নিজের স্বার্থে বার্সেলোনাকে ব্যবহার করেছেন বার্তোমেউ

কাতালান পুলিশ তদন্ত করছে বার্তোমেউয়ের বিরুদ্ধেছবি: এএফপি

বার্সেলোনার স্লোগান 'মোর দ্যান আ ক্লাব'। অর্থাৎ, ক্লাবের চেয়েও বড় কিছু। কিন্তু স্প্যানিশ ক্লাবটার সভাপতি জোসেপ মারিয়া বার্তোমেউ যেভাবে একের পর এক সমালোচনার তিরে বিদ্ধ হচ্ছেন, ও যেভাবে ক্লাবের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছেন, তাতে বার্সার স্লোগানটা নিয়ে প্রশ্ন উঠেই যায়।

একে তো ক্লাবের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় তারকা লিওনেল মেসির ভবিষ্যৎ নিয়ে এখনো কানাঘুষা চলছে। স্পষ্টভাবেই মেসি ক্লাবকে জানিয়ে দিয়েছেন, বার্সেলোনায় থাকতে চান না তিনি। এবং এর পেছনে মূল দায় যে এই বার্তোমেউরই, এটা মোটামুটি সবাই-ই স্বীকার করবেন। এর ওপর এখন আবার আরেক বিতর্ক সৃষ্টি করলেন এই ভদ্রলোক। এবার খোদ কাতালান পুলিশ বিভাগই (লস মোজোস দে এসকাদ্রা) বার্তোমেউর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে। তাঁরা বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট অভিযোগের সমন্বয়ে একটা রিপোর্ট বানিয়ে বার্সেলোনা কোর্টে প্রেরণ করেছে। যে রিপোর্টে উল্লিখিত আছে, নিজের স্বার্থের জন্য বার্সেলোনার নাম ব্যবহার করেছেন বার্তোমেউ। ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্যে সম্ভাব্য ফৌজদারি অপরাধ করেছেন বার্তোমেউ, বার্সেলোনার সঙ্গে আইথ্রি ভেঞ্চার্সের চুক্তিপত্রে এমন প্রমাণ পেয়েছে বলে জানিয়েছে কাতালান পুলিশ বিভাগ। খবর দিয়েছে স্প্যানিশ দৈনিক এল মুন্দো।

আইথ্রির সৃষ্টি করা অ্যাকাউন্টগুলো মেসির বিরুদ্ধে চুক্তি নবায়ন না করার গুঞ্জন সৃষ্টি করত
ছবি: রয়টার্স

পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে, ক্লাবের অভ্যন্তরীণ নীতিকে তোয়াক্কা না করে বাজারমূল্যের চেয়ে ৬০০ শতাংশ বেশি অর্থ দিয়ে জনসংযোগ প্রতিষ্ঠান আইথ্রি ভেঞ্চার্সকে ভাড়া করেছিলেন বার্তোমেউ। কিছুদিন আগে কাতালান সংবাদমাধ্যম কে থি জোগাস এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল, আইথ্রি নামের সেই প্রতিষ্ঠানের কাজ ছিল বার্সা সভাপতি হোসে মারিয়া বার্তোমেউর ভাবমূর্তি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উজ্জ্বল করা। আর সে সঙ্গে যেসব বর্তমান ও সাবেক খেলোয়াড়ের সঙ্গে বার্তোমেউর বনে না, তাদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটাতো এই প্রতিষ্ঠান। কে থি জোগাসের দাবি, ওই প্রতিষ্ঠান এক শর কাছাকাছি টুইটার ও ফেসবুক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ক্লাব কিংবদন্তি মেসি, জাভি, জেরার্ড পিকে, পেপ গার্দিওলা, কার্লেস পুয়োলদের আক্রমণ করত। সাবেক সভাপতি হুয়ান লাপোর্তা ও কাতালান স্বাধীনতাকামী রাজনীতিবিদ কার্লেস পুইচডিমন্তের বিপক্ষেও নেমেছিল আইথ্রি।

পরে এই কথা ফাঁস হয়ে গেলে বোর্ড থেকে ক্লাবের অন্যতম পরিচালক জওমে মাসফেরারকে ছাঁটাই করেন বার্তোমেউ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বার্সেলোনার ইতিবাচক উপস্থিতি নিশ্চিত করা যার দায়িত্ব ছিল। পরে যদিও মাসফেরারকে আবারও ফেরান বার্তোমেউ।

আইথ্রির সৃষ্টি করা অ্যাকাউন্টগুলো মেসির বিরুদ্ধে চুক্তি নবায়ন না করার গুঞ্জন সৃষ্টি করত। পিকের সব ব্যবসায়িক বিষয়াদি নিয়েও আলোচনা করত এরা। ২০১৭ সালে শুরু হয় প্রোপাগান্ডা। একের পর এক মন্তব্য করে ও বিভিন্ন নেতিবাচক আলোচনা করে মেসিদের আক্রমণ করা হতো। এর একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল বার্তেমেউর ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করা ও তাঁর সভাপতিত্ব নিশ্চিত করা।

বার্তোমেউয়ের ওপর ক্ষোভ মেসিরও।
ছবি: রয়টার্স

বার্সেলোনা স্বীকার করেছে, আইথ্রিকে তারা আসলেই নিয়োগ দিয়েছিল এবং এর বিনিময়ে ১০ লাখ ইউরোও পেয়েছে সে প্রতিষ্ঠান। কিছুদিন আগে মানি লন্ডারিং বিভাগের পুলিশ ক্যাম্প ন্যু-তে এসে এই বিষয়ক কাগজপত্র খুঁজেছে। আইথ্রির সঙ্গে চুক্তিপত্র, টাকা লেনদেন এবং ক্লাবের এসব বিষয়ের ওপর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তথ্য-প্রমাণ খুঁজেছে পুলিশ। বার্সার প্রশাসনিক অপরাধ নিয়ে তদন্ত করছে তারা। বাজার মূল্যের চেয়ে বেশি অর্থ প্রদান এবং বোর্ডের কিছু সদস্যও অর্থের ভাগ পেয়েছেন বলে মনে করছে পুলিশ।

সে সংক্রান্ত প্রমাণই পুলিশের হাতে গিয়েছে মনে করা হচ্ছে। মুন্দোর দেওয়া তথ্যমতে, কাতালান পুলিশ বিভাগ এর মধ্যেই বার্সেলোনার কাছ থেকে জবাবদিহি চেয়েছে। ক্লাবের পক্ষ থেকে কোনো মুখপাত্র জবাবদিহি করলেই আনুষ্ঠানিক বিচার বসবে ব্যাপারটা নিয়ে।