই চেষ্টা করে যাচ্ছে ইন্টার। জুভেন্টাসের সাবেক প্রধান নির্বাহী জিউসেপ্পে মারোত্তা ও সাবেক কোচ আন্তোনিও কন্তেকে নিয়োগ দেওয়া থেকে শুরু করে মালিকানা বদল, ভিদাল, লুকাকু, লাওতারো, এরিকসেনের মতো বড় তারকাকে দলে আনা—কোনো খামতি রাখছে না দলটা। নতুন বছরে ইন্টারের লক্ষ্য তাই থাকবে যেকোনো মূল্যে লিগ শিরোপা জয়। আর কিচ্ছু নয়।