বছরটা ২০২২ বলেই শঙ্কায় আর্জেন্টিনা

মেসি আর আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপের স্বপ্ন নিয়ে শঙ্কা তৈরি করে দিচ্ছে বছরটাছবি: এএফপি

বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা তো নামের ভারেই সব সময় ফেবারিটদের তালিকায় থাকে, তার ওপর লিওনেল মেসির দলে থাকা মানে সে দলকে কখনোই হেলাফেলা করা যায় না। তবু ২০১৮ বিশ্বকাপে হতশ্রী পারফরম্যান্স আর তারপর লিওনেল স্কালোনির অধীনে প্রথম এক-দেড় বছরে পালাবদলে নড়বড়ে আর্জেন্টিনাকে দেখে কাতার বিশ্বকাপে তাদের সেভাবে ‘হট ফেবারিটে’র তালিকায় তেমন বেশি মানুষ রাখেননি। কিন্তু ২০২১ কোপা আমেরিকা জিতে মেসিরা আর্জেন্টিনার ২৮ বছরের শিরোপাখরা ঘোচাতেই সব কেমন বদলে গেল!

কোপা আমেরিকার ১১ মাসের মধ্যে আন্তমহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই ‘লা ফিনালিসিমা’য় ইউরোজয়ী ইতালিকেও হারিয়েছে আর্জেন্টিনা। এরপর আর্জেন্টিনার ২০২২ বিশ্বকাপের স্বপ্ন যেন আরও জোর পেয়েছে। আর্জেন্টিনা এখন সবচেয়ে বড় ফেবারিটদের একটি।

কিন্তু বছরটা ২০২২ বলেই কি একটু শঙ্কায় থাকতে হচ্ছে মেসিদের? ২-দিয়ে শেষ, এমন বছরগুলোতে যে বিশ্বকাপে কখনো ভালো কিছু করে দেখাতে পারেনি আলবিসেলেস্তেরা!

কোপা আমেরিকা জেতার পর থেকেই আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা আরও বেশি হচ্ছে
ছবি: রয়টার্স

মেসির শেষ বিশ্বকাপ এটি, কাতারের মাটিতে তাই বিশ্বমঞ্চে আকাশি-সাদার উল্লাসের স্বপ্নই দেখেন আর্জেন্টাইনরা। তবে বছরের শেষ সংখ্যাটাই তাদের স্বপ্নে বাগড়া দেবে। আর্জেন্টাইন দৈনিক টিওয়াইসি স্পোর্টস সেটি মনে করিয়ে দিয়ে প্রতিবেদনও করেছে।

এখন পর্যন্ত ২১টি বিশ্বকাপের মধ্যে ‘২’ দিয়ে শেষ—এমন বছরে বিশ্বকাপ হয়েছে তিনবার। ১৯৩০ সালে শুরু বিশ্বকাপ প্রতি চার বছর পরপর হয় বলে ১৯৩২ সালে হওয়ার সুযোগ ছিল না। ১৯৪২-এ হয়নি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে। বিশ্বযুদ্ধ শেষে ১৯৫০-এ শুরু, ১৯৫২ তেও তাই হয়নি। চার বছরের চক্রের কারণে বিশ্বকাপ হয়নি ১৯৭২, ১৯৯২, ২০১২ সালেও। শুধু ১৯৬২, ১৯৮২, ২০০২—এই তিনবারই বিশ্বকাপের বছরের শেষের সংখ্যাটা ছিল ২। এবারও তো তা-ই! ২০২২!

এই বছরটাও আর্জেন্টিনার জন্য ‘অপয়া’ হয়ে থাকবে? সময়ই তা বলবে। তবে ১৯৬২, ১৯৮২ আর ২০০২ বিশ্বকাপ কেন আর্জেন্টিনার জন্য অপয়া ছিল, সেটা আবার মনে করিয়ে দিয়েছে টিওয়াইসি স্পোর্টস।

চিলি ১৯৬২

সেবার বিশ্বকাপের আয়োজনই নিজেদের দেশে করার জন্য দৌড়ঝাঁপ করেছিল আর্জেন্টিনা। এর আগের দুটি বিশ্বকাপের আয়োজক ছিল ইউরোপিয়ান দেশ, সেবার তাই দক্ষিণ আমেরিকায়ই বিশ্বকাপ আয়োজনের দাবিটা জোরালো ছিল। কিন্তু সেখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমে পড়ে আর্জেন্টিনা ও চিলি।

সে সময়ের আর্জেন্টাইন ফেডারেশনের সভাপতি রাউল কলম্বো তাঁদের দাবির পক্ষে যখন ঘোষণা করেন, ‘আমরা চাইলে কালই বিশ্বকাপ আয়োজন করতে পারি, আমাদের প্রয়োজনীয় সবকিছুই আছে।’ জবাবে চিলিয়ান ফেডারেশনের তৎকালীন সভাপতি কার্লোস দিতবর্ন তাঁদের দাবির প্রচারে বলেছিলেন, ‘আমাদের কিছু নেই বলেই আমরা সবটুকু দিয়ে ঝাঁপাব।’ ফল, ভোটাভুটিতে চিলি ৩২-১০ ব্যবধানে জয়ী!

তা নিজেদের দেশে না হোক, নিজেদের মহাদেশেই তো বিশ্বকাপ। তার ওপর বাছাইপর্বে ভালোই খেলেছে আর্জেন্টিনা। সব মিলিয়ে অংশ নেওয়া ১৬ দেশের মধ্যে ফেবারিটদের সারিতেই ছিল আর্জেন্টিনা। কিন্তু হলো কী! বুলগেরিয়ার বিপক্ষে ১-০ গোলের জয়ে শুরু বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা পরের ম্যাচে ইংল্যান্ডের কাছে হেরে যায় ৩-১ গোলে, শেষ ম্যাচে গোলশূন্য ড্র করে হাঙ্গেরির সঙ্গে। হাঙ্গেরি ও ইংল্যান্ডের পর গ্রুপে তৃতীয় হয়ে সেখানেই বিশ্বকাপ শেষ আর্জেন্টিনার!

আর্জেন্টাইনদের কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা হয়ে এসেছে সেবার ব্রাজিলের টানা দ্বিতীয় বিশ্বকাপ জয়।

স্পেন ১৯৮২

আগেরবার নিজেদের মাটিতে আয়োজিত বিশ্বকাপে প্রথমবার বিশ্ব জয়ের আনন্দে মেতেছে আর্জেন্টিনা। সে দলের বেশির ভাগকেই রেখে দিয়েছিলেন কোচ সিজার লুইস মেনোত্তি। তার পাশাপাশি ১৯৭৮ বিশ্বকাপে যাঁকে না নেওয়া অনেক আলোচনার জন্ম দিয়েছিল, সেই ডিয়েগো ম্যারাডোনাও ছিলেন ৮২-র বিশ্বকাপে। কিন্তু শুরুতেই হোঁচট! ক্যাম্প ন্যুতে বেলজিয়ামের কাছে ১-০ গোলে হেরে শুরু আর্জেন্টিনার।

পরের দুই ম্যাচে হাঙ্গেরিকে ৪-১ ও এল সালভাদরকে ২-০ গোলে হারিয়ে পরের রাউন্ডে যেতে অবশ্য সমস্যা হয়নি ম্যারাডোনাদের। কিন্তু সে সময়ের বিশ্বকাপের ছকে গ্রুপ পর্বের পর নকআউট না হয়ে মেনে দ্বিতীয় আরেকটা গ্রুপ পর্ব হতো, সেখানে তিন দলের গ্রুপে আর্জেন্টিনার সঙ্গে পড়ে ইতালি ও ব্রাজিল! শেষ পর্যন্ত সেবারের বিশ্বকাপ জেতা ইতালির কাছে ২-১ গোলে হারের পর ব্রাজিলের কাছে ৩-১ গোলে হেরে দ্বিতীয় রাউন্ডে বিদায় আর্জেন্টিনার।

জাপান-দক্ষিণ কোরিয়া ২০০২

এশিয়ার মাটিতে প্রথম বিশ্বকাপে হট ফেবারিটই ছিল আর্জেন্টিনা। হবে না-ই বা কেন! বাতিস্তুতা, ক্রেসপো, ভেরন, ওর্তেগা, আইমারদের নিয়ে গড়া দলটাতে তারকার অভাব ছিল না, ডাগআউটেও আর্জেন্টিনার বিখ্যাত কোচ মার্সেলো বিয়েলসা। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বেও সবাইকে গুঁড়িয়ে দিয়েছিল আর্জেন্টিনা।

কিন্তু বিশ্বকাপে মৃত্যুকূপে পড়া আলবিসেলেস্তে মুখ থুবড়ে পড়ল প্রথম বাধায়ই। নাইজেরিয়াকে ১-০ গোলে হারিয়ে শুরুটা ভালো হয়েছে বটে, কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচে ইংল্যান্ডের কাছে হার ১-০ গোলে। তৃতীয় ম্যাচে জিততেই হতো, কিন্তু সুইডেনের বিপক্ষে পিছিয়ে পড়ে শেষ পর্যন্ত ড্র-ই করতে পারল আর্জেন্টিনা। ১৯৬২ বিশ্বকাপের পর প্রথমবার গ্রুপ পর্বে বিদায় আর্জেন্টিনার।

এবার ভাগ্য বদলাতে পারবেন মেসিরা?