প্রযুক্তির কাটাছেঁড়া: নেইমারের জ্বলে ওঠার ম্যাচ

স্বরূপে ব্রাজিল
স্বরূপে ব্রাজিল
>ফুটবল মাঠে এখন কত ধরনের প্রযুক্তিরই না ব্যবহার হয়। এসবের সাহায্য নিয়ে চলে খেলার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ। প্রযুক্তি-সাহায্য নিয়ে প্রথম আলো ডিজিটালও বিশ্বকাপের বড় ও আলোচিত ম্যাচগুলো বিশ্লেষণ করে দেখছে। নতুন ধারাবাহিক ‘প্রযুক্তির চোখে’র একাদশ পর্বে থাকছে ব্রাজিল-মেক্সিকো ম্যাচের বিশ্লেষণ। লিখেছেন নিশাত আহমেদ

ব্রাজিলের মতো বড় দলের মূল তারকা হবার ‘অধিকার’ নেইমারের মতো ‘অভিনেতা’র নেই। ব্রাজিলের প্রত্যাশার চাপ সামলানোর ক্ষমতা নেইমারের নেই। যতটা না খেলেন, তার থেকে অনেক বেশি ‘ভান’ করেন। সব সময় নাকি তাঁর চেষ্টা থাকে রেফারির কাছ থেকে কোনোভাবে অন্যায় সুবিধা আদায় করে নেওয়ার—এমন কত অভিযোগই না তাঁর বিরুদ্ধে। কিন্তু কাল মেক্সিকোর বিপক্ষে বিশ্বকাপের দ্বিতীয় পর্বে এসে ফুটবল দুনিয়া দেখল এল নেইমারের অনেকটাই। ঝলসে ওঠার মঞ্চটা বেছে নিলেন ভাই—একেবারে যেদিন দরকার। সেই মঞ্চে দাঁড়িয়েই নিন্দুকদের মুখে দিলেন ছাই। নেইমার-দ্যুতিতে ফিকে হয়ে গেল জার্মানদের বধ করা মেক্সিকো। ব্রাজিলও অনায়াসেই উঠে গেল ২০১৮ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে। ঠিক কতটা ভালো খেলেছেন নেইমার? খালি চোখে পরিসংখ্যান আপনাকে বলবে দুটি গোলের মধ্যে একটি করেছেন তিনি। কিন্তু খেলা দেখলে আপনি বুঝতে পারবেন, ব্রাজিল–ভক্ত ও সমর্থকেরা যেভাবে নেইমারকে দেখতে চান মাঠের মধ্যে, ঠিক সেভাবেই খেলেছেন তিনি। ফিলিপে কুতিনহো কাল যে খানিকটা নিষ্প্রভ ছিলেন. সেটি বুঝতেই দেননি নেইমার। গোটা ম্যাচে মেক্সিকোর খেলোয়াড়েরা ৬ বার ফাউল করেছেন নেইমারকে, এই কড়া মার্কিংয়ের মধ্যে থেকেও ৭০ বার বলে স্পর্শ করে সফল পাস দেওয়ার হারটাকে ৮১ শতাংশতে রেখেছেন তিনি। গোলে সহায়তা করার জন্য ‘কি পাস’ দিয়েছেন গুনে গুনে পাঁচটা! গোল করার জন্য শটই নিয়েছেন সাতটা, গোলপোস্ট বরাবর ছিল এর চারটা! নেইমারসহ বাকি খেলোয়াড়দের পরিসংখ্যান দেখে নিন এখান থেকে-

পুরো টুর্নামেন্টে ফর্মে থাকা কুতিনহো কালই একটু ম্রিয়মাণ ছিলেন। প্লেমেকার হিসেবে খেলা কুতিনহো ৮৬ মিনিট মাঠে থেকে বল স্পর্শই করতে পেরেছেন মাত্র ৪৭ বার। গোল সহায়তা করার জন্য ‘কি পাস’ দিয়েছেন মাত্র ১ বার। তাঁর জায়গায় ৮৬ মিনিটে মাঠে নেমে ফিরমিনো ৯৫ সেকেন্ডের মধ্যেই গোল দিয়েছেন, কোচ তিতের চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন, কেন তিনি জেসুসের জায়গায় পরের ম্যাচে সুযোগ পাবেন না! ম্যাচে ব্রাজিলের গোল দুটি দেখে নিন-

রক্ষণাত্মক মিডফিল্ডার হিসেবে রক্ষণের ঢাল হিসেবে থাকার কাজটা যথারীতি বেশ ভালো করেছেন কাসেমিরো। দুর্ভাগ্যবশত দুটি হলুদ কার্ড হয়ে যাওয়ায় বেলজিয়ামের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালটা খেলতে পারবেন না তিনি। এই একটা খবরই ব্রাজিলের কোচ তিতের কপালে চিন্তার ভাঁজ আনার জন্য যথেষ্ট। ওদিকে প্রথমার্ধে বিরক্তিকর খেলার পরে দ্বিতীয়ার্ধে স্বমহিমায় ফিরে আসেন উইলিয়ান, মাঠের ডানদিকটাকে একেবারে নিজের করে নিয়েছিলেন যেন তিনি। উইলিয়ান-কাসেমিরোসহ অন্য খেলোয়াড়েরা মাঠের কোন কোন জায়গায় ছিলেন, তা হিটম্যাপ ও টাচম্যাপে দেখে নিন -

স্বরূপে ফিরছে ব্রাজিল। স্বরূপে ফিরছেন নেইমার। ব্রাজিলের প্রতিপক্ষদের রাতের ঘুম হারাম হওয়াটাই স্বাভাবিক।