পেনাল্টির জন্য প্রাণ কাঁদছে মেসিদের কোচের

ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে রেফারিং নিয়ে ক্ষোভ ঝেড়েছেন এই ডাচ কোচছবি : রয়টার্স

গোটা ম্যাচ যে বার্সেলোনা দুর্দান্ত খেলেছে, বলা যাবে না। প্রথমার্ধে রিয়াল মাদ্রিদ তাঁদের ওপর ছড়ি ঘোরালেও দ্বিতীয়ার্ধে বার্সেলোনা ঠিকই নিজেদের ছন্দ খুঁজে পেয়েছিল। কিন্তু তাতে লাভ হলো কোথায়? ঠিকই ২-১ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছেন ক্রুস-বেনজেমারা। আরেকটা গোল দিতে পারলে শূন্য হাতে নয়, বরং অন্তত একটা পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারতেন মেসিরা।

ম্যাচের শেষের দিকে না পাওয়া একটা পেনাল্টি নিয়ে তাই হাহাকার উঠেছে কাতালান শিবিরে। সে পেনাল্টিটা পেলে যে অন্তত এক পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়া যেত, শিরোপা দৌড়ে রিয়ালও এতটা এগিয়ে যেতে পারত না!

ম্যাচের ৮১ মিনিটে ফরাসি ফরোয়ার্ড উসমান দেম্বেলের জায়গায় মাঠে নামানো হয় ড্যানিশ স্ট্রাইকার মার্টিন ব্রাথওয়াইটকে। নেমেই একটা বিতর্কের কেন্দ্রে পড়ে যান তিনি। দুই মিনিট পরেই ডিবক্সে বার্সার স্প্যানিশ লেফটব্যাক জর্দি আলবা একটা ক্রস পাঠান, সেটা ধরতে গিয়ে রিয়ালের ফরাসি লেফটব্যাক ফারলাঁ মেন্দির সঙ্গে হালকা সংঘর্ষ বাধে ব্রাথওয়াইটের। ব্রাথওয়াইটের শার্ট টেনে ধরেন মেন্দি। পড়ে যান বার্সার স্ট্রাইকার। পেনাল্টির জন্য বার্সার খেলোয়াড়েরা আবেদন করলেও রেফারি হেসুস গিল মানজানো পাত্তা দেননি, এমনকি ভিএআরেরও সাহায্য নেওয়া হয়নি।

আর এতেই চটেছেন বার্সার কোচ রোনাল্ড কোমান। ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে সেটা নিয়েই ক্ষোভ ঝেড়েছেন এই ডাচ কোচ, ‘আপনি যদি বার্সেলোনা ভক্ত হয়ে থাকেন, তাহলে অবশ্যই ম্যাচে রেফারিং দেখে আপনার রাগ লাগবে, আপনি অখুশি হবেন।’

নিজেরাও যে খুব ভালো খেলেছেন গোটা ম্যাচ, সেটাও দাবি করেননি কোমান। কিন্তু তাই বলে তাঁদের পক্ষে দু-একটা সিদ্ধান্ত এলে রেফারি কেন বাঁশি বাজাবেন না, সেটা বোঝেননি এই কোচ, ‘আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, প্রথমার্ধে আমরা অনেক বাজে খেলেছি রক্ষণের দিক, আক্রমণের দিক দিয়েও। তবে দ্বিতীয়ার্ধে আমরা অনেক ভালো খেলেছি। রেফারিদের কাছে একটাই চাওয়া, অন্তত সিদ্ধান্তগুলো যেন তাঁরা ঠিকঠাক দেন। মেন্দি যেভাবে ব্রাথওয়াইটকে চ্যালেঞ্জ করল, সেটা নিঃসন্দেহে পেনাল্টি ছিল।’

এই ক্লাসিকোতেও গোল পাননি মেসি
ছবি : রয়টার্স

কোমানের ক্ষোভ যে শুধু পেনাল্টি নিয়ে, তা নয়। ম্যাচে যতটুকু অতিরিক্ত সময় যোগ করার কথা ছিল, তার থেকে অনেক কম সময় যোগ করা হয়েছে বলে মনে করেছেন এই কোচ, ‘আর আমার কাছে মনে হয়েছে, যোগ করা সময় মাত্র চার মিনিট দেওয়া অনেক কম হয়েছে। কারণ, রেফারি তো দুই থেকে তিন মিনিট খেলা বন্ধই রেখেছিলেন। পেনাল্টির ব্যাপারে আমার কোনো সন্দেহই নেই। এখন এটাই আমাদের মেনে নিতে হবে এবং চুপ করে থাকতে হবে।’

যে সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টির অবকাশ আছে, সে সিদ্ধান্তের জন্য ভিএআরের সাহায্য কেন নেওয়া হবে না, সেটা মাথায় ঢোকেনি কোমানের, ‘অবশ্যই খেলার মধ্যে রেফারি নিজের প্রভাব বিস্তার করতে চেয়েছিলেরন। সেটা না হলে ম্যাচের স্কোরলাইন ২-২ হতো। আমি বুঝতে পারছি না, স্পেনে ভিএআর কেন ব্যবহার করা হয়। ওই ঘটনাটা (ব্রাথওয়াইটের ওপর মেন্দির চ্যালেঞ্জ) সবাই দেখেছে। আমার চোখে এটা পরিষ্কার পেনাল্টি। বাকি সবাই দেখেছে।’

শুধু রেফারি নন, বরং ম্যাচের লাইন্সম্যানের উদ্দেশেও দু–চারটি কথা শুনিয়ে দিয়েছেন কোমান। একদম কাছাকাছি থাকার পরও লাইন্সম্যান রেফারিকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় সাহায্য করলেন না, কোমানের রাগ এটা নিয়েই, ‘আমি বুঝি না মাত্র ১০ মিটার দূরে থাকা লাইন্সম্যানও কীভাবে এটা না দেখে থাকতে পারেন। হয়তো রেফারি এ ঘটনা ঠিকঠাক দেখতে পাননি, কিন্তু এমন পরিস্থিতির জন্য তো আমাদের ভিএআর আছে। এটা নিয়ে আর কথা বলে কোনো লাভ হবে বলে মনে হয় না। আমার দলের মানসিকতা দুর্দান্ত ছিল। তাই পেনাল্টির মতো নাজুক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত দেওয়াই উচিত। এ সিদ্ধান্তে যে শুধু আমিই রেগে আছি, তা নয়। আমার খেলোয়াড়েরাও রেফারির এ সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ।’

ম্যাচ শেষে পিকেও ছিলেন ক্ষুব্ধ।
ছবি : টুইটার

ম্যাচের শেষে এ সিদ্ধান্ত নিয়ে বার্সেলোনার জেরার্দ পিকেকে দেখা যায় রেফারির সঙ্গে তর্কাতর্কি করছেন। ম্যাচ না খেললেও রেফারির সঙ্গে এ আচরণ করার ফলে হলুদ কার্ড দেখেছেন এই ডিফেন্ডার। হলুদ কার্ড দেখেছেন কোমান নিজেও। ডাগআউটে কোচ আর খেলোয়াড়দের রেফারির সঙ্গে এমন তর্কেই স্পষ্ট হয়, রেফারির সিদ্ধান্ত নিয়ে বার্সেলোনা কতটা বিরক্ত!