নেইমারের জোড়া গোলে ঝাল মেটাল পিএসজি

গোলের পর নেইমারের উচ্ছ্বাস।ছবি: রয়টার্স

এই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সঙ্গে কেন যেন পারছিলই না পিএসজি!

২০১৮-১৯ মৌসুমে এই ইউনাইটেডের কাছেই নিজেদের মাঠে শেষ মুহূর্তের পেনাল্টিতে ৩-১ গোলে হেরে শেষ ষোলোতে বাদ পড়েছিল প্যারিসের ক্লাবটি। সেবার নেইমার ছিলেন না চোটের কারণে। ভিআইপি বক্সে অসহায় চোখে দেখেছিলেন শেষ মুহূর্তে হাস্যকর পেনাল্টিতে গোল খেয়ে দলের বাদ পড়া। ইউনাইটেড পিএসজিকে হতাশা উপহার দিয়েছে এই মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগের প্রথম ম্যাচেও। যেদিন নিজেদের মাঠেই পিএসজি হারল, সেদিনও নেইমার ছিলেন মাঠে। সেদিন হারের ব্যবধানটা ছিল ২-১।

অবশেষে কাল চ্যাম্পিয়নস লিগে ইউনাইটেডের বিপক্ষে ঝালটা মেটাল পিএসজি। ঝাল মেটালেন নেইমারও। ব্রাজিলিয়ান মহাতারকার জোড়া গোলে ইউনাইটেডের মাঠ থেকে ৩-১ গোলে জিতে ফিরেছে পিএসজি। ব্রাজিল দলে নেইমারেরই সতীর্থ ফ্রেড লাল কার্ড দেখায় শেষ ২০ মিনিট ১০ জন নিয়ে খেলেছে ইউনাইটেড।

এই জয়ে শেষ ষোলোতে যাওয়ার ‘অগ্নিপরীক্ষা’য় একটু স্বস্তিও পেলেন নেইমার-এমবাপ্পেরা। গ্রুপে এখন পিএসজি, ইউনাইটেড ও লাইপজিগ—তিন দলেরই পয়েন্ট ৯টি করে। তবে মুখোমুখি লড়াইয়ের হিসাবে এগিয়ে গ্রুপসেরা পিএসজি, দুইয়ে ইউনাইটেড। আর চ্যাম্পিয়নস লিগে কাল ইস্তাম্বুল বাশাকশেহিরের মাঠে ৪-৩ গোলের রোমাঞ্চকর জয় পাওয়া লাইপজিগ আছে তিনে। নেইমারদের জন্য স্বস্তি এই যে আগামী মঙ্গলবার গ্রুপের শেষ ম্যাচে পিএসজি নিজেদের মাঠে খেলবে বাশাকশেহিরের বিপক্ষে। আর ইউনাইটেড যাবে লাইপজিগের মাঠে।

ইউনাইটেড ও পিএসজি—দুই দলের মধ্যে ব্যাপারটা সম্ভবত এখন এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে ইউনাইটেডের মাঠে ম্যাচ হলে জিতবে পিএসজি, পিএসজির মাঠে ইউনাইটেড। এখন পর্যন্ত চারবার মুখোমুখি হয়েছে দুই দল। দুটি করে জয় দুই দলের, প্রতিটি জয়ই অতিথি দলের। কাল পিএসজির সেই জয়ে নায়কের নাম নেইমার!

ম্যাচের ৬ মিনিটেই পিএসজিকে এগিয়ে দেন নেইমার। এমবাপ্পের শট ইউনাইটেডের এক ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে দিক বদলে তাঁর দিকে আসে। গোলপোস্টের ডান দিকে দুরূহ কোণ থেকে দারুণ ভলিতে গোল করেন নেইমার।

এরপর ম্যাচটা দেখল নাটক! প্রথমার্ধের মাঝামাঝি পিএসজির আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডার লিয়ান্দ্রো পারেদেসের সঙ্গে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে তাঁকে ঢুস মেরে বসেন ইউনাইটেডের ফ্রেড। সরাসরি লাল কার্ড দেখার মতো অপরাধ, কিন্তু ভিএআরে দেখেও রেফারি সিদ্ধান্ত নেন—হলুদ কার্ড! ইউনাইটেড কোচ উলে গুনার সুলশারও ম্যাচ শেষে বললেন, ‘ফ্রেডের ওকে ওভাবে ঢুস মারা উচিত হয়নি। এটা হয় লাল কার্ড, নয়তো কিছুই নয়। ও ভাগ্যবান যে ও আরও কিছুক্ষণ মাঠে থাকতে পেরেছে।’

দুর্ভাগ্য পিএসজির ওপর আরও জেঁকে বসে কিছুক্ষণ পর। ইউনাইটেড সমতায় ফেরে ম্যাচের ৩০ মিনিটে। তা-ও কী ভাগ্যপ্রসূত গোল! ইউনাইটেড স্ট্রাইকার মার্কাস রাশফোর্ডের শট পিএসজির এক ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে দিক বদলে ঢোকে জালে, পিএসজি গোলকিপার কেইলর নাভাসের কিছুই করার ছিল না।

ফ্রেডের ঢুঁসে মাটিতে গড়াচ্ছেন পারেদেস। ফ্রেডের দিকে তেড়ে যাচ্ছেন নেইমার।
ছবি: রয়টার্স

এই দুর্ভাগ্য যদি পিএসজিকে হতাশ করে থাকে, দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে দুবার ভাগ্য মুখ তুলে তাকিয়েছে নেইমারদের দিকে। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে রাশফোর্ড ও এদিনসন কাভানির গড়া দারুণ আক্রমণের পর পিএসজি বক্সে ফাঁকা পোস্টের সামনে বল পান ইউনাইটেড স্ট্রাইকার আন্থনি মার্শিয়াল। কিন্তু কয়েক গজ দূর থেকেও কীভাবে যেন বলটা বার উঁচিয়ে মারেন ফরাসি স্ট্রাইকার!

এর কিছুক্ষণ পর পিএসজিকে ‘দেখিয়ে দেওয়ার’ সুযোগ এসেছিল কাভানির সামনে। ছয় মৌসুমে পিএসজিতে ২০০ গোল করা উরুগুইয়ান স্ট্রাইকারকে এই মৌসুমের শুরুতে ছেড়ে দেয় পিএসজি, এরপর বিনা মূল্যে ইউনাইটেডে যোগ দেন কাভানি। মার্শিয়ালের ওই মিসের কিছুক্ষণ পর ইউনাইটেডকে এগিয়ে দেওয়ার সুযোগ আসে সেই কাভানির সামনে। কিন্তু বক্সের বাইরে থেকে তাঁর দারুণ চিপ পিএসজির বারে লেগে ফিরে আসে।

এত সুযোগ হারানোর মূল্যই ইউনাইটেড দিয়েছে এরপর। মূল্য দিয়েছে ফ্রেডকে উঠিয়ে না নেওয়ারও! ৬৯ মিনিটে কর্নার থেকে এ পা-ও পা ঘুরে ইউনাইটেড বক্সে বল আসে পিএসজি ডিফেন্ডার মার্কিনিওসের কাছে। পোস্টের পাঁচ-ছয় গজ দূর থেকে বল জালে জড়াতে সমস্যাই হয়নি ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডারের। এর এক মিনিট পরই ইউনাইটেড হয়ে যায় ১০ জনের। ইউনাইটেড থেকেই গত মৌসুমে পিএসজিতে যাওয়া স্প্যানিশ মিডফিল্ডার আন্দের এরেরাকে ৭০ মিনিটে ফাউল করে বসেন ফ্রেড। দেখতে হয় দ্বিতীয় হলুদ কার্ড।

১০ জনের দলের বিপক্ষে এক গোলে এগিয়ে থাকাও তো সব সময় স্বস্তি দেয় না, পিএসজি অবশেষে সেই স্বস্তি পেল যোগ করা সময়ের প্রথম মিনিটে। ইউনাইটেড বক্সে এমবাপ্পের কাছ থেকে পাস পেয়ে সহজেই বল জালে জড়ান নেইমার। ‘ওল্ড ট্রাফোর্ডে জেতা বিশ্বের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর একটি। এই দল দেখাল যে তারা হার মেনে নেয় না’—ম্যাচ শেষে পিএসজি কোচ টমাস টুখেলের তৃপ্তি। আর ইউনাইটেড কোচ সুলশারের আক্ষেপ, ‘আমরা অনেক বড় সুযোগ পেয়েছিলাম। ব্যবধান গড়ে দেওয়ার মতো কিছু মুহূর্ত এসেছিল। বড় ম্যাচে এই সুযোগগুলোই আপনাকে নিতে হবে।’