নেইমারের ক্লাবও সম্মান দেয়নি ক্লাব কিংবদন্তিদের

পিএসজি অধ্যায় পার করে এলেও বিদায়ের ধরন নিয়ে আক্ষেপ আছে সিলভার।ছবি: রয়টার্স

লুইস সুয়ারেজের বিদায় নিয়ে ইনস্টাগ্রামে বার্সেলোনাকে বেশ কড়া কথা শুনিয়েছিলেন লিওনেল মেসি। সে বার্তায় মেসিকে উৎসাহ দিয়েছেন বার্সার সাবেক দুই খেলোয়াড় নেইমার ও দানি আলভেজ। খেলোয়াড়দের সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে না পারায় বার্সেলোনার সমালোচনা বহুদিন ধরেই করছেন ব্রাজিলীয় দুই তারকা। এখন দেখা যাচ্ছে খেলোয়াড় মূল্যায়নে ব্যর্থ ক্লাবগুলোতেই বারবার খেলছেন তাঁরা। নেইমারের বর্তমান ও আলভেজের সাবেক ক্লাব পিএসজিও নাকি খেলোয়াড়দের সম্মান করতে জানে না। অন্তত তাঁদের স্বদেশি থিয়াগো সিলভা তো এমনটাই শোনালেন।

প্যারিসে আট মৌসুম কাটিয়েছেন সিলভা। ক্লাবটির অধিনায়কও ছিলেন। ক্লাবকে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনাল খেলিয়েই তবে বিদায় নিয়েছে। মৌসুম শেষ হওয়ার আগেই অবশ্য তাঁর বিদায় অনেকটা নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। দল চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে ওঠার পর সিলভাকে ক্লাবে রাখার একটা চেষ্টা হয়েছিল, কিন্তু লাভ হয়নি তাতে। নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ ও চেলসিকেই পছন্দ হয়েছে সিলভার।

২০১৯-২০ মৌসুম ফ্রেঞ্চ লিগ অসম্পূর্ণ অবস্থায় শেষ হয়েছে। তবু ক্লাবের হয়ে সিলভার ৩৫ ম্যাচ খেলা বলে দেয় পিএসজির জন্য কত গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন সিলভা। ৮ মৌসুমে ৩১৫টি ম্যাচে মাঠে নেমে ২৩টি শিরোপা জেতা এ ডিফেন্ডারকে তবু প্রাপ্য সম্মান দেয়নি তাঁরা। করোনা বিরতির সময় জানিয়ে দেওয়া হয়, তাঁকে নতুন চুক্তি দিতে রাজি নয় ক্লাব। তাই ভবিষ্যৎ ক্লাব খুঁজে নিয়েছেন সিলভা। চেলসির হয়ে এরই মধ্যে প্রিমিয়ার লিগে অধিনায়কের আর্মব্যান্ড পরা হয়ে গেছে তাঁর।

পিএসজি ক্যারিয়ার এখন অতীত হয়ে গেলেও বিদায়ের ধরনটা মুখে তেতো স্বাদ এনে দিয়েছে সিলভার মুখে। তাই তো পিএসজির ক্রীড়া পরিচালক লিওনার্দোর ওপর সব ক্ষোভ ঝেড়ে দিয়েছেন ফ্রান্স ফুটবলের কাছে, ‘পরিস্থিতি আমাকে প্রচণ্ড খেপিয়ে দিয়েছে। যেভাবে ব্যাপারটা এগিয়েছে তা একদম পছন্দ হয়নি। লকডাউন চলছিল, তবু সবকিছু একটু ভিন্নভাবে করা যেত। আমি ব্রাজিলে তখন কোয়ারেন্টিনে ছিলাম, এ অবস্থায় লিওনার্দো ফোন করে জানাল, মহামারি চলছে, নানা ঝামেলা আছে...।’

লিওনার্দোর আচরণ খুবই প্রশ্নবিদ্ধ ঠেকেছিল সিলভার কাছে। ক্লাবের একজন কিংবদন্তিকে এই কর্মকর্তা যোগ্য সম্মান দেননি বলেই ধারণা সিলভার, ‘সে আমাকে প্রথমে জিজ্ঞেস করল চুক্তির সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর আরও দুই মাস খেলতে পারব কিনা। কারণ চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনাল বাকি ছিল তখন। আমি বললাম, হ্যাঁ পারব। এরপরই সে আমাকে বলল, ক্লাব এই দুই মাসের পর আর চুক্তি বাড়াতে রাজি নয়। অর্থাৎ শুধু দুই মাস, এর বেশি কিছু না।’

একবার চ্যাম্পিয়নস লিগ শুরু হওয়ার পরই সিদ্ধান্ত বদলানোর চেষ্টা করেছে পিএসজি। কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমিফাইনাল ও ফাইনালে নেইমার-এমবাপ্পেদের আক্রমণের চেয়ে সিলভাদের রক্ষণভাগই নজর কেড়েছে বেশি। ফলে ৩৪ বছর বয়সী ডিফেন্ডারের চুক্তি বাড়ানোর চেষ্টা করেছিল পিএসজি। কিন্তু ক্লাবের আচরণে ব্যথা পাওয়া সিলভা তত দিনে ক্লাব ছাড়ার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন। সিলভার চোখে চুক্তি নবায়ন না করার সিদ্ধান্তটা অন্যভাবেও নিতে পারত পিএসজি, ‘এটা অন্যভাবেও করা যেত। পিএসজির পুরো ক্যারিয়ারে আমি আমার সর্বোচ্চ দিয়েছি, কখনো প্রতারণা করিনি। কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে তিন ম্যাচেই সব বদলে গেল (চুক্তি নবায়নের প্রস্তাব)? আর এর আগে আট বছরে আমি যা অর্জন করেছি সেটার কোনো দাম ছিল না?’

চ্যাম্পিয়নস লিগ  জিততে না পারার আক্ষেপ নিয়েই পিএসজি ক্যারিয়ার শেষ করেছেন সিলভা।
এএফপি ফাইল ছবি

সিলভা একা নন, ক্লাবটির ইতিহাসের সর্বোচ্চ স্কোরার এডিনসন কাভানির সঙ্গেও একই কাজ করেছেন লিওনার্দো। তবে সিলভার মতো অত সহজে ব্যাপারটি মেনে নেননি উরুগুয়ে স্ট্রাইকার। এই স্ট্রাইকার চ্যাম্পিয়নস লিগের সম্ভাব্য বাকি তিন ম্যাচ খেলার জন্য রাজি হননি। ফাইনালে পরিপূর্ণ এক স্ট্রাইকারের অভাব খুব ভালোভাবে টের পেয়েছেন কোচ টমাস টুখেল। যার ওপর ভরসা করে কাভানির সঙ্গে এমন আচরণ করা হয়েছিল সেই মাউরো ইকার্দিকে বদলি নামানোর আস্থাও পাননি কোচ। সিলভার আশা এ ঘটনা থেকে শিক্ষা নেবে ক্লাব, ‘এটা সংগতিপূর্ণ (খেলোয়াড়দের সঙ্গে এমন আচরণ) না। লিও এটা খুব বাজেভাবে, তাড়াহুড়া দেখিয়ে করেছে। শুধু যে আমার সঙ্গে করেছে তাও না, কাভানির সঙ্গেও করেছে—যে পিএসজির ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোল স্কোরার। আমি এ নিয়ে কথা বলছি কারণ আমার আশা ক্লাব এ পথ থেকে সরে আসবে এবং ভবিষ্যতে এ ভুল আর করবে না।’