প্রিয় পানীয়তে চুমুক দিতে আড়াই বছর অপেক্ষা করেছেন মেসি

লিগে বার্সেলোনার প্রথম ম্যাচে ভিয়ারিয়ালের বিপক্ষে মেসিছবি: এএফপি

ক্যারিয়ারের প্রয়োজনে লিওনেল মেসির খাবারের অভ্যাসে বদল আনার ঘটনা বছর দুয়েক আগেও ঘটেছে। তখন মেসি ভুগতেন অদ্ভুত এক সমস্যায়। ম্যাচের মধ্যে অনেক সময়ই দেখা গেছে, মেসি বমি করছেন। পরে জানা গেল, বয়স যখন ২২-২৩ ছিল, তখন প্রচুর চকলেট, পিৎজা, বিস্কুট আর কোমল পানীয় খেতেন মেসি। সে কারণেই পেটে এমন সমস্যা হতো।


সে কারণে ২০১৮ সালে ইতালিয়ান এক পুষ্টিবিদের পরামর্শে মেসি এসব খাবার বাদ দেন। ‘২২-২৩ বছর বয়সে চকলেট, আলফাহোরেস (দক্ষিণ আমেরিকান বিস্কুট), কোমল পানীয়...এসব বেশি খেতাম। এখন আমি খাবার-দাবারে বদল এনেছি, মাছ, মাংস, সবজি, সালাদ খাই’—২০১৮ সালে বলেছিলেন মেসি।

এখন দেখা যাচ্ছে, প্রয়োজনে পছন্দের খাবারও বাদ দেওয়ার এই অভ্যাস মেসির আরও পুরোনো। ক্যারিয়ারে একেবারে শুরুর দিকে শুধু আর্জেন্টিনা জাতীয় দলে ডাক পেতে আড়াই বছর নিজের পছন্দের পানীয় কোকাকোলা খাননি মেসি, এমনটাই জানাচ্ছেন তাঁর সাবেক মুখপাত্র ফাবিয়ান সোলদিনি।


মেসি তখনো টিনএজার (১৩-১৯ বছর বয়স), বার্সেলোনার যুবদলে নাম কুড়িয়েছেন। স্পেন নাকি আর্জেন্টিনা—জাতীয় দল কোনটি হবে, তা নিয়ে টানাটানি। স্পেন তাঁকে চায়, কিন্তু মেসি অপেক্ষায় ছিলেন আর্জেন্টিনার ডাক পাওয়ার। সে ডাক আর আসে না, বার্সেলোনায় তাঁর নাম তখন আস্তে আস্তে ছড়াতে শুরু করেছে, তাঁর প্রতিভা যে অনেক দূরে যাওয়ার তেমন কথাও শুরু হয়েছে, কিন্তু দেশের যুবদলের জার্সি গায়ে চাপানোর সুযোগ আর আসছিল না।

আর্জেন্টিনার হয়ে যা অর্জন বয়সভিত্তিক দলেই, তার একটি ২০০৫ অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপ জয়ের উদ্‌যাপনে মেসি
ছবি: ফিফাডটকম

কেন, সেটি এত দিন পর নতুন করে জানালেন সোলদিনি। বার্সেলোনার যুবদলের হয়ে মেসি যে দলগুলোর বিপক্ষে খেলতেন, সেগুলোকে নাকি তেমন শক্তিশালী মনে হয়নি আর্জেন্টিনার নির্বাচকদের কাছে। ‘আর্জেন্টিনার যুবদল থেকে মেসিকে ডাকা হয়নি, কারণ ওরা ভেবেছিল স্পেনে (মেসিকে) তেমন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হয় না। আর্জেন্টিনায় একজন খেলোয়াড় রিভারপ্লেট, নিওয়েলস ওল্ড বয়েজে খেলত, আর বার্সেলোনায় (যুবদলে) ইয়েইদার মতো দলের বিপক্ষে খেলত, সব সময় ৫-০ গোলে জিতত’—বলছিলেন সোলদিনি।


সে সময় মেসিকে নিয়ে স্পেনে অনেক আগ্রহ থাকলেও মেসির মনে যে শুধু আর্জেন্টিনার আকাশি-সাদা জার্সিটাই ছিল, তা-ও আরেকবার নিশ্চিত করলেন সোলদিনি, ‘সে সময় স্পেন (যুবদল) ওকে ডেকেছিল। কিন্তু লিও সব সময় আর্জেন্টিনার হয়েই খেলতে চেয়েছে।’ কিন্তু আর্জেন্টিনা দল থেকে ডাক আসছিল না দেখে মেসিকে নতুন এক চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন সোলদিনি। সেই চ্যালেঞ্জেই জড়িয়ে মেসির এক অভ্যাস বদলের গল্প।

এখন মেসির বড় স্পনসরদের একটি পেপসি। ফিটনেস ঠিক রাখতে এখন মেসি কোমল পানীয় তেমন খান না। কিন্তু কৈশোর পেরিয়ে তারুণ্যের দিকে ছুটে চলার সে বয়সে মেসির খুব ভালো লাগত কোকা-কোলা খেতে। সেটি নিয়েই চ্যালেঞ্জটা দিয়েছিলেন সোলদিনি, ‘লিওকে একটা চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলাম আমরা। সেটি এই যে, আর্জেন্টিনা জাতীয় দল (যুবদল) থেকে ডাক আসার আগ পর্যন্ত ও একটা কোকা-কোলাও খাবে না! এরপর একটা কোকা-কোলার জন্য দুই থেকে আড়াই বছর অপেক্ষা করতে হয়েছিল আমাদের।’


এতে দুই দিক থেকেই অবশ্য লাভ হয়েছে মেসির। একে তো কোমল পানীয় ছেড়ে দেওয়ায় ফিটনেসের উন্নতি হয়েছে, তারওপর আর্জেন্টিনার যুবদলে ডাক পাওয়ার পিপাসাও আরও বেড়েছে মেসির। সোলদিনিও তা-ই বলছিলেন, ‘ওই চ্যালেঞ্জটা আমি দিয়েছিলাম কারণ ওর খুব পছন্দের ছিল ওটা (কোকা-কোলা), আর ওর পুষ্টির ব্যাপারটা নিয়েও ঝামেলা ছিল। আমরা এক ঢিলে দুই পাখি মেরেছি।’