নেইমার-ফিরমিনো জাদুতে ব্রাজিলের হুংকার

দলের পঞ্চম গোলের পর কাসেমিরো (ডানে) ও লুইজের সঙ্গে নেইমারের উচ্ছ্বাস।ছবি: রয়টার্স

ম্যাচে গোল পেলেন না নেইমার। কিন্তু ফুটবলে সব সময় কী গোলের হিসাব করলে চলে?

গোল না পেলেও নেইমার গোটা ম্যাচে যেভাবে খেললেন, ব্রাজিল সমর্থকদের আকর্ণবিস্তৃত হাসি আসবেই। ২০২২ বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচে আজ বলিভিয়ার বিপক্ষে ব্রাজিলের সবচেয়ে বড় তারকা গোটা খেলা নিয়ন্ত্রণ করেছেন, খেলিয়েছেন ফিরমিনো-কুতিনিওদের। সব মিলিয়ে ঘরের মাটিতে ম্যাচটাতে ব্রাজিল দুমড়ে-মুচড়ে দিয়েছে বলিভিয়াকে, মাঠ ছেড়েছে ৫-০ গোলের জয় নিয়ে।

সাও পাওলোতে বাংলাদেশ সময় আজ ভোরে ম্যাচটাতে নেইমারকে পাশে পেয়ে উজ্জীবিত হয়ে উঠেছিলেন স্ট্রাইকার রবার্তো ফিরমিনোও। লিভারপুলের জার্সিতে ফর্মহীন এই স্ট্রাইকার নেইমারের ছোঁয়ায় ফিরে পেলেন ফর্ম, করলেন জোড়া গোল। গোল করেছেন পিএসজির সেন্টারব্যাক মার্কিনিওস, বার্সেলোনার মিডফিল্ডার কুতিনিও। বাকি গোলটা বলিভিয়ার আত্মঘাতী।

গত নভেম্বরের পর জাতীয় দলের জার্সি গায়ে নামা হয়নি নেইমারদের। সেই ম্যাচে দক্ষিণ কোরিয়াকে ৩-০ গোলে হারানো ব্রাজিলের খেলা দেখে মনে হল না, করোনাভাইরাসের কারণে এতদিন মাঠে না নামার কারণে তাদের পায়ে বিন্দুমাত্রও মরচে পড়েছে। বছরে প্রথমবারের মতো নীল-হলুদ জার্সি গায়েই বিধ্বংসী নেইমার-ফিরমিনোরা।

৪-২-৩-১ ছকে নামা ব্রাজিলের গোলবারে ছিলেন না আলিসন, এদেরসনদের কেউ। সে জায়গায় নেমেছিলেন পালমেইরাসের ওয়েভারতন। সামনে সেন্ট্রাল ডিফেন্সে থিয়াগো সিলভা-মার্কিনিওসের জুটি, দুই ফুলব্যাক হিসেবে আতলেতিকো মাদ্রিদের রেনান লোদি (বাম) ও জুভেন্টাসের দানিলো (ডান)।

দুই রক্ষণাত্মক মিডফিল্ডার হিসেবে খেলে ওপরে থাকা চারজনকে আক্রমণ করার পূর্ণ লাইসেন্স দিয়েছিলেন অ্যাস্টন ভিলার তরুণ মিডফিল্ডার দগলাস লুইজ ও রিয়াল মাদ্রিদের কাসেমিরো। সবার ওপরে ফিরমিনো, পেছনে কুতিনিও, বাঁয়ে নেইমার, ডানে সদ্য গ্রেমিও থেকে বেনফিকায় যোগ দেওয়া উইঙ্গার এভারতন সোয়ারেস।

জোড়া গোল করেছেন ফিরমিনো, একটি করেছেন কুতিনিও (বাঁয়ে)।
ছবি: রয়টার্স

প্রথম থেকে ব্রাজিল এতটাই দুর্দান্ত খেলছিল যে, ম্যাচ শুরুর তিন মিনিটের মাথায় দুটি বড় সুযোগ পেয়ে যায় তাঁরা। এভারতন ও মার্কিনিওস নষ্ট করেন ওই দুই সুযোগ। কিন্তু ১৬ মিনিটে আর আটকে রাখা যায়নি মার্কিনিওসকে। ডান থেকে আসা দানিলোর মাপা ক্রসে মাথা ছুঁইয়ে গোল করেন পিএসজির এই তারকা। ৩০ মিনিটে স্কোরশিটে নাম লেখা ফিরমিনো। বাঁ দিকে নেইমার আর রেনান লোদির দুর্দান্ত রসায়নে বলিভিয়ার রক্ষণভাগ খেই হারিয়ে ফেলে, লোদির মাটিঘেঁষা এক কাটব্যাকে পা ছুঁইয়ে ব্যবধান বাড়ান লিভারপুলের এই স্ট্রাইকার।

দ্বিতীয়ার্ধে ব্রাজিলের আক্রমণের ধার আরও বাড়ে যেন। নিজের দ্বিতীয় গোল পেয়ে যান ফিরমিনো। এবার ফিরমিনোকে সরাসরি সাহায্য করেন নেইমার। বাঁ প্রান্ত থেকে নেইমারের এক সুযোগসন্ধানী পাস খুঁজে নেয় ডি-বক্সে ওঁত পেতে থাকা ফিরমিনোকে। বলিভিয়ার গোলরক্ষক কার্লোস লাম্পে আরেকটু মনোযোগী হলে হয়তো শটটা আটকাতে পারতেন, তাঁর পায়ের ফাঁক দিয়ে জালে জড়ায় বল।

৫৯ মিনিটে এভারতন সোয়ারেসের জায়গায় মাঠে নামান হয় রিয়াল মাদ্রিদের তরুণ প্রতিভা রদ্রিগোকে। নেমেই আক্রমণে মন দেন তিনি। রদ্রিগোর সঙ্গে দারুণ বোঝাপড়ায় কুতিনিও বল নিয়ে চলে যান ডান প্রান্তে, সেখান থেকে ফিরমিনোর উদ্দেশ্যে ক্রস দিয়েছিলেন বার্সেলোনা মিডফিল্ডার। কিন্তু বল ফিরমিনোর কাছে না গিয়ে বলিভিয়ার ডিফেন্ডার হোসে মারিয়া কারাসকোর গায়ে লেগে ঢুকে যায় জালে।

শেষ গোলেও যথারীতি নেইমারের ছোঁয়া। বাঁ প্রান্ত থেকে তাঁর মাপা ক্রসে মাথা ছুঁইয়ে ব্যবধান ৫-০ করে ফেলেন কুতিনিও। গোল না পেলেও, জোড়া অ্যাসিস্টে মন জয় করেছেন নেইমার। গোটা ম্যাচে বলিভিয়ার রক্ষণভাগকে যে নাচিয়ে ছেড়েছেন, তার প্রমাণ পাওয়া গেছে তাঁর ১৮টি ড্রিবলে।

আগামী বুধবার সকাল ছয়টায় পেরুর বিপক্ষে আবারও নামবেন নেইমাররা।