নেইমার, এমবাপ্পে, রামোস, দি মারিয়া...এত তারকা নিয়ে কীভাবে একাদশ সাজাবে পিএসজি?
এখনো দলবদল মৌসুমের দেড় মাসের বেশি বাকি। পিএসজিরও কেনাকাটা এখনো শেষ হয়নি। গুঞ্জন আছে, এখনো ভালো মানের একজন লেফটব্যাকের খোঁজে আছেন পিএসজি কোচ মরিসিও পচেত্তিনো।
কিন্তু এই মুহূর্তেই যদি প্রশ্ন করা হয় যে এবারের দলবদলে সবচেয়ে বড় ‘দাও মেরেছে’ কোন ক্লাব, উত্তরে পিএসজিকে টপকানোর মতো কোনো ক্লাবের নাম খুঁজে পাওয়া শুধু কঠিন নয়, অসম্ভবই হবে। আগস্টে দলবদল মৌসুম শেষেও উত্তরটা পিএসজিই থাকবে বলে এখনই ভবিষ্যদ্বাণী করে দেওয়া যায়।
নয়তো কী! একে তো উঁচু মানের কয়েকজন তারকাকে দলে টেনেছে পিএসজি, তার ওপর তাঁদের বেশির ভাগকে প্যারিসে টেনে নিতে দলবদলে কোনো খরচও হয়নি ক্লাবটির!
একই দলবদলে রিয়াল মাদ্রিদের কিংবদন্তি ডিফেন্ডার ও নেতা সের্হিও রামোস, লিভারপুলে চার বছরে প্রিমিয়ার লিগ ও চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতা জর্জিনিও ভাইনালডাম আর এই ইউরোতেই সেরা খেলোয়াড় বনে যাওয়া গোলকিপার জানলুইজি দোন্নারুম্মাকে এসি মিলান থেকে পিএসজি নিয়েছে মুফতে। কারণ, আগের ক্লাবের সঙ্গে তাঁদের চুক্তি শেষ হয়ে গিয়েছিল।
এর সঙ্গে ইন্টার মিলানকে গত মৌসুমে ইতালিয়ান লিগ জেতানো রাইটব্যাক আশরাফ হাকিমিকে পিএসজি কিনেছে ছয় কোটি ইউরোতে।
নেইমার, এমবাপ্পে, আনহেল দি মারিয়া, মার্কো ভেরাত্তিরা তো আছেনই, তাঁদের সঙ্গে রামোস-দোন্নারুম্মা-ভাইনালডামরা যোগ হওয়ায় পিএসজিকে এখনই আগামী মৌসুমের চ্যাম্পিয়নস লিগের সবচেয়ে বড় দাবিদার বলে দেওয়া যায়!
এর ওপর গুঞ্জন সত্যি করে লেফটব্যাক হিসেবে এসি মিলান থেকে থিও এর্নান্দেজও পিএসজিতে এলে আগামী মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগের প্রিভিউ লেখা হবে ‘পিএসজিকে ঠেকাবে কে’ শিরোনামে।
তা খেলোয়াড় তো আসছেন, কিন্তু তাঁদের খেলানোর কৌশল তো পচেত্তিনোকে ঠিক করতে হবে। কীভাবে খেলাবেন পচেত্তিনো?
কৌশলের খুঁটিনাটি তো প্রতিপক্ষ, ম্যাচের অবস্থা, গুরুত্বভেদে আলাদা হবে, তবে কাগজে-কলমের হিসাবে ছক কী হতে পারে, সেটি নিয়ে আলোচনা করা যেতেই পারে। তা কোন ছকে বেশি দেখা যেতে পারে পিএসজিকে?
ছকের বিশ্লেষণে পিএসজির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হতে পারেন হাকিমি। যদিও তিন ডিফেন্ডারের পাশে রাইট উইংব্যাক হিসেবেই সবচেয়ে বেশি স্বচ্ছন্দ রিয়াল মাদ্রিদের একাডেমি থেকে উঠে আসা ২২ বছর বয়সী মরোক্কান—ইন্টার কিংবা তার আগে ডর্টমুন্ডে এই ভূমিকাতেই দারুণ খেলেছেন। হাকিমি খেলতে পারেন প্রথাগত রাইটব্যাক হিসেবেও, মাঝেমধ্যে লেফটব্যাক কিংবা রাইট উইংব্যাক হিসেবেও খেলতে দেখা গেছে তাঁকে। হাকিমির কারণেই ছকে অনেক অদলবদলের সুযোগ থাকছে পচেত্তিনোর।
৪-২-৩-১
পচেত্তিনোর সবচেয়ে পছন্দের ছক এটি। ছকে তো আর গোলকিপারের হিসাব হয় না, সেখানে কেইলর নাভাসকে সরিয়ে দোন্নারুম্মাই সুযোগ পাবেন বলে ধরে নেওয়া যায়। গোলকিপারের সামনে ছকের হিসেবে গেলে সেখানে রক্ষণের চারজনের মধ্যে রাইটব্যাক হিসেবে হাকিমি, সেন্টারব্যাক হিসেবে রামোসের সঙ্গে মারকিনিওস।
আর লেফটব্যাকে যেহেতু বড় তারকা এখনো কেনেনি পিএসজি, লেভিইন কুরজাওয়াকেও বিক্রি করে দিতে চাচ্ছে ক্লাবটি, সে ক্ষেত্রে হুয়ান বের্নাতকেই ধরে নেওয়া যায় লেফটব্যাকের জন্য।
এই ছকে মাঝমাঠে একটু ভুগতে হতে পারে পিএসজিকে। তারকার নামের বিচারে মাঝমাঠে ভেরাত্তি আর ভাইনালডামই এই ছকে একাদশে সুযোগ পাওয়ার কথা, কিন্তু সে ক্ষেত্রে ঝামেলা হলো, প্রথাগত কোনো ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার পিএসজির এই ছকে থাকছেন না।
ভেরাত্তি-ভাইনালডাম দুজনই মাঝমাঠে রক্ষণের কাজে হাত বাড়াতে পারেন, তবে কেউই তাতে বিশেষজ্ঞ নন। এ দুজনের কোনো একজনের বদলে অবশ্য লিয়ান্দ্রো পারেদেসকে খেলাতে পারেন পচেত্তিনো।
আক্রমণে চারটি নাম অবশ্য খুব একটা ভাবতে হয় না। বাঁ পাশে এমবাপ্পে, ডান পাশে ডি মারিয়া, মাঝে নেইমার। আর সবার সামনে স্ট্রাইকার হিসেবে আর্জেন্টিনার মাউরো ইকার্দি।
৩-৪-৩
রক্ষণের কেন্দ্রে রামোসের দুই পাশে মারকিনিওস ও প্রেসনেল কিমপেম্বে। মাঝমাঠের দুই পাশে হাকিমি আর বের্নাত থাকবেন দুই উইংব্যাক হিসেবে। কেন্দ্রে ভেরাত্তি আর ভাইনালডাম। আর আক্রমণের তিনে দুটি সমন্বয়ের যেকোনো একটি বেছে নিতে পারেন পচেত্তিনো। হয় নেইমার-এমবাপ্পে-দি মারিয়া, নয়তো নেইমার-এমবাপ্পে-ইকার্দি।
প্রথমটির ক্ষেত্রে এমবাপ্পেকে স্ট্রাইকার হিসেবে খেলিয়ে দি মারিয়া ডানে আর নেইমার বাঁয়ে। আর দ্বিতীয়টির ক্ষেত্রে নেইমার বাঁয়েই থাকবেন, ইকার্দি হবেন মূল স্ট্রাইকার আর এমবাপ্পে খেলবেন ডানে।
এই ছকে দুটি ঝামেলা হতে পারে। এক, দুই ডিফেন্ডারের একজন হিসেবে খেলতে অভ্যস্ত রামোস তিন ডিফেন্ডারের একজন হিসেবে কতটা স্বচ্ছন্দ হবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। আর দুই, এখানেও মাঝমাঠে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার নেই, যদিও তিন ডিফেন্ডারের উপস্থিতি ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারের অভাব কিছুটা ঘুচিয়ে দেয়।
৪-৩-৩
কাগজে-কলমে পিএসজির জন্য সবচেয়ে সেরা ছক হতে পারে এটি। রক্ষণে হাকিমি-মারকিনিওস-রামোস-বের্নাত। মাঝমাঠের তিনে ভাইনালডাম ও ভেরাত্তির সঙ্গে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসেবে থাকবেন ইদ্রিসা গানা গেয়ে, লিয়ান্দ্রো পারেদেস বা দানিলো পেরেইরার কোনো একজন। আক্রমণের তিনে নেইমার-এমবাপ্পে-দি মারিয়াই হতে পারেন সবচেয়ে ভালো সমন্বয়।
এই ছকে শুধু হাকিমির মানিয়ে নেওয়া নিয়েই প্রশ্ন থাকতে পারে। কিন্তু সেটিরও উত্তর হয়ে আসতে পারে একজন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারের উপস্থিতি। গেয়ে কিংবা দানিলো মূলত ‘ডেস্ট্রয়ার’ বলে তাঁরা দুই সেন্টারব্যাকের একটু সামনেই থাকবেন, যা মূলত তিনজনের একটা রেখা তৈরি করবে। আর এই তিনজনের কারণে দুই উইং ধরে হাকিমি আর বের্নাত আক্রমণে ওঠার লাইসেন্স পাবেন। সে ক্ষেত্রে হাকিমির রক্ষণকেই ধ্যানজ্ঞান মানার দরকার অতটা হবে না।
৪-২-২-২
একাদশের গঠনটা অনেকটা ৪-২-৩-১ ছকের মতোই, তবে এখানে এমবাপ্পে বাঁ পাশের উইংয়ে না থেকে সামনে দুই স্ট্রাইকারের একজন হিসেবে জুটি বাঁধবেন ইকার্দির সঙ্গে। নেইমার আর দি মারিয়া খেলবেন দুই আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার হিসেবে। তাঁদের পেছনে ছয়জন একই থাকছেন—হাকিমি, রামোস, মারকিনিওস, বের্নাত, ভাইনালডাম, ভেরাত্তি।
অবশ্য এ সবই মৌসুম শুরুর আগের হিসাব, কাগজে-কলমের বিশ্লেষণ। পচেত্তিনো কী হিসাব-নিকাশ কষছেন, কীভাবে দল সাজানোর পরিকল্পনা করছেন, তা তো মৌসুম শুরু হলেই বোঝা যাবে। এই তারকাদের বাইরেও পিএসজিতে পারেদেস-কিমপেম্বেরা নিয়মিত খেলার দাবি তুলতে পারেন। ইউলিয়ান ড্রাক্সলার, আন্দের এরেরা, পাবলো সারাবিয়ার মতো তারকাও নিশ্চয়ই বেঞ্চে বসে থাকতে চাইবেন না!