ফুটবল সাইকেল চালানোর মতো সহজ নয়

লিভারপুলের কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপ।ছবি: এএফপি

এটা কী সেই লিভারপুল? গত মৌসুমে যারা ইয়ুর্গেন ক্লপের দলের খেলা দেখেছেন, তাঁরা কাল নতুন মৌসুমের লিভারপুলের প্রথম ম্যাচ দেখে থাকলে প্রশ্নটি তুললে অবাক হওয়ার কিছু নেই।

এই তো মাস দুই আগে সাত ম্যাচ হাতে রেখে প্রিমিয়ার লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে লিভারপুল। ইংল্যান্ডের শীর্ষ ফুটবলে যা রেকর্ড। ঘরের মাঠে টানা ২৩ জয়ের রেকর্ডও গড়েছিল মোহামেদ সালাহরা। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন হিসেবে মৌসুমের প্রথম ম্যাচে কাল তারা নিজেদের মাঠে খেলেছে গত মৌসুমে চ্যাম্পিয়নশিপ লিগ জিতে প্রিমিয়ার লিগে উঠে আসা লিডস ইউনাইটেডের বিপক্ষে। বলতে গেলে কানের পাশ দিয়ে গুলি গেছে লিভারপুলের! ড্র করতে করতে শেষ মুহূর্তের পেনাল্টিতে ৪-৩ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে লিভারপুল।

গত মৌসুমের পারফরম্যান্সের বিচারে স্বাভাবিকভাবে অনেকেই ধরেই নিয়েছিল প্রত্যাশিত জয় পাবে লিভারপুল। তা পেয়েছে বটে ইয়ুর্গেন ক্লপের দল। কিন্তু বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের স্তব্ধ করে দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েই এসেছিল মার্সেলো বিয়েলসার দল। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আটকে রাখা গেল না, এই যা। দুই মৌসুম আগে লিডসের ডাগআউটে আসা বিয়েলসাকে গার্দিওলা-পচেত্তিনোরা গুরু মানেন। ৬৫ বছর বয়সী আর্জেন্টাইন কোচের দর্শন আবার গার্দিওলা-ক্লপের মতোই। প্রতিপক্ষকে তাদেরই অর্ধে প্রেসিং, ৯০ মিনিটজুড়ে মাঠের এ মাথা-ও মাথা দৌড়ে যাওয়া, ছোট ছোট পাসে আক্রমণাত্মক ফুটবল...বিয়েলসার লিডস বুঝিয়ে দিল, বড় মঞ্চেও তারা বদলাবে না।

দুই দল মিলিয়ে ৭ গোলের রোমাঞ্চ আর শেষ পর্যন্ত জয়ী দলের কোচের কাছে ম্যাচটি উপভোগ্যই হওয়ার কথা। সেটাও জানিয়েছেন ক্লপ, ‘কী যে খেলা হলো! দারুণ এক প্রতিপক্ষ! দুই দলের পারফরম্যান্সই ছিল দারুণ। দর্শকদের জন্য উপভোগ্য ম্যাচ। আমার ভালো লেগেছে।’

কিন্তু লিভারপুল ভক্তদের কিছুটা দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে দলের এভাবে তিন গোল খাওয়া। যতই চ্যাম্পিয়ন হয়ে আসুক, লিডস এসেছে দ্বিতীয় বিভাগ থেকেই! এমন দলের কাছে ৩ গোল খাওয়া তো হতাশাজনকই। তার মধ্যে লিডসের দ্বিতীয় গোলটি হয়েছে লিভারপুল রক্ষণের প্রাণ ভার্জিল ফন ডাইকের বিরল ভুলে। তবে খেলোয়াড়দের দোষ না দিয়ে বাস্তবতায় চোখ রাখছেন ক্লপ, ‘এক ম্যাচে এতগুলো গোল সাধারণত দেখা যায় না। রক্ষণভাগে আমাদের কিছুটা উন্নতি করতে হবে। তবে প্রথম ম্যাচে যা হয়েছে তা অস্বাভাবিক কিছু নয়। আমাদের খেলোয়াড়েরা কিছুদিন আগে জাতীয় দলের হয়ে খেলে এসেছে, তাই এটা হতেই পারে।’

ফুটবল খেলাকে সাইকেল চালানোর সঙ্গেও তুলনা করেছেন ক্লপ। একবার সাইকেল চালানো শিখলে মানুষ তা আর ভোলে না, কিন্তু ফুটবলে ভুল হওয়ার সম্ভাবনার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন ক্লপ, ‘এটি বাইক চালানোর মতো সহজ কোনো বিষয় নয়। প্রাক মৌসুমে আপনি কিছু বিষয়ে পিছিয়ে পড়তেই পারেন। আগের অবস্থায় ফিরতে একটু সময় লাগবে। আমি ইতিবাচকই আছি।’

প্রতিপক্ষ দলের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন লিভারপুল কোচ, ‘লিডস আমাদের ভুল করতে বাধ্য করেছে। তবে আমরা আরও ভালো করার মতো দল, আরও ভালো করব। আমাদের দক্ষতাগুলো কাজে লাগিয়ে ম্যাচটি জিতেছি। শেষ পর্যন্ত সেট পিসে জয়টা এসেছে, তবে আমি তাতে অখুশি নই।’ লিডসকে নিয়ে তাঁর ভবিষ্যদ্বাণী, ‘লিডস এই তীব্রতা নিয়ে খেলে যেতে পারলে মৌসুমটা খুব ভালো কাটবে ওদের।’