ফুটবলারদের বেতন দেবে বাফুফে

জাতীয় দলের ফুটবরারদের বেতনের আওতায় আনতে চান বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন।ছবি: বাফুফে

কাতারে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে ভালো ফুটবল খেলেনি বাংলাদেশ দল। বলের দখল ছিল মাত্র ২৪ শতাংশ, হেরেছে ২-০ গোলে। এর আগে আফগানিস্তানের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করলেও শুরু থেকেই দল ছিল চাপের মধ্যে।

ভবিষ্যতে জাতীয় দলের পারফরম্যান্সে উন্নতি আনতে তৃণমূল থেকে নতুন খেলোয়াড় তুলে আনার কথা বলছেন অনেকে। ফুটবল উন্নয়নে বড় পরিকল্পনা চান সবাই। কিন্তু বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন সবকিছুর আগে চান ফুটবলারদের বেতনের আওতায় আনতে। আজ তিনি ফুটবলারদের সেটি জানিয়েও দিয়েছেন।

বাফুফে ভবনে আজ বেলা দুইটায় সালাউদ্দিন ডেকেছিলেন চোট ও করোনার কারণে কাতার সফরে যেতে না পারা জাতীয় দলের পাঁচ ফুটবলারকে। তাঁরা হলেন বসুন্ধরা কিংসের ডিফেন্ডার বিশ্বনাথ ঘোষ, ফরোয়ার্ড মাহবুবুর রহমান, আবাহনীর ডিফেন্ডার টুটুল হোসেন, ফরোয়ার্ড সাদ উদ্দিন এবং শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের গোলরক্ষক আশরাফুল ইসলাম। খেলোয়াড়দের সঙ্গে আলোচনার সময় বাফুফে সভাপতি তাঁদের বলেছেন, ৩০ জন ফুটবলারকে তিনটি ‘গ্রেড’-এর আওতায় এনে বেতন দেওয়ার পরিকল্পনা বাফুফের।

বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল এখন বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচ খেলতে কাতারে আছে।
ছবি: বাফুফে

বাফুফে সভাপতি সালাউদ্দিন এ নিয়ে প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘জাতীয় দলে খেলার আগ্রহ তৈরি করতেই এই চিন্তা। শুনেছি খেলোয়াড়েরা পা বাঁচিয়ে খেলে। জানি না সত্য নাকি মিথ্যা। এ জন্য চিন্তা করলাম এটা করলে হয়তো ভালো হবে।’ কিন্তু জাতীয় ফুটবল দলে খেলার জন্য অন্য কোনো দেশ যেখানে খেলোয়াড়দের বেতন দেয় না সেখানে বাংলাদেশে এই চিন্তা কেন? বাফুফে সভাপতির ব্যাখ্যা, ‘অন্য দেশের খেলোয়াড়েরা অনেক টাকা পায়। আমাদের খেলোয়াড়েরা কম পায়। তা ছাড়া ক্লাবগুলো খেলোয়াড় ছাড়তে চায় না। আমরা তাই সময়মতো ফুটবলারদের পাই না। এসব সমস্যা এড়াতেই নতুন এই ভাবনা।’

বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন।
ছবি: বাফুফে

বেতনের কথা শুনে স্বাভাবিকভাবেই খুশি খেলোয়াড়েরা। সভাপতির সঙ্গে আলোচনা শেষে গোলরক্ষক আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘জাতীয় দল নিয়ে সভাপতি তাঁর কিছু পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, ৩০ জন খেলোয়াড় নিয়ে একটা পুল করা হবে। এঁদের মাসিক বেতনের আওতায় নিয়ে আসবে বাফুফে। এতে খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স ভালো হবে। জাতীয় দলে যারা নতুন আসবে তারা উৎসাহ পাবে। সভাপতি বলেছেন, জাতীয় দলের খেলোয়াড়েরা ভালো খেললে তাদের জন্য এই পদ্ধতিটা এগিয়ে নিতে সুবিধা হবে।’

জাতীয় দলের ফরোয়ার্ড সাদ উদ্দিন মনে করেন ফুটবলারদের বেতনকাঠামোর আওতায় আনলে দলে প্রতিযোগিতা বাড়বে। তাঁর কথা, ‘খেলোয়াড়দের বেতনের আওতায় আনলে সবাই চাইবে ওপরের গ্রেডে যেতে। কারণ, খারাপ খেললে নিচের গ্রেডে নেমে যেতে হবে। এই সিদ্ধান্ত জাতীয় দলের জন্য সুফল বয়ে আনবে।’

বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল।
ছবি: বাফুফে

জাতীয় দলের অনেক ফুটবলারই ক্লাব থেকে বছরে ৫০-৬০ লাখ টাকা পারিশ্রমিক পান। কিন্তু বাংলাদেশের ফুটবলে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে টাকার যে অঢেল প্রবাহ, সেই অনুযায়ী ফলাফল নেই। গত চারটি সাফ ফুটবলের গ্রুপ পর্বই টপকাতে পারেনি বাংলাদেশ। ২০০৩ সালের পর জাতীয় দল জেতেনি কোনো ট্রফি। নতুন ফুটবলার তুলে আনার দিকে নজর নেই ৯০ শতাংশ ক্লাবেরই। শুধু ওপরের দিকে কিছু ফুটবলারকে নিয়েই যাবতীয় চিন্তা। তৃণমূলে দৃষ্টি না দিয়ে কাজী সালাউদ্দিনও শুধু জাতীয় দলের পেছনেই খরচ করে চলেছেন। খেলোয়াড়দের যা ভাষ্য, তাতে মনে হচ্ছে, বাফুফে সভাপতি এখনো মনে করছেন, টাকা পেলেই ফুটবলাররা ভালো খেলবেন। ভারতের বিপক্ষে জাতীয় দলের খারাপ খেলার পেছনে বড় দায় কি তাহলে খেলোয়াড়দের মোটা অঙ্কের টাকা না পাওয়াই!

ফুটবলারদের উদ্দেশে সালাউদ্দিনের বক্তব্য অনেকটা সে রকমই। তাঁদের তিনি বলেছেন, খেলোয়াড়েরা ভালো ফল দিতে পারলে বাফুফে সভাপতি হিসেবে তাঁর হাত শক্ত হবে। ভালো খেলতে উৎসাহ দিতেই ফুটবলারদের বেতনের আওতায় আনার পরিকল্পনা। সঙ্গে নাকি জানিয়েছেন, বেতনের অঙ্কটাও একেবারে খারাপ হবে না।