নেইমারকে রাখতে পারলেও এমবাপ্পের মন গলাতে পারছে না পিএসজি

পিএসজি তারকা নেইমার ও কিলিয়ান এমবাপ্পেছবি: টুইটার

পিএসজির ইউরোপ শাসন করার ইচ্ছা এবারও পূরণ হয়নি। একই লক্ষ্যে একটু আগে দৌড় শুরু করা ম্যানচেস্টার সিটির কাছে চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে হেরে গেছে পিএসজি। তাতে কী, নিজেদের ইতিহাসে টানা দুবার সেমিফাইনাল বা তার বেশি যাওয়ার কীর্তি তো এই প্রথম হলো। উন্নতি যে হচ্ছে, সেটা টের পেতে বিশেষজ্ঞ বনতে হয় না। পিএসজির কর্মকর্তারা তাই ভাবছেন, এবার না হলেও লক্ষ্য থেকে খুব বেশি দূরে নেই তাঁরা।

ইউরোপ জয়ের স্বপ্নটা টিকিয়ে রাখতে হলে কী দরকার, সেটাও জানা আছে পিএসজির। যে দুজন মহাতারকাকে টানতে দলবদলের বাজারের দুটি বিশ্ব রেকর্ডই নিজেদের দখলে নিয়েছে, তাঁদের আটকে রাখা। ২২ কোটি ২০ লাখ ইউরোয় দলে টানা নেইমারকে আরও চার বছরের জন্য পিএসজিতে রেখে দেওয়ার ব্যবস্থা করে ফেলেছে তারা। গত ৮ মে চুক্তি নবায়ন করে ২০২৫ সাল পর্যন্ত প্যারিসে থাকার কথা জানিয়েছেন ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার।

ঝামেলা বাধিয়েছেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। ২০১৭ সালে নেইমারের সঙ্গেই পিএসজিতে গেছেন। কিন্তু নেইমারের মতো পিএসজিতে আর সন্তুষ্ট নন বিশ্বকাপজয়ী ফরোয়ার্ড। তাই একের পর এক প্রস্তাব দিয়েও তাঁকে আটকে রাখতে পারছে না পিএসজি। এমবাপ্পের জন্য আরেকটি নতুন প্রস্তাব নিয়ে হাজির হচ্ছে ক্লাব, কিন্তু ফরাসি মিডিয়ার দাবি এবারও চুক্তি নবায়নের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেবেন এমবাপ্পে।

পিএসজির প্রকল্পে আর আস্থা পাচ্ছেন না এমবাপ্পে।
ছবি: রয়টার্স

বিশ্বকে চমকে দিয়ে নেইমারকে কিনেই ক্ষান্ত হয়নি পিএসজি। ২০১৭ সালের দলবদলেই দলবদলের বাজারের আরেক ‘হট কেক’ এমবাপ্পেকে নিয়ে নিয়েছিল। ১৮ বছরের সদ্য কৈশোর পেরোনো এমবাপ্পেকে রিয়াল মাদ্রিদের নাগাল থেকে কেড়ে নিতে ১৮ কোটি ইউরো খরচ করেছিল দলটি। উয়েফার আর্থিক সংগতি নীতি যেন না ভাঙে, সেটা নিশ্চিত করতে অভিনব একটি উপায়ও খুঁজে নিয়েছিল পিএসজি। প্রথম মৌসুমে মোনাকোর কাছ থেকে ধারে নেওয়া হয়েছিল এমবাপ্পেকে। এ জন্য ৩ কোটি ৫০ লাখ ইউরো দিয়েছিল তারা। সে সঙ্গে পরের মৌসুমে আরও ১৪ কোটি ৫০ লাখ ইউরোতে কেনা হবেই—এমন শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছিল।

২০১৮ বিশ্বকাপ জেতার পর কিছুদিন এমবাপ্পেকেই ক্লাবের পোস্টারবয় মেনেছিল পিএসজি। ক্লাবের স্মারক ও জার্সি বিক্রির দোকানে নেইমারকে পেছনে ফেলে এমবাপ্পের মুখই ব্যবহার করা হচ্ছিল। মাঠেও দিন দিন নেইমারকে পেছনে ফেলে দিচ্ছেন এমবাপ্পে। ২৯ বছর বয়সী নেইমারের চেয়ে ২২ বছর বয়সী এমবাপ্পেকে ঘিরেই যে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখা বুদ্ধিমানের কাজ, সেটা জানা আছে পিএসজির। ক্রীড়া প্রকল্পের দিক থেকে নেইমারের চেয়ে এমবাপ্পে ঘিরেই ভবিষ্যতের পরিকল্পনা গড়ছে দলটি।

ঝামেলা বাধাচ্ছেন এমবাপ্পে নিজেই। ২০১৭ সালে রিয়াল মাদ্রিদের ডাক উপেক্ষা করে নেইমারের সঙ্গী হয়েছিলেন একটি কারণেই, খেলার সুযোগ। রিয়ালের রোনালদো-বেল-বেনজেমার কারণে পর্যাপ্ত সুযোগ পাবেন না জেনে স্বপ্নের রিয়ালকে না বলার মতো চরিত্র দেখাতে পেরেছিলেন। সে সঙ্গে নিজের প্রতিভার ওপর আস্থা রেখে বলেছিলেন, ‘রিয়াল আমার জন্য অপেক্ষা করবে।’ অনেক প্রতিভাই রিয়ালের মতো ক্লাবে যাওয়ার সুযোগ একবার হারালে আর কখনো সেটা পান না। কিন্তু এমবাপ্পের জন্য রিয়াল এখনো অপেক্ষা করে আছে।

নতুন কোচ পচেত্তিনো যেভাবেই হোক নেইমার-এমবাপ্পে জুট ধরে রাখতে চান।
ছবি: রয়টার্স

একদিকে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর অভাব পূরণ করতে পারেননি এডেন হ্যাজার্ড, ওদিকে গ্যারেথ বেল রোনালদোর বিদায়ের পরই নিজেকে হারিয়ে ফেলেছেন। ফলে রিয়ালের এখন এমন একজন উইঙ্গার দরকার, যিনি দলকে মৌসুমে অন্তত ২০টি গোল এনে দেবেন। করোনার কারণে গত মৌসুমে দলবদলের বাজার থেকে হাত গুটিয়ে রেখেছিল রিয়াল। কিন্তু রোনালদোর বিদায়ের পর টানা তিন মৌসুম গোলখরায় ভুগতে থাকা দলটি আর অপেক্ষা করতে রাজি নয়। আগামী দলবদল মৌসুমেই এমবাপ্পেকে পেতে চায় তারা।

স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম দেপোর্তেস কুয়াত্রো বলছে, ওদিকে এমবাপ্পেরও মনে হচ্ছে স্বপ্ন পূরণ করার সময় এসেছে। নেইমারের মতোই তাঁরও প্রথম চুক্তির মেয়াদ ২০২২ পর্যন্ত। অর্থাৎ আর মাত্র এক মৌসুম, এর মধ্যে এমবাপ্পে যদি চুক্তি নবায়ন করতে রাজি না হন, তাঁকে মুফতে ছেড়ে দিতে হবে। এমবাপ্পে সেটা জানেন, আর এ কারণেই চুক্তি নবায়ন করতে রাজি হচ্ছেন না। এই ফরোয়ার্ডকে এ নিয়ে চারবার চুক্তি নবায়নের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। প্রতিবারই আগের চেয়ে আরেকটু ভালো আর্থিক সুবিধার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রতিবারই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন ফ্রেঞ্চ ফরোয়ার্ড। কারণ, রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে একদিন খেলবেন—এ স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে ২০২১ সালকেই বেছে নিয়েছেন এমবাপ্পে।

ক্লাব সভাপতি নাসের আল খেলাইফি হাল ছাড়ছেন না। এমবাপ্পেকে রাজি করাতে আবার নতুন প্রস্তাব প্রস্তুত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে ফ্রেঞ্চ সংবাদমাধ্যম। শোনা যাচ্ছে, এবার একেবারে ‘ব্ল্যাংক চেক’ই দেওয়া হবে এমবাপ্পেকে। কিন্তু ফ্রেঞ্চ ফরোয়ার্ডের মন তাতেও গলছে না। ওদিকে দলবদল করার জন্য নিজের শহরের ক্লাবের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্টও করতে চাইছেন না। তাই আশা করছেন আগামী কয়েক দিনে দর-কষাকষিতে রাজি হয়ে যাবে পিএসজি। এখন পর্যন্ত রিয়াল মাদ্রিদ আশা করছে, এক বছর বাকি এমন একজন ফরোয়ার্ডের জন্য ১৫ কোটি ইউরো দিলেই রাজি হবে পিএসজি। ২০১৯ সালে চেলসি থেকে মাত্র এক মৌসুম বাকি থাকার পরও হ্যাজার্ডের জন্য রিয়াল ১২ কোটি ইউরোর বেশি খরচ করেছিল।