পেনাল্টি নিয়ে জিদানের মনের ব্যথা বুঝলেন কোমান

রিয়াল মাদ্রিদ কোচ জিনেদিন জিদান ও বার্সেলোনা কোচ রোনাল্ড কোমান।ফাইল ছবি: এএফপি

পেনাল্টি!

রেফারির এ সিদ্ধান্ত পক্ষে-বিপক্ষে যা–ই হোক, অনুভূতিটা প্রায় সময়ই বিস্ময়সূচক। তবে এ পেনাল্টি নিয়ে একটি বিষয়ে কখনো কারও মনে বিস্ময় জাগেনি। রিয়াল মাদ্রিদ-বার্সেলোনা ম্যাচে দুই দলের কোচের মুখে পেনাল্টির দাবি ওঠা বেশ আগে থেকেই আর বিস্ময় জাগায় না। এমনকি বার্সার ম্যাচেও পেনাল্টি না পাওয়ার আক্ষেপে পুড়ে রিয়ালের পক্ষে রেফারির বাঁশি বাজানোর উদাহরণ টানতে দেখা গেছে।

জিনেদিন জিদান কোচ হয়ে আসার পর রিয়াল থেকে এমন উদাহরণ দেওয়ার হার কমলেও, কেউ অস্বীকার করতে পারবেন না পেনাল্টি নিয়ে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীই পক্ষপাতিত্বের উদাহরণে একে অপরকে টেনে থাকে। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম ঘটালেন বার্সা কোচ রোনাল্ড কোমান।

সেভিয়ার বিপক্ষে কাল রিয়ালের ২-২ গোলে ড্র ম্যাচে একটি পেনাল্টির সিদ্ধান্ত নিয়ে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাবের প্রতি সুর নরম করলেন ডাচ কোচ। তাঁর মতে, কোনটা ‘হ্যান্ডবল’ আর কোনটা নয়, তা নিয়ে কোচ ও খেলোয়াড় থেকে রেফারিরাও সন্দেহ ভুগে থাকেন।

কোমানের এ কথার প্রতিচ্ছবি রয়েছে কাল রাতের ম্যাচেই। ম্যাচ ১-১ গোলে সমতায় থাকতে ৭৮ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করে সেভিয়াকে আবারও এগিয়ে দেন ক্রোয়াট মিডফিল্ডার ইভান রাকিতিচ। এ পেনাল্টির সিদ্ধান্ত নিয়েই জমেছে নাটক।

৭৫ মিনিটে পাল্টা আক্রমণে সেভিয়া রক্ষণে ঢুকে পড়া রিয়াল ফরোয়ার্ড করিম বেনজেমাকে বক্সে ফেলে দেন সেভিয়া গোলকিপার বুনো। রেফারি প্রথমে সে জন্য রিয়ালের পক্ষে পেনাল্টির বাঁশি বাজান। কিন্তু ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি (ভিএআর) প্রযুক্তি মাঠের রেফারির সিদ্ধান্ত ১৮০ ডিগ্রি ঘুরিয়ে দেয়। সেভিয়ার পক্ষে পেনাল্টি! কেন?

সেভিয়ার কর্নার ক্লিয়ার করতে গিয়ে বল হাতে লাগে রিয়ালের মিলিতাওয়ের।
ছবি: এএফপি

সেভিয়ার যে কর্নার থেকে পাল্টা আক্রমণে উঠে বেনজেমা পেনাল্টি আদায় করে নিয়েছিলেন, সেটির শুরুতে নিজেদের বক্সে কর্নার ঠেকাতে গিয়ে বল লেগেছিল মাদ্রিদ ডিফেন্ডার এদের মিলিতাওয়ের হাতে। হ্যান্ডবল!

রেফারির বিপক্ষে কথা বলতে অনভ্যস্ত রিয়াল কোচ জিনেদিন জিদানও ম্যাচ শেষে রাগ লুকিয়ে রাখতে পারেননি, ‘রেফারির সঙ্গে (ম্যাচের পর) কথা বলেছি, ব্যাখ্যা চেয়েছি। ব্যাপারটা আসলেই অনেক প্যাঁচানো। কারণ, ম্যাচ থেকে আমাদের আরও বেশি কিছু পাওয়ার ছিল।’

জিদানের এই ‘প্যাঁচানো’—কথাটার সঙ্গে কোমানের কথার মিল খুঁজে পাওয়া যায়। লা লিগায় মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে লেভান্তের মুখোমুখি হওয়ার আগে সংবাদ সম্মেলনে রিয়ালের এ পেনাল্টির সিদ্ধান্ত নিয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল বার্সেলোনা কোচের কাছে, ‘রিয়াল মাদ্রিদ এ নিয়ে অভিযোগ করলে সেটা তাদের সমস্যা। কোচ ও খেলোয়াড়েরাই ঠিকমতো বুঝতে পারে না কোনটা হ্যান্ডবল, কোনটা নয়, এমনকি রেফারিরাও সন্দেহে ভুগে থাকেন। এটা শুধু স্পেনে নয়, অন্য (দেশের) লিগেও এমন হয়।’

বার্সার কোচ হয়ে আসার পর পেনাল্টি নিয়ে সম্ভবত বেশি কথা বলতে হচ্ছে কোমানকে। গত মাসে মৌসুমের শেষ ‘এল ক্লাসিকো’য় রিয়ালের কাছে ২-১ গোলে হারের পর পেনাল্টি না পাওয়ার ক্ষোভ ঝেড়ে ডাচ কোচ বলেছিলেন, ‘বার্সেলোনার সমর্থক হিসেবে ম্যাচটা দেখে থাকলে খুব বিরক্ত হওয়ার কথা। দুটো পরিষ্কার সিদ্ধান্ত আমাদের বিপক্ষে গেছে। ওটা পরিষ্কার পেনাল্টি ছিল।’

এ মৌসুমের প্রথম এল ক্লাসিকোতেও পেনাল্টি না পাওয়া নিয়ে রাগ ঝেড়েছিলেন কোমান। আর হ্যান্ডবল—এর ক্ষেত্রে ‘অপরাধ’ নির্ণয়ও বেশ জটিল। অনেক ম্যাচেই দেখা যায়, একই রকম হ্যান্ডবলে একটি পেনাল্টি দেওয়া হচ্ছে আরেকটিতে রেফারি কিংবা ভিএআরের বিকার নেই! কোমান সম্ভবত এ কারণেই কোচ ও খেলোয়াড় থেকে রেফারিদেরও সন্দেহে ভোগার কথা বলেছেন, আর জিদান বলেছেন ‘প্যাঁচানো’।

সে যা–ই হোক, লা লিগার পয়েন্ট টেবিল এখন জমজমাট। লিগে আর তিনটি করে ম্যাচ বাকি। পয়েন্ট টেবিলে যথাক্রমে শীর্ষ তিন দল—আতলেতিকো মাদ্রিদ (৩৫ ম্যাচে ৭৭ পয়েন্ট), রিয়াল মাদ্রিদ (৩৫ ম্যাচে ৭৫ পয়েন্ট) ও বার্সেলোনার (৩৫ ম্যাচে ৭৫ পয়েন্ট)।

লা লিগায় দুটি দলের পয়েন্ট সমান হলে গোলব্যবধান নয়, ব্যবধান গড়ে দেয় দুই দলের মুখোমুখি লড়াইয়ের ফল। সেখানে সবচেয়ে এগিয়ে আছে রিয়াল, বার্সা পিছিয়ে আছে।
লিগে বার্সার বিপক্ষে দুই ম্যাচেই জিতেছে রিয়াল, আতলেতিকোর বিপক্ষে দুই ম্যাচে একটিতে জিতেছে, অন্যটিতে করেছে ড্র।

রিয়ালের কাছে দুই ম্যাচেই হেরে যাওয়া বার্সা লিগে আতলেতিকোর বিপক্ষে দুই ম্যাচের একটিতে হেরেছে, অন্যটিতে ড্র। তার মানে তিন দলের পয়েন্ট যদি সমান হয়ে যায়, সে ক্ষেত্রে লিগ জিতবে রিয়াল। দ্বিতীয় হবে আতলেতিকো মাদ্রিদ। বার্সেলোনা তৃতীয়। এ সমীকরণ মাথায় নিয়ে কাল রাতে লেভান্তের মুখোমুখি হবে কোমানের দল।

বার্সাকে বাকি তিন ম্যাচ তো জিততেই হবে, পাশাপাশি ভাগ্যের কাছে একটু বেশিই ধরনা দিতে হবে মেসিদের। আতলেতিকোর অন্তত এক ম্যাচে হার ও রিয়ালের অন্তত একটা ম্যাচে পয়েন্ট হারানোও (ড্র বা হার যা-ই হোক) কামনা করতে হবে। বার্সা বাকি তিন ম্যাচ জিতলে তাদের পয়েন্ট হবে ৮৪।