প্রেমিকা পাশে থাকায় মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এলেন এই ফুটবলার
ইংলিশ ফুটবলে অ্যাডাম ডড তেমন পরিচিত কোনো নাম নয়। নর্দান প্রিমিয়ার লিগের আধা–পেশাদার দল ইউনাইটেড অব ম্যানচেস্টারের ডিফেন্ডার তিনি।
ইংলিশ ফুটবলে সপ্তম স্তরের লিগে খেলা অ্যাডাম ডড জানিয়েছেন, ৩ জুন রাতে হার্ট অ্যাটাকের শিকার হয়েছিলেন। প্রেমিকা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ায় বেঁচে গেছেন ডড।
নর্দান প্রিমিয়ার লিগেরই দল ব্যাম্বার ব্রিজ থেকে ২০১৯ সালে ইউনাইটেড অব ম্যানচেস্টারে নাম লেখান ডড। তারপর থেকেই ক্লাবটির সমর্থকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন ২৯ বছর বয়সী এই ফুলব্যাক।
ইউনাইটেড অব ম্যানচেস্টারের সমর্থকদের প্রতি এক খোলা চিঠিতে এ ফুটবলার জানিয়েছেন, সেদিন তাঁর প্রেমিকা ও চিকিৎসক দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়াতেই প্রাণে বেঁচে যান। চিকিৎসক তাঁকে খুব দ্রুত স্বয়ংক্রিয় ডিফিব্রিলেটর দেওয়ায় গত ইউরোয় ডেনিশ তারকা ক্রিস্টিয়ান এরিকসেনের মতো বেঁচে যান ডড।
চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ‘৩ জুন আমার জীবন ওলট–পালট হয়ে গিয়েছিল। আমার প্রেমিকা আমার সঙ্গেই ঘুমিয়েছিল। কয়েক ঘণ্টা পর আমি হার্ট অ্যাটাকে কাতরানোর সময় সে জেগে ওঠে। আমার হৃৎপিণ্ড থেমে গিয়েছিল এবং মারা যাচ্ছিলাম। শ্বাস নিতে পারছিলাম না। সে (প্রেমিকা) এটা বুঝে জরুরি চিকিৎসাসেবার জন্য ফোন করে এবং কৃত্রিম উপায়ে শ্বাস–প্রশ্বাস প্রবাহের (সিপিআর) ব্যবস্থা করে। অ্যাম্বুলেন্স এসেছে ১৬ মিনিট পর। সিপিআর না পেলে আমি মারাও যেতে পারতাম কিংবা মস্তিষ্ক অচল হয়ে যেত। হার্ট অ্যাটাকের পর হাসপাতালের বাইরে বাঁচার সম্ভাবনা শতকরা ৩ ভাগ।’
ডড এরপর লিখেছেন, ‘অ্যাম্বুলেন্স আসার পর আমাকে ডিফিব্রিলেটর দিয়ে শক দেওয়া হয় এবং এভাবে কিছুক্ষণ চেষ্টার পর হৃৎপিণ্ড সচল হয়। আমাকে ব্লাকপুল হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে রাখা হয়। সেখানে কোমা থেকে চার দিন পর চেতনা ফিরে পাই। চিকিৎসকেরা ভেবেছিলেন আমার মস্তিষ্ক অচল হয়ে যেতে পারে, আমি আর জেগে উঠব কি না, সে বিষয়েও তারা নিশ্চিত ছিলেন না। কী দুঃস্বপ্নের মতো সময়ই না কেটেছে আমার প্রেমিকার। সে নিশ্চিত ছিল না, আমি আর কখনো জেগে উঠব কি না, কিংবা চেতনা ফিরে পেলেও মস্তিষ্ক অচল হয়ে যাওয়ার ভয় ছিল।’
হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত কাউকে সিপিআর কীভাবে দিতে হয়, সে বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে এখন কাজ করতে চান অ্যাডাম ডড। এখন সুস্থ হয়ে ওঠার প্রক্রিয়ার মধ্যে আছেন এই ফুটবলার। পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠার আগ পর্যন্ত মাঠে নামতে পারবেন না তিনি। প্রাণ ফিরে পেয়ে সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন ডড।
ইউনাইটেড অব ম্যানচেস্টারের কোচ নিল রেনল্ডস জানিয়েছেন, ডডের বুকে ইমপ্ল্যানটেবল কার্ডিওভার্টার ডেফিব্রিলেটর (আইসিডি) বসানো হয়েছে। এটি ছোট ইলেকট্রনিক ডিভাইস, পেসমেকারের মতো, যা হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা জাগলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে শক দিয়ে হৃৎস্পন্দন স্বাভাবিক রাখার কাজ করে। এই একই যন্ত্র এরিকসেনের বুকেও বসানো হয়েছে।
গত ইউরোয় মাঠেই হার্ট অ্যাটাকের শিকার হন এরিকসেন। তাঁর জাতীয় দলের সতীর্থরা ও চিকিৎসকদের চেষ্টায় মাঠেই প্রাথমিক বিপদ কাটার পর হাসপাতালে সুস্থ হয়ে ওঠেন এরিকসেন। বুকে আইসিডিও বসানো হয়। গত মৌসুমে তিনি খেলেছেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের দল ব্রেন্টফোর্ডে। এখন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, টটেনহামের মতো দল এরিকসেনকে দলে নেওয়ার জন্য আগ্রহী।