নিশ্চিত হয়ে গেছে নয়্যার-লেভানডফস্কিদের পরবর্তী কোচ?

নতুন কোচের অপেক্ষা শুরু হচ্ছে বায়ার্নে?ছবি: রয়টার্স

বায়ার্নের মিউনিখের ইতিহাসে গত দেড় বছরের সময়টা স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। আর থাকবে নাই–বা কেন? বায়ার্ন নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ‘সেক্সটাপল’ (সম্ভাব্য ছয় ট্রফির প্রতিটি) জিতেছিল। সে সাফল্যের কারিগর ছিলেন হান্সি ফ্লিক।

গত রাতে সফল এই কোচ জানিয়ে দিয়েছেন, বায়ার্নে আর নয়। মৌসুম শেষে বায়ার্ন ছাড়তে চাইছেন। ফ্লিক যাওয়ার পর বায়ার্নের দায়িত্বে কে আসবেন? কে হবেন ম্যানুয়েল নয়্যার-রবার্ট লেফানডস্কিদের নতুন গুরু? বাজারে ভাসছে ইউলিয়ান নাগলসমানের নাম।

৩৩ বছর বয়সী এই কোচ কয়েক বছর ধরেই ইউরোপে সুনাম কুড়াচ্ছেন। আছেন জার্মান ক্লাব আরবি লাইপজিগের দায়িত্বে। এই লাইপজিগকেই গত মৌসুমে তুলেছিলেন চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে, সেই সঙ্গে তিনি নিজে সর্বকনিষ্ঠ কোচ হিসেবে চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিতে ওঠার কৃতিত্ব নিজের করে নিয়েছিলেন।

চেলসি, রিয়াল মাদ্রিদ, বায়ার্ন মিউনিখ, বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের মতো ক্লাবগুলো বহুদিন ধরেই তাঁর পেছনে লেগে আছে। শেষমেশ কপাল খুলতে চলেছে বায়ার্নের। অন্তত এমনটাই মনে করছেন জার্মানি ও বায়ার্নের কিংবদন্তি সাবেক মিডফিল্ডার লোথার ম্যাথাউস।

নিজের ইচ্ছা জানিয়ে দিয়েছেন ফ্লিক।
ছবি: রয়টার্স

স্কাই জার্মানিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ম্যাথাউস জানিয়েছেন, নিজেদের পরবর্তী কোচ করার ব্যাপারে নাগলসমানকে নিয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছে বায়ার্ন, ‘মিউনিখ এর মধ্যেই নাগলসমানের সঙ্গে কথা বলে রেখেছে। টাকাপয়সা, বেতনাদির ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছেছে।’

বায়ার্নের বর্তমান কোচ হান্সি ফ্লিকের সঙ্গে ক্লাবের কর্তাব্যক্তিদের সম্পর্ক যে তেমন ভালো নয়, এটা এখন ‘ওপেন সিক্রেট’। বিশেষ করে ক্লাবের ক্রীড়া পরিচালক হাসান সালহামিদজিচের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক একদম দা-কুমড়ো পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে।

মৌসুমের শুরুতে ফ্লিক সের্হিনিও দেস্ত, ইভান পেরিসিচ, এদুয়ার্দো কামাভিঙ্গাদের মতো খেলোয়াড়দের চাইলেও বায়ার্ন ম্যানেজমেন্ট তা পাত্তা দেয়নি। দলে এনেছে অপেক্ষাকৃত কম দামি বুনা সার, দগলাস কস্তাদের। অনেকের মতে এটাই কাল হয়েছে বায়ার্নের জন্য, ফ্লিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ক্লাব ছাড়ার।

ম্যাথাউসও ফ্লিকের ক্লাব ছাড়ার পেছনে এই কারণই দেখছেন, ‘মৌসুম শুরুর আগে ফ্লিক বলেছিল, ক্লাবে নতুন খেলোয়াড় কে আসবে, সেটার ব্যাপারে কোচের মতামত নিতে হবে। আমার মনে হয় কথাটা ঠিক। কোচ হিসেবে আমি সেই খেলোয়াড়দের দলে এনে কী করব, যাদের আমি কখনো দলেই চাইনি?’

ক্লাবকর্তাদের সঙ্গে রোষের পাশাপাশি জার্মানি দলের চাকরি ফাঁকা হওয়াটাও ফ্লিকের সিদ্ধান্ত সহজ করে দিয়েছে বলে মনে করছেন সাবেক বিশ্বকাপজয়ী এই জার্মান মিডফিল্ডার, ‘আমার মনে হয় এসব কারণেই ফ্লিক দায়িত্ব ছেড়েছে। তা ছাড়া এখন ইওয়াখিম লুভের উত্তরসূরি হওয়ার একটা সুযোগ এসেছে ওর সামনে, তাই ও সেই সুযোগটা নিতে চায়।’

ম্যাথাউস হুট করে বায়ার্নের পরবর্তী কোচ হিসেবে নাগলসমানের নাম বললেও নাগলসমান নিজে ব্যাপারটা স্রেফ উড়িয়ে দিয়েছেন, ‘আমার বা আমার মুখপাত্রের সঙ্গে বায়ার্নের কোনো কথা হয়নি। আমি জানি না লোথার কোত্থেকে এই সংবাদ পেল। আমি বায়ার্নের সঙ্গে কোনো কথা বলিনি কারণ কথা বলার কিছু নেই। লাইপজিগের সঙ্গে আমার চুক্তি ২০২৩ সাল পর্যন্ত।’

তবে ৩৩ বছর বয়সী এই ম্যানেজার যদি বায়ার্নের ম্যানেজার হন, মজার একটা ঘটনা ঘটবে। বায়ার্নের অনেক খেলোয়াড়ের বয়সই নাগলসমানের চেয়ে বেশি। অধিনায়ক ম্যানুয়েল নয়্যারই যেমন, ৩৫ বছর বয়স তাঁর। রবার্ট লেফানডফস্কি, দগলাস কস্তা, এরিক ম্যাক্সিম চুপো-মোতিং, জেরোম বোয়াতেং, হাভি মার্তিনেজ— প্রত্যেকের বয়সই প্রায় নাগলসমানের সমান।

ইউলিয়ান নাগলসমানকে পাবে বায়ার্ন?
ছবি: রয়টার্স

নাগলসমান নিজেও হতে চেয়েছিলেন ফুটবলার। হাঁটুর চোটের কারণে সে স্বপ্ন অপূর্ণই থেকে গেছে। অগসবুর্গ ও মিউনিখের মূল দলে খেলার সুযোগ পাননি। অনূর্ধ্ব-১৯ দলে থাকতেই তাঁকে ইতি টানতে হয় ফুটবল ক্যারিয়ারের। তাই বলে ফুটবলের সঙ্গে লেগে থাকার স্বপ্নও কি শেষ হয়ে যায়? অবশ্যই না! নাগলসমান তাই কোচ হতে চেয়েছিলেন।

চার সেমিস্টার ব্যবসায় প্রশাসনে পড়ার পর পাড়ি জমান ক্রীড়া বিজ্ঞানে। এরপর নেমে পড়লেন কোচিংয়ে। ২০১৬ সালে আরেক জার্মান ক্লাব হফেনহেইমের মূল দলের দায়িত্ব পান তিনি। ২৮ বছর বয়সে হয়ে যান বুন্দেসলিগার কনিষ্ঠতম কোচ। যে বয়স ফুটবলাররা ক্যারিয়ারের মধ্যগগনে থাকেন, নাগলসমান সে বয়সেই সামলাতে শুরু করেছেন ডাগ আউট, ড্রেসিং রুম, খেলোয়াড়ের মতো সংবেদনশীল সব বিষয়।

বিষয়গুলো যে খুব খারাপভাবে সামলাচ্ছেন না, বায়ার্ন, রিয়াল, চেলসির মতো বাঘা বাঘা ক্লাবগুলোর আগ্রহই তার প্রমাণ। আর ম্যাথাউসের কথা যদি সত্যি হয়, তাহলে খেলোয়ড় হিসেবে স্বপ্ন পূরণ না করতে পারা নাগলসমান কোচ হিসেবে নিজের স্বপ্ন পূরণ করবেন, এটা নিশ্চিত।