পেছনের দিকেই হাঁটছে বাংলাদেশ

বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনফাইল ছবি

ফিফা র‍্যাঙ্কিং একটি দেশের ফুটবল-আয়না। আড়াই মাস পর গত পরশু ঘোষিত সর্বশেষ ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ের আয়নায় বাংলাদেশকে দেখা যাচ্ছে পেছনের সারিতেই। ২১০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ৪ ধাপ পিছিয়ে এখন ১৮৮। বাকি ২২টি দেশের বেশির ভাগ অচেনা বা ক্ষুদ্র রাষ্ট্র।

গত জুনে কাতারে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ৩ ম্যাচের ২টিতে হেরেছে বাংলাদেশ। ১টি ড্র। এই প্রতিযোগিতায় ৮ ম্যাচেই জয়বিহীন জামাল ভূঁইয়ারা। ২ ড্র আর ৬ হারের সামগ্রিক প্রভাব র‍্যাঙ্কিংয়ে পড়েছে। ৮ পয়েন্ট কমে বাংলাদেশের বর্তমান রেটিং ৯০৯।

দক্ষিণ এশিয়ার একসময় বাংলাদেশ কাছাকাছি মানে থাকা ভারত এখন অনেকটা এগিয়ে ১০৫। আশির দশকে যে মালদ্বীপকে ৮-০ গোলে ভাসিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ, সেই ছোট্ট দেশটি ১৫৮। নেপালের মতো দেশ এবারের বিশ্বকাপ বাছাইয়ে চায়নিজ তাইপের বিপক্ষে দুটি ম্যাচই জিতে ৬ পয়েন্ট পেয়েছে। ৪ রেটিং পয়েন্ট বেড়ে দেশটির ফিফা র‍্যাঙ্কিং এখন ১৬৮।

পুঁচকে ভুটানেরও পেছনে পড়ে গেছে বাংলাদেশ।

বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে ৮ ম্যাচের ৬টিতে হেরেছে বাংলাদেশ, দুটি ড্র
ছবি: বাফুফে

২০১৮ সালের জুনে বাংলাদেশ যখন ১৯৪, ভুটান ১৮৩। ২০১৯ সালে ঢাকায় বাংলাদেশের সঙ্গে দুটি প্রীতি ম্যাচ খেলে ভুটান। দুটিতেই হার সফরকারীদের। এরপর আর ম্যাচ খেলেনি দেশটি। বিশ্বকাপ বাছাইয়ে খেলার ছাড়পত্র পায়নি। তারপরও ভুটান এখন বাংলাদেশের চেয়ে এক ধাপ ওপরে, ১৮৭।

দক্ষিণ এশিয়ার আরেক দেশ পাকিস্তান সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছে কম্বোডিয়ার সঙ্গে ২০১৯ সালে। এরপর থেকে দেশটি আন্তর্জাতিক ফুটবলে নিষিদ্ধ হয়ে ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ে নেমেছে ১৯৮-এ। দুর্বল ঘরোয়া কাঠামোর কারণে ডুবছে শ্রীলঙ্কা, তারা এখন ২০৫।

কিন্তু ঘরোয়া ফুটবলে টাকার বিপুল প্রবাহ থাকা সত্ত্বেও দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবল মানচিত্রে রুগ্‌ণ অবস্থা বাংলাদেশের। এ দেশের ফুটবলাররা ক্লাব থেকে বছরে ৫০-৬০ লাখ টাকা পান। তারপরও উন্নতি নেই।

কেন নেই, প্রশ্নে ২০১৯ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর প্রথম আলোকে বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন বলেছিলেন, ‘আন্তর্জাতিক ম্যাচ না খেললে জাতীয় দলের ফিফা র‍্যাঙ্কিং পেছাবেই।’ সে সময় বাংলাদেশের র‍্যাঙ্কিং ছিল ১৮৭।

বাংলাদেশের জয়ের হার বাড়ানোর বিকল্প নেই জেমি ডে-র হাতে
ছবি: বাফুফে

গত বছর অক্টোবরে চতুর্থবার বাফুফে সভাপতি নির্বাচনে কাজী সালাউদ্দিনের প্রতিশ্রুতি ছিল, আবারও সভাপতি হলে ফিফার র‍্যাঙ্কিং ১৫০-এর কাছাকাছি আনতে চান। কিন্তু তৈলাক্ত বাঁশ বেয়ে ওপরে ওঠার মতো দুই ধাপ এগোলে ৪ ধাপ পেছায় বাংলাদেশ। সাপলুডু খেলার মতো চলছে গত কিছুদিনে। সালাউদ্দিন এখন বলছেন, ‘আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে টাকার দরকার। টাকা কে দেবে?’ যদিও টাকার সংস্থান করার দায়িত্বটা বাফুফেরই।

বাংলাদেশ আগে ফিফা নির্ধারিত সূচিতে ম্যাচ খেলত না। এখন চেষ্টা করছে খেলতে। বিষয়টা মনে করিয়ে দিয়ে সালাউদ্দিন বলছেন, ‘একটি ম্যাচ খেলতে ৬০-৭০ লাখ টাকা লাগে। আমাদের তো বাজেট নেই। ফলে সমস্যা হয়। তবু আমরা কিরগিজস্তানে দল পাঠাচ্ছি কদিন পর।’

র‍্যাঙ্কিং বাড়াতে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উচিত জাতীয় দলকে টাকা দেওয়া। এই দাবি করে সালাউদ্দিনের সংযোজন, ‘সরকার টাকা না দিলে কীভাবে হবে! আমার কথা ছাড়ুন। যাকেই বাফুফে সভাপতির চেয়ারে আনুন, জাতীয় দলের র‍্যাঙ্কিংয়ে উন্নতি হবে না, যদি না বেশি ম্যাচ খেলা হয়। টাকা হলেই আপনি ম্যাচ খেলতে পারবেন এবং ম্যাচ খেলার বিকল্প নেই।’

ঘরোয়া ফুটবলে খেলোয়াড়দের অনেকেই বছরে ৫০-৬০ টাকা আয় করেন, কিন্তু আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের পারফরম্যান্সে ঘরোয়া সেটির ছাপ পড়ছে না
ফাইল ছবি

তবে জাতীয় দল কেন ম্যাচ জেতে না, সেটাই আজকের দিনে সালাউদ্দিনের কাছে বড় প্রশ্ন। বাফুফে নিয়মিত লিগ আয়োজন করছে দাবি করে তিনি বলছেন, ‘আমরা খেলা রাখছি মাঠে। জাতীয় দলকে সব সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছি। কিন্তু জাতীয় দলের ম্যাচ তো খেলে দিতে পারব না আমি।’

অকাট্য যুক্তি। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না, ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ে উন্নতির প্রতিশ্রুতি দিয়েই কাজী সালাউদ্দিনের নেতৃত্বে বর্তমান কমিটি ক্ষমতায় এসেছে।

বাংলাদেশের ফিফা র‍্যাঙ্কিং ১৯৯৩ সালে সর্বোচ্চ ১১৬ থেকে আজ ১৯০ ছুঁই ছুঁই। ২০১৬ সালে ভুটানের কাছে হারের পর ২০১৭ সালে র‍্যাঙ্কিং নেমে যায় সর্বনিম্ন ১৯৭-এ। জুয়া, ক্যাসিনোতে মত্ত দেশের ক্লাব সংস্কৃতির বিরূপ প্রভাব পড়েছে ফুটবলে এবং র‍্যাঙ্কিংয়ে। এখন র‍্যাঙ্কিং বাড়াতে বেশি বেশি ম্যাচ খেলার জানা কথাটাই মনে করিয়ে দিয়ে জাতীয় দলের কোচ জেমি ডেও বলছেন, ‘ধারাবাহিকভাবে মাঠে ভালোও খেলতে হবে।’

ভালো খেলার দায়িত্বটা নিতে হবে জামাল ভূঁইয়াদেরই।