পুলিশের ‘ব্যারিকেড’ ভাঙাই কষ্ট হচ্ছিল কিংসের

রবসনই শেষ পর্যন্ত জিতিয়েছেন বসুন্ধরা কিংসকেছবি: বাফুফে

বসুন্ধরা কিংস মানেই একাধিক গোল ব্যবধানে জয়। আর তুলনামূলক ছোট হিসেবে পরিচিত দলগুলোর জালে গোলের মেলা। কিন্তু কমলাপুর বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে আজ বাংলাদেশ পুলিশ ফুটবল ক্লাবের বিপক্ষে কষ্ট করেই জিততে হলো বসুন্ধরাকে। ন্যূনতম ১-০ গোলের জয়। তা-ও গোলটি এসেছে পেনাল্টি থেকে।

স্বাধীনতা কাপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে মাঠে নেমেছিল দুই দল। আগের ম্যাচে বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে ৬-০ গোলে উড়িয়ে দেওয়ার অনুপ্রেরণা নিয়ে খেলতে নেমেছিল অস্কার ব্রুজোনের দল। শক্তিশালী দল নিয়ে পুলিশের ‘ব্যারিকেড’ ভাঙতেই কষ্ট হচ্ছিল তাদের।

ভাগ্যিস, পেনাল্টি থেকে ম্যাচের ১৮ মিনিটে গোলটি করেছিলেন রবসন। এরপর আর পরিষ্কারভাবে গোল করার মতো সুযোগ তৈরি করতে পারেনি স্বাধীনতা কাপের বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। ম্যাচের শেষের দিকে যেভাবে বসুন্ধরাকে চেপে ধরেছিল পুলিশ, তাতে ম্যাচটা যে জেতা গেছে, এ-ই স্বস্তি বসুন্ধরার।

গোলের পর বসুন্ধরার খেলোয়াড়দের উচ্ছ্বাস
ছবি: বাফুফে

হাঁটুর চোট কাটিয়ে অনেক দিন বাদে আজ মাঠে ফিরেছেন ফুলব্যাক রিমন হোসেন। তিনি ফেরায় তপুর সঙ্গে সেন্টারব্যাক হিসেবে শুরু করেছিলেন তারিক কাজী। তবে ম্যাচের ২২ মিনিটে গোড়ালির চোটে মাঠ ছাড়তে হয় তারিককে। গোড়ালির চোটটা গুরুতর নয় বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। তারিক উঠে গেলে তপুর সঙ্গে সেন্টারব্যাক হিসেবে খেলানো হয় রাইটব্যাক বিশ্বনাথ ঘোষকে।

চোট কাটিয়ে রিমন হোসেনের ফেরাটা দলটির জন্য ভালো বার্তাই ছিল। কিন্তু সেটি মিলিয়ে গেছে তপু বর্মণের গুরুতর চোটে। দ্বিতীয়ার্ধে হাঁটুর চোট নিয়ে মাঠ ছাড়েন তপু। যেভাবে মাঠ থেকে বের হয়ে গেলেন তিনি, চোটটা বড় বলেই মনে হচ্ছে। বসুন্ধরা কোচিং স্টাফরাও মনে করছেন, দলীয় অধিনায়কের চোটটা ভোগাতে পারে তাদের। আজই হাঁটুর পরীক্ষা করানো হবে তাঁর।

পুলিশ দলও কম ভোগায়নি বসুন্ধরাকে
ছবি: বাফুফে

নিয়মিত দুই সেন্টারব্যাককে হারানোর ম্যাচের ১৬ মিনিটেই এগিয়ে যায় বসুন্ধরা। বক্সের মধ্যে ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার জোনাথন ফার্নান্দেজকে পুলিশের ডিফেন্ডার ইশা ফয়সাল ফাউল করলে পেনাল্টি দেওয়া হয়। স্পটকিক থেকে বল জালে জড়াতে কোনো ভুল করেননি রবসন।

ব্রাজিলিয়ান রবসনের পাশাপাশি বসুন্ধরায় আছেন ফার্নান্দেজ ও বসনিয়ার স্তোয়ান ভ্রানিয়েস। কড়া পাহারায় রেখে রবসনকে বিপজ্জনক হয়ে ওঠার সুযোগ দেয়নি পুলিশ। ভ্রানিয়েস ছিলেন নিজের ছায়া হয়ে।

তাঁদের সঙ্গে পুলিশের ফরোয়ার্ড লাইনে পাল্লা দেওয়ার মতো আছেন আফগানিস্তান জাতীয় দলের স্ট্রাইকার আমিরুদ্দিন শরিফি, দুই আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার মরক্কো বংশোদ্ভূত জার্মানির আদিল কুসকুস ও ব্রাজিলের দেনিলসন রোলদাও।

৩৫ মিনিটে বসুন্ধরা গোলকিপার আনিসুর রহমানের পরীক্ষা নিয়েছেন কুসকুস। তাঁর বাঁকানো শট ঠেকাতে বেগ পেতে হয়েছে আনিসুরকে। ৭৬ মিনিটে আনিসুর বড় বাধা না হয়ে দাঁড়ালে হয়তো বসুন্ধরার জয়ই পাওয়া হতো না। সেবারও শটটা মেরেছেন সেই মরক্কোর মিডফিল্ডার কুসকুস, তাঁর ডান পায়ের বাঁকানো শট মনে হচ্ছিল পোস্টেই ঢুকে যাচ্ছে, তখন বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে রক্ষা করেন আনিসুর।

পুলিশের রক্ষণে বারবার আটকেছে বসুন্ধরা কিংসের আক্রমণ
ছবি: বাফুফে

শেষ দিকে ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ পেয়েছিল বসুন্ধরাও। ফাঁকায় থাকা বদলি ফরোয়ার্ড এলিটা কিংসলিকে পাস দিলে গোলের সুযোগটা বড় হতো, কিন্তু জোনাথন নিজে শট নেন। পুলিশের ডিফেন্ডারের পায়ে লেগে কর্নার।

যোগ করা সময়ে বসুন্ধরা ফ্রি-কিক পেলে মানব দেয়ালে দাঁড়ানো নিয়ে দুই দলের খেলোয়াড়েরা হালকা ধাক্কাধাক্কিতে জড়িয়ে পড়েন। হলুদ কার্ড দেখেন বসুন্ধরার মোহাম্মদ ইব্রাহিম ও রিমন। শেষ পর্যন্ত কষ্টার্জিত জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে বসুন্ধরা।

টানা দুই জয়ে ৬ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ ‘ডি’ থেকে কোয়ার্টার ফাইনালে বসুন্ধরা। হারলেও এখনো সুযোগ আছে পুলিশের। নিজেদের প্রথম ম্যাচে চট্টগ্রাম আবাহনীর বিপক্ষে ১-১ গোলে ড্র করেছিল তারা।

দিনের অন্য ম্যাচে চট্টগ্রাম আবাহনী ১-১ গোলে ড্র করেছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ফুটবল দলের সঙ্গে। ১৪ মিনিটে জুয়েল রানার গোলে নৌবাহিনী দল এগিয়ে গিয়েছিল, ৮৯ মিনিটে কেহিন্দের গোলে সমতায় ফেরে চট্টগ্রাম আবাহনী। ম্যাচে দুই হলুদ কার্ডের কারণে লাল কার্ড দেখেন চট্টগ্রাম আবাহনীর সোহেল রানা।