নেইমারের প্রায় চার গুণ বেতন পান মেসি!

মেসি ও নেইমার।ফাইল ছবি : রয়টার্স

মেসির বেতন যে চোখ কপালে তুলে দেওয়ার মতো, সেটা তো জানুয়ারিতেই জানা গেছে। বার্সেলোনার সঙ্গে মেসির চুক্তির গোপন নথি গত জানুয়ারিতে কীভাবে যেন ফাঁস হয়ে গিয়েছে। আর সে সুবাদেই জানা গেছে চার বছরে মেসিকে ৫৫ কোটি ৫২ লাখ ৩৭ হাজার ইউরো (৫ হাজার ৭০২ কোটি ৮১ লাখ ৮৭ হাজার টাকার বেশি) দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বার্সেলোনা! কাতালান পত্রিকা এল মুন্দো জানিয়েছিল, প্রতি মৌসুমে বেতন ও বিভিন্ন শর্ত সাপেক্ষে ভাতা বাবদ মেসিকে ১৩ কোটি ৮০ লাখ ইউরো দেওয়ার চুক্তি করেছিল ক্লাব।

খেলোয়াড়দের আর্থিক বিষয়গুলোর ব্যাপারে ফরাসি ক্রীড়া দৈনিক লে’কিপ গত বছর যে তথ্য দিয়েছিল, সে তুলনায় অঙ্কটা অনেক বেশি। গত বছর লে’কিপ বলেছিল, মেসি মাসে ৮ দশমিক ৩ মিলিয়ন ইউরো করে বেতন পান বার্সেলোনার কাছ থেকে। অর্থাৎ বছরে ১০ কোটি ইউরো। কিন্তু ফাঁস হয়ে যাওয়া নথির খবরের পর লে’কিপকে নিজেদের তথ্য নিয়ে ভাবতে বাধ্য করেছে। ফরাসি পত্রিকা এক বছর পর ফুটবলের শীর্ষ ফুটবলার ও কোচদের বেতন–ভাতা নিয়ে যখন আবার খবর প্রকাশ করেছে, তাতে বেতন–ভাতা সবার আগের মতোই আছে। শুধু মেসির ক্ষেত্রেই ২ কোটি ৬০ লাখ ইউরো বাড়িয়ে নিয়েছে তারা।

লে’কিপের প্রতিবেদন অনুযায়ী বেতনের দিক থেকে মেসির ধারেকাছে কেউ নেই। এমনকি দুইয়ে থাকা রোনালদোর দ্বিগুণেরও অনেক বেশি পান বার্সেলোনা অধিনায়ক। আর নেইমারের প্রায় চার গুণ বেতন পাচ্ছেন তাঁর সাবেক সতীর্থ!

মেসির অর্ধেকেরও কম বেতন পান রোনালদো।
ফাইল ছবি: রয়টার্স

ফরাসি ক্রীড়া দৈনিক লে’কিপ ইউরোপের শীর্ষ ফুটবলারদের বেতনের যে তালিকা প্রকাশ করেছে, সে অনুযায়ী মেসিকে বছরে ১২ কোটি ৬০ লাখ ইউরো (১ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা প্রায়) বেতন দেয় বার্সেলোনা! সেটা বিশ্বের অন্য যেকোনো খেলোয়াড়ের নাগালের কতটা বাইরে, সেটা লে’কিপই জানিয়ে দিয়েছে। বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেতনের ফুটবলার ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। পর্তুগিজ ফরোয়ার্ডকে জুভেন্টাস বেতন দেয় বছরে ৫ কোটি ৪৩ লাখ ৬০ হাজার ইউরো (৫৫০ কোটি টাকা প্রায়), যা মেসির বেতনের মাত্র ৪৩ শতাংশ!

রোনালদো তবু চাইলে সান্ত্বনা খুঁজে নিতে পারেন মেসির এই বেতন কর দেওয়ার আগে। স্পেনের কর আইন অনুযায়ী, এই বেতনের অর্ধেক কর হিসেবে দিয়ে দিতে হয় বার্সেলোনাকে। বাকি অর্ধেক মেসির অ্যাকাউন্টে ঢোকে। ওদিকে কদিন আগে স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, জুভেন্টাসে রোনালদো যাওয়ার অন্যতম কারণই ছিল ইতালির বিশেষ কর আইন। সে সঙ্গে খেলোয়াড়ের ইমেজ–স্বত্বের ওপরও ইতালিতে কর খুব অল্প দিতে হয়। স্পেনে নিজের ইমেজ–স্বত্বের টাকা প্রায় অর্ধেক দিয়ে দিতে হতো রোনালদোকে, এ কারণে কর ফাঁকি দিতে গিয়ে শাস্তি পেয়েছেন মেসি–রোনালদো দুজনই। সে তুলনায় এখন ইতালিতে নাকি বছরে ২ লাখ ইউরোর একটু বেশি আয়কর দিলেই চলছেন রোনালদো।

নেইমারের তো সে সুবিধাও নেই। দলের মূল তারকা হতে চান, প্রাণভোমরা হতে চেয়েছিলেন—এগুলো সবই সত্যি। সে সঙ্গে আর্থিকভাবেও লাভবান হতেই গিয়েছিলেন প্যারিসে। পিএসজিতে সর্বোচ্চ বেতনই পাচ্ছেন। কিন্তু সেটাও বছরে ৩ কোটি ৬৭ লাখ ২০ হাজার ইউরো। অর্থাৎ বেশি বেতনের ফুটবলারদের তালিকায় তিনে থাকলেও ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড মেসির প্রায় চার ভাগ বেতন পান। নেইমারের সঙ্গে পিএসজি তাদের আরেক বড় তারকা কিলিয়ান এমবাপ্পেকেও ধরে রাখতে আগ্রহী। নতুন চুক্তিতে তাঁকে নেইমারের সমান বেতন দেওয়ার আগ্রহও প্রকাশ করেছে ক্লাব। বর্তমানে এমবাপ্পে বছরে পিএসজি থেকে পাচ্ছেন ২ কোটি ৫১ লাখ ৮০ হাজার ইউরো।

বেতনের দিক থেকে এমবাপ্পে অবশ্য শীর্ষ পাঁচে নেই। শীর্ষ পাঁচের বাকি দুটি স্থানে স্পেনে খেলা আর দুই ফুটবলারের। গত বছরও বার্সেলোনায় থাকা লুইস সুয়ারেজের বার্ষিক বেতন ৩ কোটি ৪৮ লাখ ইউরো। আতলেতিকো মাদ্রিদে যাওয়ার জন্য বেতন কমাতে রাজি হয়েছেন বলে শোনা গিয়েছিল। যদিও লে’কিপের প্রতিবেদন অন্য কিছুই বলছে। আতলেতিকো থেকেই বার্সায় যাওয়া আঁতোয়ান গ্রিজমান যে ৩ কোটি ৪৮ লাখ ইউরো বেতন পাচ্ছেন, এ নিয়ে অবশ্য সন্দেহ করার কোনো সুযোগ নেই।

নেইমার ও এমবাপ্পের পেছনে পিএসজির খরচ মেসির অর্ধেক!
ফাইল ছবি: এএফপি

২০২০ সালে লে’কিপের প্রতিবেদন আরেকটি কারণেও বিস্ময় জাগিয়েছিল—কোচদের বেতন তালিকা। গত দশকে ইউরোপের সবচেয়ে সফল দুই কোচের তালিকা যদি করতে হয়, তবে পেপ গার্দিওলা ও জিনেদিন জিদানের নামই আসবে। অথচ এ দুজনের বেতন যোগ করেও ডিয়েগো সিমিওনের বেতনের নাগাল পাওয়া যায়নি! এ বছরও তাই। লে’কিপের প্রতিবেদন অনুযায়ী ডিয়েগো সিমিওনে বছরে ৪ কোটি ৩২ লাখ ইউরো নিচ্ছেন ক্লাব থেকে। এরপরই আছেন ম্যানচেস্টার সিটির পেপ গার্দিওলা। সিটিকে একটি চ্যাম্পিয়নস লিগ এনে দেওয়ার স্বপ্নে বিভোর গার্দিওলা বছরে ২ কোটি ২৬ লাখ ইউরো নেন।

ওদিকে টটেনহামের হয়ে অন্তত একটি শিরোপা জেতার প্রতিজ্ঞা করা জোসে মরিনিও বার্ষিক ১ কোটি ৭০ লাখ ইউরোর চুক্তিতে এসেছে ক্লাবে। রিয়াল মাদ্রিদের কোচ জিনেদিন জিদান চারেও জায়গা পাননি। সে জায়গায় আছেন লিভারপুলের ইয়ুর্গেন ক্লপ। জার্মান কোচের (১ কোটি ৭০ লাখ ইউরো) চেয়ে ২ লাখ ইউরো কম বেতন পান জিদান (১ কোটি ৬৮ লাখ ইউরো)। কোচদের শীর্ষ পাঁচে তবু ইংল্যান্ডের তিনজনকে পাওয়া গেছে। শীর্ষ বেতনভোগী ফুটবলারদের তালিকায় ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের কেউ নেই। সেখানে সর্বোচ্চ বেতনভোগী হিসেবে গ্যারেথ বেল বছরে ৩ কোটি ইউরো নিচ্ছেন, কিন্তু তাঁর বেতনের বেশ বড় অংশ স্পেনের রিয়াল মাদ্রিদ বহন করছে। সেদিক বিবেচনা করলে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে শীর্ষে আছেন ডেভিড ডে হেয়া। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে গোলবারের দায়িত্ব হারাতে বসা এই গোলকিপারের বেতন বছরে ২ কোটি ২২ লাখ ইউরো।