পেপেদের সামনে নিষ্প্রভ রোনালদো, হার জুভেন্টাসের

পেপের কাছে হেরে গেলেন রোনালদো।ছবি: রয়টার্স

পরশু পিএসজির কাছে হেরেছিল বার্সেলোনা। লিওনেল মেসিকে ম্লান মনে হয়েছিল কিলিয়ান এমবাপ্পের কাছে। মেসির পর এবার চ্যাম্পিয়নস লিগে হার দেখলেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোও। তবে তাঁর দল জুভেন্টাস হেরেছে তাদের চেয়ে শক্তিমত্তায় পিছিয়ে থাকা এফসি পোর্তোর কাছে। ২০০৪ সালে চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতার স্বাদ নেওয়া পোর্তো কাল রাতে প্রথমবারের মতো হারিয়ে দিয়েছে জুভেন্টাসকে।

ম্যাচে নিষ্প্রভ ছিলেন রোনালদো।
ছবি: রয়টার্স

২-১ গোলে হারের ম্যাচে জুভেন্টাস পিছিয়ে পড়ে ম্যাচ শুরুর এক মিনিট যেতে না যেতেই। মেহদি তারেমি চমক দেন জুভেন্টাসকে, একই সঙ্গে দর্শকদেরও। পোর্তো দ্বিতীয় গোলটিও পায় দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম মিনিটেই। এবার গোল করেন মুসা। ফেদেরিকো কিয়েসা ম্যাচের শেষ মুহূর্তে জুভেন্টাসে হতাশার মাত্রাই বাড়িয়েছেন একটি গোল ফেরত দিয়ে। তবে চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ আটে পৌঁছানোর আশাটা জুভেন্টাসের থেকে যাচ্ছে ওই গোলটির কারণেই।

রোনালদোকে কাল তেমন একটা খুঁজে পাওয়া যায়নি মাঠে। আর তিনি নিষ্প্রভ থাকলে কী হয়, সেটি জুভেন্টাস ভালোই বুঝেছে। পেপের নেতৃত্বে নিজ দেশের ক্লাব পোর্তোর রক্ষণ সৈনিকেরা পর্তুগিজ তারকাকে রীতিমতো বোতলবন্দী করেই রেখেছিলেন। ক্যারিয়ারের শুরুতে স্পোর্টিং লিসবনের হয়ে খেলার সময় পোর্তো ছিল রোনালদোর চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাব। সেই তাদের কাছেই কিনা জুভেন্টাসের হয়ে বন্দী হয়ে রইলেন তিনি!

পোর্তোর প্রথম গোলটি জুভেন্টাস রক্ষণের ভয়াবহ এক ভুল থেকেই। রদ্রিগো বেনতানকুরের ব্যাক পাসের লক্ষ্য ছিল গোলরক্ষক ভয়চেক সেজনি। কিন্তু মাঝখান দিয়ে মেহদি তারেমি বল ছোঁ মেরে নিয়ে গোল করে জুভেন্টাসকে হতভম্ব করে দেন।

হতভম্ব জুভেন্টাসের অবস্থা আরও সঙিন হতে পারত যদি না পোর্তোর সের্হিও অলিভিয়েরার একটি শট সেজনির বিপদমুক্ত না করতেন। পর্তুগিজ ক্লাবটির প্রেসিং ফুটবলের কাছে জুভেন্টাসকে অসহায় মনে হয়েছে বারবারই। ৩৪ মিনিটে অধিনায়ক জর্জো কিয়েলিনি চোট পেয়ে মাঠ ছাড়লে অসহায়ত্বের পরিমাণ বেড়েছে।

পোর্তো জিতেছে যোগ্যতর দল হিসেবেই।
ছবি: রয়টার্স

দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম মিনিটেই উইলসন মানাফার কাট ব্যাক ধরে গোল করেন মুসা মারেগা। এই অর্ধেই আরও একটি গোল হজম করতে পারত জুভেন্টাস। এবারও জুভেন্টাসের জন্য ত্রাণকর্তার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন গোলরক্ষক সেজনি। অলিভিয়েরার শট প্রতিহত করেন তিনি। শেষ ২০ মিনিটে জুভেন্টাসের খেলায় কিছুটা প্রাণ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বেশ কিছু আক্রমণে গোলের সুযোগ তৈরি করে তারা। গোল অবশ্য জুভেন্টাস একটা পায়। কিন্তু ততক্ষণে বড্ড দেরি হয়ে গেছে। তবে কিয়েসার গোলটি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। কে জানে এই গোলটিই হয়তো জুভেন্টাসের শেষ আটে পৌঁছাতে বড় ভূমিকা রাখবে। এখানে একটা তথ্য দেওয়া যেতে পারে, ২০১৮ সালের পর কিয়েসাই রোনালদোর বাইরে প্রথম জুভেন্টাস ফুটবলার, যিনি চ্যাম্পিয়নস লিগের নক আউট পর্যায়ে গোল করলেন। তিন বছর আগে শেষবার গোল করেছিলেন ব্লেইস মাতুইদি।

এই হারে স্বাভাবিকভাবেই প্রচণ্ড হতাশ জুভেন্টাস কোচ আন্দ্রেয়া পিরলো। তাঁর কথাতেই স্পষ্ট পোর্তো চমকে দিয়েছে তাদের, ‘আমরা প্রস্তুত হয়েই এসেছিলাম। কিন্তু ম্যাচে সেই প্রস্তুতি কাজে লাগেনি। মাঠে আমাদের সবকিছুই এলোমেলো লাগছিল। ম্যাচে যে ধরনের মানসিকতা দেখিয়েছে আমার খেলোয়াড়েরা, সেটি মোটেও প্রত্যাশিত নয়। বিশেষ করে ম্যাচের শুরুতেই গোল খেয়ে পিছিয়ে পড়ার পর। জানতাম, এই ম্যাচটা পোর্তো খুব ভালোভাবেই খেলতে চাইবে। তারা আমাদের খেলার জায়গা বন্ধ করে দেবে। কিন্তু আমরা যেন ম্যাচে সেই সুযোগটা পোর্তোকে খুব ভালো করে করে দিলাম।’