পেনাল্টি ব্যর্থতায় লিভারপুলকে হারাতে পারল না সিটি

কেভিন ডি ব্রুইনার এই পেনাল্টি চলে গেছে পোস্টের বাইরে।ছবি: রয়টার্স

কেভিন ডি ব্রুইনার আজ রাতে হয়তো ঘুম হবে না!

কোনো ফাইনাল-টাইনাল ছিল না ম্যাচটা। এমন নয় যে এই ম্যাচটাই লিগ শিরোপার ভাগ্য নির্ধারণ করে দিত। কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বী যখন বর্তমান লিগ চ্যাম্পিয়ন লিভারপুল, যাদের সঙ্গে গত দু-তিন মৌসুমে শিরোপার লড়াইয়ে ছিল ম্যানচেস্টার সিটি...সেই ম্যাচে পেনাল্টি মিস করার ব্যর্থতা ডি ব্রুইনাকে না পুড়িয়ে পারে না।

ওই গোলটা হলে পরে ম্যাচের গতিপ্রকৃতি কেমন হতো, তা বলা যায় না। তবে ওই গোলটা না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত আজ নিজেদের মাঠে লিভারপুলের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছে সিটিকে।

ড্রয়ে দুই পক্ষেরই ক্ষতি হলো বটে। এই সপ্তাহের শুরুতে লিগ শীর্ষে থাকা লিভারপুল ৮ ম্যাচে ১৭ পয়েন্ট নিয়ে এখন পয়েন্ট তালিকার তিন নম্বরে। আর মৌসুমে অনেকটা ছন্নছাড়াভাবে শুরু করা পেপ গার্দিওলার সিটির পয়েন্ট ৭ ম্যাচে ১২। এই সপ্তাহ থেকে শুরু হচ্ছে আন্তর্জাতিক বিরতি। তার আগে হারতে হয়নি, এ-ই যদি হয় দুই দলের সান্ত্বনা।

লিভারপুলের চোট সমস্যা। ফন ডাইক, থিয়াগো, ফাবিনিওর মতো খেলোয়াড়েরা চোটে। ওদিকে আক্রমণে দারুণ ছন্দে থাকা দিয়োগো জোতা হুমকি দিচ্ছিলেন সালাহ-মানে-ফিরমিনোর কোনো একজনের জায়গা কেড়ে নেওয়ার। সিটির বিপক্ষে ম্যাচে আজ তাই একাদশে বদল আনেন লিভারপুল কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপ।

পেনাল্টি থেকে সালাহর গোলে এগিয়ে যায় লিভারপুল।
ছবি: রয়টার্স

আলিসনের সামনে রক্ষণে ডানপাশে আলেক্সান্ডার-আরনল্ড, বাঁয়ে রবার্টসন তো ছিলেনই, সেন্টারব্যাকে জো গোমেজের সঙ্গে জুটি বাঁধেন চোট কাটিয়ে ফেরা জোয়েল মাতিপ। মাঝমাঠে ক্লপ রাখেন শুধু দুজনকে—হেন্ডারসন ও ভাইনালডাম। ৪-২-৩-১ ছকে এই দুজনের সামনে বাঁ পাশে সাদিও মানে, ডান পাশে জোতা, মাঝে রবার্তো ফিরমিনো আর সবার সামনে মো সালাহ।

গোলকিপার এদেরসনের সামনে সিটির ৪-৩-৩ ছকে চার ডিফেন্ডার হয়তো এই মৌসুমে গার্দিওলার সেরা রক্ষণ সমন্বয়ই—কাইল ওয়াকার, রুবেন দিয়াস, এমেরিক লাপোর্ত ও জোয়ান কানসেলো। মাঝমাঠে রদ্রির সামনে কেভিন ডি ব্রুইনা ও ইলকায় গুন্দোয়ান। আর আক্রমণে দুই পাশে ফেরান তোরেস ও রাহিম স্টার্লিং, সবার সামনে গাব্রিয়েল জেসুস।

জেসুস সমতায় ফেরান সিটিকে।
ছবি: রয়টার্স

সিটি-লিভারপুলের ম্যাচ কেন এই মুহূর্তে প্রিমিয়ার লিগে সবচেয়ে বড় আকর্ষণ, সেটির প্রমাণ দিয়ে গেল প্রথম ৪৫ মিনিট। দুই দলের প্রতিদ্বন্দ্বীতাটা এখন এমন, হয়তো ম্যাচটা আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে জমজমাট হবে, নতুবা হবে দুই কোচের কৌশলের যুদ্ধ।

আজ প্রথম ৪৫ মিনিট হলো জমজমাট লড়াই। ১১ মিনিটে নিজেদের বক্সে মানেকে ফাউল করেন সিটি ডিফেন্ডার ওয়াকার, পেনাল্টি পায় লিভারপুল। তা থেকে ক্লপের দলকে এগিয়ে নেন সালাহ। ২০১৭ সালে লিভারপুলে আসার পর থেকে এ নিয়ে লিগে ১১৬ ম্যাচে ৮১ গোল হলো মিশরীয় ফরোয়ার্ডের।

এরপর দুদলই দারুণ কিছু আক্রমণ করেছে, কিন্তু ৩১ মিনিটে ম্যাচে সমতা ফেরে জেসুসের এক ঝলকে।

১৯ পাসের দারুণ আক্রমণের শেষে লিভারপুলের বক্সের সামনে ডি ব্রুইনার পাস পান জেসুস। বল পেয়েই দারুণ এক স্পর্শে বল বের করে নিয়ে যান, বেরিয়ে যান গায়ের সঙ্গে লেগে থাকা লিভারপুল ডিফেন্ডার আলেক্সান্ডার-আরনল্ডকে ছিটকে ফেলে। মাতিপ ও আলেক্সান্ডার-আরনল্ড দুজনই তখন তাঁকে আটকাতে দৌড়ে আসেন, এর মধ্যে দিয়েই ডান পায়ের টোকায় বল জালে জড়ান জেসুস।

৪১ মিনিটে আসে ডি ব্রুইনার দুঃস্বপ্নের মুহূর্ত। তাঁর ক্রসই লিভারপুল বক্সে লিভারপুল ডিফেন্ডার জো গোমেজের হাতে লাগায় পেনাল্টি পায় সিটি, কিন্তু সেই পেনাল্টি নিতে গিয়ে বাইরে মারেন ডি ব্রুইনা। এর দুই মিনিট পরই ডি ব্রুইনার কষ্টটা আরও বেড়ে যাওয়ার জোগাড়। দারুণ পাল্টা আক্রমনে উঠে মানে-সালাহর সমন্বয়ের পর বল আসে উঠতে থাকা আলেক্সান্ডার-আরনল্ডের দিকে। তাঁর জোরাল শট ঠেকিয়ে দেন সিটি গোলকিপার এদেরসন।

দ্বিতীয়ার্ধ তুলনায় অনেক ম্যাড়মেড়েই হয়েছে। তবে এই অর্ধেও সবচেয়ে ভালো সুযোগটা পেয়েছিলেন জেসুস। কানসেলোর ক্রসে মাথা ছুঁইয়েছিলেন সিটির ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড, কিন্তু তাঁর হেড পোস্টের পাশ ঘেঁষে চলে যায়।
এ ম্যাচে হয়তো সমতাই ছিল দুই দলের প্রাপ্য!