বাংলাদেশ যা শিখিয়েছে কোহলিকে

দিবারাত্রির টেস্টের আগে সতর্ক কোহলি।ছবি : বিসিসিআই

বৈচিত্র্যময় টেস্ট ক্রিকেটের পালকে যেন এক নতুন রং যোগ করেছে দিবারাত্রির টেস্ট। সাধারণ টেস্টের সঙ্গে যার পার্থক্য অনেক। খেলোয়াড়দের আলাদাভাবে পরিকল্পনা করতে হয় এই টেস্টগুলো নিয়ে। আলাদা কৌশলের প্রয়োগ ঘটাতে হয়। আজ এমনই এক দিবারাত্রির টেস্ট খেলতে মাঠে নামছে ভারত ও ইংল্যান্ড। আহমেদাবাদের সরদার প্যাটেল স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় বেলা তিনটায় মাঠে নামবে দুই দল। সে টেস্ট নিয়ে কথা বলতে গিয়েই প্রসঙ্গক্রমে ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি তুললেন বাংলাদেশের কথা।

২০১৯ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে কলকাতায় এমনই এক দিবারাত্রির টেস্ট খেলেছিলেন কোহলিরা। ইশান্ত শর্মা, উমেশ যাদব, মোহাম্মদ শামির মতো পেসারদের তোপে উড়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। আজ ভারতের জার্সি গায়ে শততম টেস্ট খেলতে নামার অপেক্ষায় থাকা ইশান্ত শর্মা বাংলাদেশের বিপক্ষে সে টেস্টে হয়েছিলেন ম্যাচসেরা। সে টেস্টে সেঞ্চুরি করেছিলেন কোহলিও। হেসেখেলে জিতলেও সে টেস্ট থেকে অনেক কিছুই শিখেছেন বলে জানিয়েছেন কোহলি, ‘গোলাপি বলে এমনিতেই অনেক সুইং হয়। সাধারণ যে লাল বলে আমরা খেলি, তার চেয়ে অনেক বেশি। ২০১৯ সালে যে একটা দিবারাত্রির টেস্ট খেলেছিলাম বাংলাদেশের বিপক্ষে, তখনই আমরা এই জিনিসটা বুঝতে পেরেছি।’

টেস্টে দিনের বেলা ব্যাটিং করার চেয়ে গোধূলির সময়ে ব্যাটিং করা অনেক বেশি ঝামেলাপূর্ণ মনে হয় কোহলির কাছে, ‘যে পিচেই খেলুন না কেন, নতুন গোলাপি বলে খেলাটা সব সময় একটা বড় চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে বিকেল বেলায়। একটা পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করুন। ধরুন, আপনি ব্যাটিং দলের হয়ে খেলছেন এবং আপনাদের বিকেলে ফ্লাডলাইটের আলোয় ইনিংস শুরু করতে হচ্ছে। ওই এক-দেড় ঘণ্টা অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং। হ্যাঁ, আপনাকে স্পিনারদের খেলতে হবে ঠিকই, তবে এটাও মাথায় রাখতে হবে যে আপনি পেস বোলার ও নতুন বলের গুরুত্ব এড়াতে পারবেন না ওই সময়ে। নতুন গোলাপি বল ওই সময়টায় চকচকে থাকে, তাই সে সময়ে পেসাররাও আক্রমণে আসতে পারেন। আমরা সব ব্যাপারই বিবেচনায় নিচ্ছি এবং সে অনুযায়ী প্রস্তুত হচ্ছি।’

কোহলির মতে, ওই সময়টায় একজন ব্যাটসম্যানকে আরও বেশি মনোযোগী হতে হবে, হতে হবে একাগ্র, ‘এর আগে যখন আমরা দিবারাত্রির টেস্ট খেলেছিলাম, তখন খুব সম্ভবত প্রথম সেশনটা ব্যাট করার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত লেগেছিল। প্রথমে রোদ থাকে, সে সময়ে অত কষ্ট হয় না ব্যাট করতে। সাধারণ টেস্টের মতোই মনে হয় সবকিছু। যখন আঁধার নেমে আসে, তখনই পরিস্থিতি আস্তে আস্তে কঠিন হতে থাকে। বল দেখা যায় না ভালোভাবে। বল অনেক বেশি সুইং করে সে সময়টায়। ব্যাটসম্যান হিসেবে এই সময়টায় আপনাকে ভালোভাবে খাপ খাওয়াতে হবে। তখন অনেকক্ষণ ক্রিজে থাকলেও আপনাকে নতুন করে শুরু করার মতো খেলতে হবে। আরও বেশি মনোযোগী হতে হবে। আপনাকে মাথায় রাখতে হবে, দিনের বেলায় যেভাবে খেলেছিলেন, বিকেলে তার চেয়ে আরও বেশি সতর্কভাবে খেলতে হবে।’

তবে দিবারাত্রির টেস্টের চ্যালেঞ্জ যে শুধু ব্যাটসম্যানদের জন্য, বোলারদের জন্য নয়, এমনটা মনে করেন না কোহলি, ‘একই কথা বোলারদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। বিকেলে বোলারদের পরিকল্পনা থাকা উচিত নিয়মিত সঠিক লাইন ও লেংথে বল ফেলে যাওয়া। পরিস্থিতি পক্ষে থাকলে বিকেলে আরও বেশি আক্রমণাত্মক হওয়া।’

প্রস্তুতি চলছে পুরোদমে।
ছবি : বিসিসিআই

এই টেস্টটা কোহলিদের জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ১-১ সমতায় থাকা সিরিজে এগিয়ে যাওয়ার জন্য তো বটেই, বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ওঠার জন্যও এই টেস্টটায় অন্তত ড্র করতে হবে কোহলিদের। হারলেই ফাইনালে ওঠার আশা শেষ হয়ে যাবে। কোহলিদেরও সব পরিকল্পনা জয়ের জন্যই, ‘ফাইনালে ওঠার জন্য কী করতে হবে, ড্র করতে হবে না জিততে হবে, ওই হিসাব করে আমরা খেলি না। আমরা প্রতিটা টেস্ট জেতার জন্যই মাঠে নামি। একেক দিন নিয়ে চিন্তা করব এখন। আগেভাগে ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করে লাভ নেই। আমরা খেলোয়াড় হিসেবে আলাদাভাবে এই টেস্টে কী করতে পারি, আগে সেটা দেখব। তারপর নাহয় দেখা যাবে কী হলো না হলো।’