ফুটবল টিকিয়ে রাখতে ঘুম কম হচ্ছে তাঁদের

উয়েফা সভাপতি আলেক্সান্দর সেফেরিন।
ফাইল ছবি: এএফপি

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এমন কঠিন সময় আর পার করেনি ফুটবল। বৈশ্বিক মহামারি থামিয়ে দিয়েছিল সব টুর্নামেন্ট। ইউরো ও কোপা আমেরিকার মতো টুর্নামেন্ট আয়োজন পেছাতে হয়েছে। আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি থেকে বাঁচতে আবার মাঠে ফুটবল ফিরলেও এখনো অনেক দেশেই দর্শক ফেরেননি গ্যালারিতে।

করোনার ধাক্কা সামলাতে গিয়ে অনেক ক্লাবেরই পথে বসার দশা। বার্সেলোনার মতো ক্লাবই সংকটে পড়েছে। জার্মানিতে বুন্দেসলিগার প্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাবগুলোর টিকে থাকা নিশ্চিত করতে হয়েছে বায়ার্ন মিউনিখ ও বরুসিয়া ডর্টমুন্ডকে। বহু বছর পর দলবদলের বাজারে কোনো নিষেধাজ্ঞা ছাড়াই খেলোয়াড় কেনায় আগ্রহ দেখায়নি রিয়াল মাদ্রিদ।

এই আর্থিক দুর্দশা কাটাতে নতুন এক সুপার লিগ আয়োজনের সম্ভাবনার কথা বলেছেন রিয়াল সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ। শীর্ষ পাঁচ লিগ থেকে বাছাই করা কিছু দল নিয়ে বিশেষ এক টুর্নামেন্ট চালু করতে আগ্রহী পেরেজ। এতে বড় দলগুলো লাভবান হলেও ছোট দলগুলো বিপাকে পড়বে। রিয়াল সভাপতির এ উদ্যোগে ক্ষিপ্ত ইউরোপিয়ান ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা উয়েফা। তাদের দাবি, ফুটবল টিকিয়ে রাখতে তাদের পরিশ্রমকে নষ্ট করবে রিয়াল সভাপতির এ চেষ্টা।

পেরেজের স্বপ্ন সত্যি হলে বাছাই করা ১৬ দল মিলে একটি লিগ খেলবে। সেরা দলগুলো থাকবে বলে স্পনসরদের কাছ থেকে ভালোই আয় করবে এ দলগুলো। এমন এক লিগের পক্ষে সায় জানিয়েছিলেন বার্সেলোনার সাবেক সভাপতি জোসেপ মারিয়া বার্তোমেউও। বায়ার্ন মিউনিখও এমন এক লিগে যোগ দিতে আগ্রহী, এমনটা শোনা গিয়েছিল কয়েক বছর আগে। কিন্তু এ লিগ চালু হওয়া মানেই চ্যাম্পিয়নস লিগ ও সেখান থেকে প্রাপ্ত অর্থে টিকে থাকা ক্লাবগুলোর সর্বনাশ।

উয়েফা সভাপতি আলেক্সান্দর সেফেরিন তাই তোপ দাগলেন পেরেজের দিকে। স্লোভেনিয়ান এক টিভি শো-এর সঙ্গে সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘গত ৩০ বছর ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ এ স্বপ্ন দেখছেন। বার্সেলোনার সভাপতি পদের প্রধান দুই প্রার্থী প্রকাশ্যেই এই সুপার লিগের বিপক্ষে কথা বলেছে। বায়ার্ন, জুভেন্টাস ও ইংলিশ ক্লাবগুলোও এর বিপক্ষে। তিনি (পেরেজ) শুধু আজ বা আগামীকালের ফুটবলে কী হবে সেটা চিন্তা করেন, কিন্তু ভবিষ্যতের কথা ভাবেন না।’ শুধু সেফেরিন নন, এভাবে বিদ্রোহী এক লিগ চালু করার চেষ্টা নিয়ে এর আগে পেরেজকে কথা শুনিয়েছেন লা লিগা সভাপতি হাভিয়ের তেবাসও।

ইউরোপিয়ান সুপার লিগের কথা তুলে সমালোচিত হচ্ছেন পেরেজ।
ছবি: টুইটার

পেরেজের এ লিগ নিয়ে কথা বলতে নন, সেফেরিন আপাতত চ্যাম্পিয়নস লিগকে সফল করতেই আগ্রহী। ইউরোপে আবার করোনার প্রকোপ বেড়েছে। এর মধ্যে ফেব্রুয়ারি থেকে আবার চ্যাম্পিয়নস লিগ শুরু করা যাবে কি না, প্রশ্ন উঠছে। কারণ, অনেক দেশই সীমানা বন্ধ করার চিন্তাভাবনা করছে। সেফেরিন অবশ্য সফলভাবে শুধু টুর্নামেন্ট শেষ করাই নয়, বরাবরের মতো দর্শকপূর্ণ মাঠেই ফাইনাল খেলতে আগ্রহী।

ফুটবলে টিকিয়ে রাখতে উয়েফা কত কষ্ট করছে সেটাও জানালেন সেফেরিন, ‘খুব একটা ঘুমাই না আমরা। রাত দিন কাজ করি। বিভিন্ন দেশের সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করি। ফুটবলের চেয়ে স্বাস্থ্য নিয়েই বেশি কথা বলি।’ সে চেষ্টার ফল স্টেডিয়ামভর্তি মানুষ নিয়েই উপভোগ করতে চান উয়েফা সভাপতি, ‘আমরা প্রথমে দেখতে চাই টিকা কত দ্রুত পাওয়া যাচ্ছে। এটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটাও দেখতে হবে। প্রতিবছরের মতোই (দর্শকপূর্ণ) এবারের ফাইনালের জন্য প্রস্তুত হচ্ছি আমরা।’
এ বছর ইস্তাম্বুলে হবে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনাল। সবকিছু ঠিক থাকলে ২৯ মে আতাতুর্ক অলিম্পিক স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে ইউরোপের ক্লাব ফুটবলে সবচেয়ে আকর্ষণীয় টুর্নামেন্টের ফাইনাল।