কে জিতবে ইউরো? প্রশ্নটা আসলেই প্রায় এক শ কোটি টাকার। ইউরোর চ্যাম্পিয়ন দল ১ কোটি ইউরো পাবে, বাংলাদেশি মুদ্রায় সেটা তো প্রায় এক শ কোটি টাকাই। সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা শুরু হবে ১১ জুন, শেষ ১১ জুলাই। ইউরোতে অংশ নিতে যাওয়া ২৪টি দলের খুঁটিনাটি জেনে নিলে এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা সহজ হতে পারে আপনার জন্য।
ফিনল্যান্ডে যাঁরা ফুটবল নিয়ে তেমন একটা খোঁজখবর রাখেন না, সেদিন বাড়ির পাশের রাস্তায় মানুষদের উদ্যাপন দেখে হয়তো ভেবেছিলেন, দেশটার আইস হকি দল আবারও কোনো শিরোপা জিতল-টিতল বুঝি! সেটা ভাবাই স্বাভাবিক। আইস হকিতে ফিনল্যান্ড দুর্দান্ত, বিশ্বের অন্যতম সেরা। তবে ২০১৯ সালের ১৫ নভেম্বরে ফিনল্যান্ডের ফুটবলপ্রেমীদের ওই উচ্ছ্বাসটা আইস হকি নিয়ে ছিল না। ছিল ফুটবল নিয়েই। দেশের জাতীয় ফুটবল দল প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক কোনো টুর্নামেন্টে খেলতে যাচ্ছে, উচ্ছ্বাস সে কারণেই।
ফুটবলকে ফিনল্যান্ড ইয়ারি লিতামানেন, সামি হুপিয়ার মতো দারুণ কয়েকজন খেলোয়াড় উপহার দিলেও, দলগত সাফল্য আসলে শূন্যই ছিল এত দিন। এবার ইউরোতে সুযোগ পেয়ে ফিনল্যান্ড আসলে নিজেদের ফুটবল ইতিহাসেই একটা নতুন অধ্যায় লিখেছে।
দল: ফিনল্যান্ড
ফিফা র্যাঙ্কিং: ৫৪
যাঁরা আছেন দলে
গোলরক্ষক
লুকাশ রাডেকি (বায়ার লেভারকুসেন), জেসি ইয়োরোনেন (ব্রেসিয়া), আনসি ইয়াক্কোলা (ব্রিস্টল রোভার্স)
সেন্টারব্যাক
পলোস আরাইউরি (পাফোস), লিও ভাইসানেন (এলফসবোর্গ), সলি ভাইসানেন (কিয়েভো ভেরোনা), ড্যানিয়েল ওশাগনেসি (এইচজেকে হেলসিঙ্কি), ইয়ুনা তোইভিও (হাকেন), রবার্ট ইভানোভ (ওয়ার্তা পোজনান)
রাইটব্যাক/রাইট উইংব্যাক
নিকোলাই আলহো (এমটিকে বুদাপেস্ট)
লেফটব্যাক/লেফট উইংব্যাক
ইয়েরে ইউরোনেন (গেঙ্ক), ইয়ুক্কা রাইতালা (মিনেসোটা ইউনাইটেড), পিরির সোইরি (এসবিয়ার্গ)
সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার/ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার
টিম স্পার্ভ (এইএল), গ্লেন কামারা (রেঞ্জার্স), ইয়োনি কাউকো (এসবিয়ার্গ), রাসমাস শুলার (জুরগার্ডেন), থমাস লাম (জুয়োল)
অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার
ফ্রেডরিখ ইয়েনসেন (অগসবুর্গ), ওনি ভালাকারি (পাফোস)
উইঙ্গার/ওয়াইড মিডফিল্ডার
রবিন লোদ (মিনেসোটা ইউনাইটেড), রবার্ট টেলর (ব্রান), লাসি লাপালাইলেন (মন্ট্রিল)
স্ট্রাইকার
টিমু পুক্কি (নরউইচ সিটি), মার্কাস ফর্স (ব্রেন্টফোর্ড), জোয়েল পোহইয়ানপালো (উনিয়ন বার্লিন)
কোচ
মার্কু কানেরভা
অধিনায়ক
টিম স্পার্ভ
ইউরোতে সেরা সাফল্য
এবারই প্রথম
গ্রুপে প্রতিপক্ষ
ডেনমার্ক (১২ জুন)
রাশিয়া (১৬ জুন)
বেলজিয়াম (২১ জুন)
শক্তি
দলের সবচেয়ে বড় তারকা আসলে স্ট্রাইকার টিমু পুক্কি। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে গত মৌসুমে নরউইচ সিটির হয়ে দারুণ খেলেছেন পুক্কি। বেশ আঁটসাঁট রক্ষণ নিয়ে খেলে ফিনল্যান্ড। আরাইউরি, ভাইসানেন, তোইভিওর মতো ডিফেন্ডাররা দীর্ঘদেহী ও শক্তিশালী, তাই সেটপিসে তাঁদের হারানো কঠিন।
বল পায়ে রেঞ্জার্সের মিডফিল্ডার গ্লেন কামারার চাতুর্য চিন্তার কারণ হতে পারে গ্রুপের প্রতিপক্ষ রাশিয়া ও ডেনমার্কের। কামারার দুই মিডফিল্ড সঙ্গীর কাজ হবে (অধিনায়ক স্পার্ভ ও কাউকো হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি) পর্যাপ্ত পরিমাণ ট্যাকল ও প্রেস করা, যাতে কামারার খেলা গড়ে দিতে সমস্যা না হয়। বুন্দেসলিগার অন্যতম সেরা গোলরক্ষক লুকাশ রাডেকির মুভমেন্ট, রিফ্লেক্স ও দুর্দান্ত শট থামানোর ক্ষমতা ফিনল্যান্ডকে দু-এক পয়েন্ট এনেও দিতে পারে।
দুর্বলতা
দলের মূল স্ট্রাইকার টিমু পুক্কির ওপর অতিনির্ভরতা ডোবাতে পারে ফিনল্যান্ডকে। অগসবুর্গের অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার ফ্রেডরিখ ইয়ানসেনও গোলের খোঁজে থাকেন। তবে পুক্কিকে প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগ আটকে ফেললে ইয়ানসেনরা গোল বের করে আনতে পারেন কি না, সেটাই দেখার অপেক্ষা। নিজেদের দেশের বাইরে ফিনল্যান্ড খুব বেশি জেতেনি। বড় ম্যাচ খেলারও তেমন অভিজ্ঞতা নেই দলটার।
সম্ভাব্য একাদশ ও খেলার কৌশল (৫-৩-২/৪-৪-২)
কোচ কানেরভা মূলত দুই ধরনের ছকে খেলান দলকে। নিজেদের চেয়ে দুর্বল দলের বিপক্ষে খেললে ৪-৪-২ ছকে খেলে ফিনল্যান্ড, কিন্তু নিজেদের চেয়ে শক্তিশালী দলের বিপক্ষে খেললে রক্ষণে আরও একজন বাড়িয়ে ছকটাকে ৫-৩-২ করে ফেলেন তিনি। এবার ইউরোতে ফিনল্যান্ডের গ্রুপসঙ্গী তিন দলই মোটামুটি শক্তিশালী, তাই বলা যায় ৫-৩-২ ছকেই খেলবে দলটা।
দলের সবচেয়ে বড় তারকা টিমু পুক্কি সাধারণত একজন সঙ্গী নিয়েই খেলতে পছন্দ করেন। এ জায়গায় অগসবুর্গের ফ্রেডরিখ ইয়ানসেনের খেলার সম্ভাবনাই সবচেয়ে বেশি, নেশনস লিগে দেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি গোল করেছেন তিনি।
গোলকিপার হিসেবে বায়ার লেভারকুসেনের লুকাশ রডেকির জায়গা পাকা। নিকোলাই আলহোকে দেওয়া হতে পারে রাইট উইংব্যাকের ভূমিকা। লেফট উইংব্যাক ও লেফট সেন্টারব্যাক হিসেবে খেলার জন্য বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় আছেন এই দলে—ওশাগনেসি, সোইরি, ইউরোনেন, রাইতালা। এই চারজনের মধ্যে যেকোনো দুজন এই দুই ভূমিকায় খেলবেন। ওশাগনেসি ও ইউরোনেনের সম্ভাবনাই বেশি। রক্ষণভাগের বাকি দুই খেলোয়াড় হিসেবে আরাইউরি ও তোইভিও খেলতে পারেন।
ফিনল্যান্ডের মাঝমাঠ বেশ পরিশ্রম করে খেলতে পছন্দ করে। মাঝমাঠের তিনজনের মধ্যে রেঞ্জার্সের হয়ে সদ্য লিগজয়ী গ্লেন কামারা ও অধিনায়ক টিম স্পার্ভের জায়গা পাকা। এখন কোচ কানেরভা দলকে রক্ষণাত্মক খেলাতে চান না আক্রমণাত্মক, সেটার ওপর নির্ভর করে মাঝমাঠের বাকি খেলোয়াড়কে একাদশে নেওয়া হবে। রক্ষণাত্মক খেলতে চাইলে ইয়োনি কাউকো। আর আক্রমণাত্মক খেলতে চাইলে রবার্ট টেলর বা রাসমাস শুলারের দিকে নজর পড়তে পারে কোচের।
একটা প্রজন্মের স্বপ্ন অবশেষে বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক কোনো প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া বহু বছর ধরে আমাদের লক্ষ্য ছিল। আমরা আপাতত ম্যাচ ধরে ধরে এগোতে চাই
প্রত্যাশা ও বাস্তবতা
ডেনমার্ক ও বেলজিয়ামের সঙ্গে পেরে ওঠা মুশকিল। রাশিয়ার বিপক্ষেই হয়তো কিছুটা লড়াই করতে পারে ফিনল্যান্ড। কিছুদিন আগেই বিশ্বকাপজয়ী ফ্রান্সকে প্রীতি ম্যাচে ১-০ গোলে হারানো ফিনিশরা গ্রুপপর্বে অন্তত একটা অঘটন তো ঘটাতে চাইবেই।