পুলিশের পাহারা আটকাতে পারল না রবসনকে

বাংলাদেশ পুলিশ ক্লাবের রক্ষণের পাহারা টপকে এভাবেই বারবার আক্রমণ সাজিয়েছেন বসুন্ধরা কিংসের রবসন।ছবি: প্রথম আলো

‘আহ্‌, কী দুর্দান্ত গোল!’

প্রেস বক্সে সমস্বরে উচ্চারিত হলো কথাটি। রবসন ডি সিলভার এমন গোলের পর প্রতিপক্ষ কোচ ডাগআউটে দাঁড়িয়ে ভুলে হাততালি দিলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। বাঁ প্রান্তের বক্সের বাইরে থেকে রবসনের ডান পায়ের বাঁকানো শটের গোলটি ইউটিউবে বারবার খুঁজে দেখার মতো।

বসুন্ধরা কিংসের জয়সূচক গোলটির আগে প্রথমার্ধে আরও একটি গোল করেছেন এই ব্রাজিলিয়ান। তাঁর জোড়া গোলে বাংলাদেশ পুলিশ ফুটবল ক্লাবকে ২–১ গোলে হারিয়েছে বসুন্ধরা কিংস। লিগে বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের এটি টানা দ্বিতীয় জয় আর পুলিশের টানা দ্বিতীয় হার।

বুসন্ধুরা কিংসকে জেতাতে আজ বাংলাদেশ পুলিশ ক্লাবের বিপক্ষে জোড়া গোল করেছেন রবসন।
ছবি: প্রথম আলো

হারলেও আজ হাততালি পাবে পুলিশ। শক্তিতে অনেক এগিয়ে থাকা বসুন্ধরার কঠিন পরীক্ষা নিয়েছে তারা। এক গোলে পিছিয়ে গিয়ে প্রথমার্ধেই পাল্টা গোল দিয়ে সমতায় ফেরা। শেষ পর্যন্ত হারলেও শেষ বাঁশি বাজার পর বসুন্ধরা কোচের হাঁপ ছেড়ে বাঁচার মতো অবস্থা। যেভাবে আক্রমণের সুরভি ছড়াচ্ছিলেন পুলিশের খেলোয়াড়েরা, মনে হচ্ছিল এই বুঝি সমতায় ফিরতে যাচ্ছেন তাঁরা। বসুন্ধরাও অবশ্য গোলের সুযোগ নষ্ট করেছে অনেক।

চোটে থাকায় মূল স্ট্রাইকার বাল্লো ফামুসাকে ছাড়াই একাদশ সাজাতে হয়েছে পুলিশের কোচ পাকির আলীকে। সাধারণত বসুন্ধরার বিপক্ষে প্রতিপক্ষ দলগুলো বেশি ডিফেন্ডার খেলিয়ে রক্ষণে বাঁধ দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু পুলিশের শ্রীলঙ্কান কোচ সেটি করেননি। আক্রমণভাগে দলের মূল ভরসা আইভরিয়ান ফামুসা না থাকার পরও ৪–৪–২ ফরমেশনে দলকে খেলিয়েছেন পাকির আলী। প্রতিপক্ষের সঙ্গে বলের দখলের লড়াইয়েও খুব বেশি পিছিয়ে ছিল না তাঁর দল।

গোলদাতা রবসনকে (১০ নম্বর) নিয়ে বসুন্ধরার খেলোয়াড়দের উচ্ছ্বাস।
ছবি: প্রথম আলো

আগের ম্যাচে থেকে একাদশে একটিমাত্র পরিবর্তন এনেছিলেন বসুন্ধরার কোচ অস্কার ব্রুজোন। আলমগীর কবিরের জায়গায় একাদশে ফেরানো হয় হোল্ডিং মিডফিল্ডার মাসুক মিয়াকে। রক্ষণভাগকে ছায়া দেওয়ার জন্য তাঁকে আজ বেশ চাপ সামলাতে হয়েছে। প্রতিপক্ষকে ঠেকিয়ে রাখা গেলে আর দলে রবিনহো, জোনাথন ফার্নান্দেজের মতো ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার থাকলে নিজেদের গোল করা নিয়ে চিন্তায় থাকতে হয় না।

১৬ মিনিটে রবসনের গোলে বসুন্ধরা এগিয়ে যায়। জোনাথনের সঙ্গে ওয়ান–টু করে বক্সে ঢুকে শট নিয়েছিলেন রাউল বেসেরা। সেটি পুলিশ গোলরক্ষক মোহাম্মদ নেহাল ঠেকালে ফিরতে বলে বক্সের মধ্যে থেকে শটে গোলটি করেন রবসন। লিগে এটি তাঁর প্রথম গোল।

গোল হজম করে মাঝমাঠে বলের দখল নিয়ে নেয় পুলিশ। তাদের আইভরি কোস্টের দীর্ঘদেহী মিডফিল্ডার ফ্রেডরিক পোদা খেলেছেন দুর্দান্ত। প্রথাগত মিডফিল্ডার হয়েও স্ট্রাইকার হিসেবে একেবারে খারাপ খেলেননি কিরগিজস্তানের মুরিলিমজোন আখমেদভ। কিরগিজ এই মিডফিল্ডারের দুর্দান্ত ফ্রি–কিক থেকে পাওয়া বলে দৃষ্টিনন্দন গোল করে পুলিশকে সমতায় ফিরিয়েছেন দলীয় অধিনায়ক ল্যান্সিং তোরে। বসুন্ধরার দুই সেন্টারব্যাক খালেদ সাফিই ও তপু বর্মণের মাঝ থেকে লাফিয়ে হেডে গোলটি করেন আইভরি কোস্টের এই ডিফেন্ডার।

বাংলাদেশ পুলিশ ক্লাবের বিপক্ষে এককথায় অপ্রতিরোধ্যই ছিলেন বসুন্ধরার ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড রবসন।
ছবি: প্রথম আলো

কিন্তু প্রতিপক্ষ দলে রবসনের মতো সৃষ্টিশীল ফুটবলার থাকলে যা হয়! বেশিক্ষণ সমতায় ফেরার স্বস্তিতে থাকতে পারল না পুলিশ। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে রিমনের কাছে থেকে আসা বল পেয়ে শরীরের ঝাঁকিতে ছিটকে ফেলেন পাহারায় থাকা প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়। বুটের স্পাইক দিয়ে নেন বলের নিয়ন্ত্রণ। এরপর বক্সের বাইরে থেকে ডান পায়ে বাঁকানো শটে দূরের পোস্টের কোনা দিয়ে বল পাঠান জালে। গোলরক্ষক ঝাঁপ দিয়েছিলেন। কিন্তু বলের নাগাল পাওয়া গেলে তো!

দ্বিতীয়ার্ধে হ্যাটট্রিক করার চেষ্টা চালালেন রবসন। সতীর্থরাও খুঁজলেন হ্যাটট্রিক করানোর সুযোগ। কিন্তু পুলিশের কড়া পাহারায় সেটি আর সম্ভব হলো না। ৫১ মিনিটে জোনাথনের পাস থেকে বক্সের মধ্যে ঢুকেছিলেন রবসন। তাঁর নেওয়া শট পোস্ট ছেড়ে বের হয়ে এসে ঠেকিয়ে দেন নেহাল। ফিরতি বলে জোনাথনের শট ক্লিয়ার করেন এক ডিফেন্ডার।

৮০ মিনিটে জোনাথন নিজে গোল করার সুযোগ পেয়েও তা না করে চেষ্টা করেছিলেন স্বদেশী রবসনকে দিয়ে হ্যাটট্রিক করাতে। মাঝমাঠের নিচ থেকে বল কেড়ে নিয়ে দ্রুতগতিতে ওপরে উঠে বক্সের কাছাকাছি গিয়ে বল দিয়েছিলেন পাশে থাকা রবসনের উদ্দেশে। কিন্তু দুর্বল পাস হওয়ায় সেটি তাঁর পায়ে পৌঁছানোর আগে পেছন থেকে এসে স্লাইড করে বল মাঠের বাইরে দেন পুলিশের লেফটব্যাক ইসা মিয়া।

নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে কুমিল্লায় বসুন্ধরার প্রতিপক্ষ ব্রাদার্স ইউনিয়ন। একই দিনে ঢাকায় পুলিশের প্রতিপক্ষ উত্তর বারিধারা।