‘ফুটবল–শিক্ষা’র অভাবেই বারবার ব্যর্থ বাংলাদেশ

সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে আবারও ব্যর্থ বাংলাদেশছবি: বাফুফে

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ‘ফুটবল-শিক্ষা’ যে কত জরুরি, সেটি প্রতিনিয়ত টের পাচ্ছেন বাংলাদেশি ফুটবলাররা। এমনিতেই বাংলাদেশে খেলোয়াড় তৈরির কোনো উপযুক্ত ক্ষেত্র নেই।

কোনো ক্লাবের একাডেমি নেই, শেখার ব্যবস্থাটা করে দিতে পারেনি বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনও। কোনো ফুটবলারেরই হাতেখড়িটা উপযুক্ত বয়সে হয় না। তার পরও অনেক সময় ব্যক্তিগত প্রচেষ্টা, শেখার আগ্রহ ইত্যাদি মিলিয়ে একজন খেলোয়াড় নিজেকে সমৃদ্ধ করতে পারেন।

কিন্তু বাংলাদেশে যে সেটি হচ্ছে না, তা স্পষ্টই। ফুটবলার তৈরির কোনো পদ্ধতি ও প্রথাগত পরিবেশ না থাকায় আন্তর্জাতিক পরিসরে দাঁড়াতেই পারছে না বাংলাদেশের ফুটবল।

বাংলাদেশের ফুটবলারদের ফুটবল-পাঠের অভাবটা পরিষ্কার বোঝা যায় পরিসংখ্যানেই। মৌলিক ফুটবলশৈলী, যেমন: বল ধরে খেলা, গোল করতে পারার ক্ষমতা, সঠিক সময় ঠিক জায়গায় পাস বাড়ানো, আক্রমণের সময় সঠিক জায়গাটা খুঁজে নেওয়া ইত্যাদির ঘাটতি তো আছেই, আরও কিছু সাধারণ বিষয়েও আমাদের ফুটবলারদের ঘাটতি খুব নগ্নভাবে ধরা পড়ে আন্তর্জাতিক ফুটবলে।

নেপালের বিপক্ষে এগিয়ে গিয়েও জিততে পারেনি বাংলাদেশ
ছবি: বাফুফে

এবারের সাফে বাংলাদেশকে ভুগিয়েছে কার্ড সমস্যা। সর্বোচ্চ ১৪টি হলুদ ও ২টি লাল কার্ড দেখেছেন বাংলাদেশের খেলোয়াড়েরা, যার জেরে ভারত ও নেপালের বিপক্ষে ১০ খেলোয়াড় নিয়ে খেলতে হয়েছে দ্বিতীয়ার্ধের অনেক সময়। মালদ্বীপের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে পাওয়া যায়নি দলের সেরা ফরোয়ার্ড রাকিব হোসেন ও রাইটব্যাক বিশ্বনাথ ঘোষকে।

একটু বিশ্লেষণ করলেই বোঝায় যায়, বেশির ভাগ কার্ডই বাংলাদেশের ফুটবলাররা দেখেছেন ফুটবলসংক্রান্ত প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞানের অভাবে।

বিষয়টি জাতীয় দলের সাবেক কোচ শফিকুল ইসলাম মানিকের কথাতেই পাওয়া গেল, ফুটবলে পিছিয়ে থাকা সাফ অঞ্চলের প্রতিটি দেশের ফেডারেশনের ভালো মানের একাডেমি থাকলেও কেবল ব্যতিক্রম বাফুফে।

কয়েক বছর পরপর একাডেমির নামে প্রহসন ছাড়া কিছুই উপহার দিতে পারেনি তারা। তাই মাঠে প্রতিপক্ষের সঙ্গে কৌশলে তো পেরে উঠছেই না, তাদের জানা নেই নিয়মকানুন সম্পর্কেও।

এবার সাফে কার্ড সমস্যায় ভুগেছে বাংলাদেশ
ছবি: বাফুফে

শফিকুল ইসলাম বলছিলেন, ‘আমাদের ফুটবলাররা খেলতে খেলতে ফুটবলার হয়েছে। তাদের একাডেমিক জ্ঞান নেই। কোথায় ফাইনাল ট্যাকল করতে হবে, কোথায় না করলেও চলবে—এ বিষয়ের ধারণা কম। কারণ, উপযুক্ত বয়সে তারা শেখার সুযোগ পায়নি। এ দায় ফুটবলারদের নয়। এ দায় তাঁদের, যাঁরা জাতীয় ও ক্লাব পর্যায়ে ফুটবল চালাচ্ছেন।’

ফুটবলাররা উত্তেজিত হয়ে যাচ্ছেন বলেও মনে করেন শফিকুল, ‘প্রতিপক্ষ যখন বলের দখলে এগিয়ে থাকছে, নিজেরা ম্যাচ নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না, তখন খেলোয়াড়েরা উত্তেজিত হয়ে ফাউল করে বসছে।’

ঘরোয়া ফুটবলের রেফারিংকেও দায়ী করলেন শফিকুল, ‘আমাদের ঘরোয়া ফুটবলে রেফারিরা অনেক কিছুই দেখেও দেখেন না। এ কারণে খেলোয়াড়েরা পার পেয়ে যায়। আন্তর্জাতিক ফুটবলে তো এগুলোর ছাড় নেই। ঘরোয়া ফুটবলে ছোট ক্লাব-বড় ক্লাবকে আলাদা করে দেখলে এ অবস্থার কোনো উন্নতি হবে না।’

আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে ফুটবলারদের কার্ড দেখায় ঘরোয়ায় রেফারিংকে দায়ী করছেন অনেকেই
ছবি: বাফুফে

ক্লাব ফুটবলে কাজ করছেন—এমন আরও একজন কোচও ঘরোয়া ফুটবলের রেফারিংকে কাঠগড়ায় তুললেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেই কোচ বলেন, ‘লিগে অনেক কিছু করে পার পাওয়া যায়। সে অভ্যাস তো আর আন্তর্জাতিক ফুটবলে গিয়ে পরিবর্তন করা যায় না। আমি এমনও দেখেছি, বড় ক্লাবে খেলে ট্যাকল করলে যেটা হলুদ কার্ড দেখা উচিত, সেটা ফাউলও ধরা হয় না।’

ফুটবলাররা ন্যূনতম ‘ফুটবল-শিক্ষা’ ছাড়াই বড় হয়ে উঠছেন বলে মনে করেন তিনি।