‘বাংলাদেশি এলিটা কিংসলিকে পেয়ে আমাদের শক্তি আরও বেড়েছে’

বসুন্ধরা কিংসে বাংলাদেশি খেলোয়াড় হিসেবে আজ অভিষেক ঘটতে পারে এলিটা কিংসলির।ছবি: প্রথম আলো

দেড় মাস পর আজ আবার ঢাকায় শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার ফুটবল লিগ। নিকটতম দুই প্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী লিমিটেড ও শেখ জামালের চেয়ে ১১ পয়েন্ট এগিয়ে বসুন্ধরা কিংস।

শিরোপা ধরে রাখার পথে অনেকটাই আত্মবিশ্বাসী লাল জার্সিধারীরা। এই লাল জার্সিতেই বাংলাদেশি ফুটবলার হিসেবে আজ অভিষেক হতে পারে সদ্য নাইজেরিয়ার নাগরিকত্ব ত্যাগ করা স্ট্রাইকার এলিটা কিংসলির।

দলে এলিটার সংযোজন এবং প্রাসঙ্গিক আরও অনেক বিষয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বললেন বসুন্ধরা কিংসের স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রুজোন।

প্রশ্ন :

রহমতগঞ্জের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে আবার মাঠে ফিরছে বসুন্ধরা কিংস। কী ভাবছেন, প্রিমিয়ার লিগের বাকি ৯ ম্যাচ কেমন হতে পারে আপনার দলের জন্য?

অস্কার ব্রুজোন: বিপিএলের শেষ পর্বটা হবে পুরোপুরি ভিন্ন। তবে আমরা আশা করছি, জয়ের ধারাটা আমরা অব্যাহত রাখতে পারব। বাকি ৯ ম্যাচে আমাদের প্রতিপক্ষ কারা, কী পরিকল্পনা হবে, সেসব এখনই মাথায় আনছি না। আমি শুধু প্রতিটি ম্যাচ নিয়ে ভাবতে চাই।
গত সেপ্টেম্বরে আমরা মৌসুম শুরু করি। সেই থেকে মাত্র ৯ সপ্তাহ আমরা খেলার মধ্যে ছিলাম। বাকি সময় নানা কারণে খেলার বাইরে। কখনো জাতীয় দলের খেলা, কখনো এটা, কখনো ওটা...। এত বিরতি ফুটবলারদের জন্য মোটেই ভালো নয়। দেশের ফুটবলের জন্যও ভালো ফল আনবে না। বৃষ্টির মৌসুমটা এড়াতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু সেটা হলো না। ফলে এখন আবার নতুন করে প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নামতে হচ্ছে।

প্রশ্ন :

লম্বা বিরতির পর মাঠে ফিরে স্বাভাবিক নৈপুণ্য দেখানো কতটা কঠিন?

ব্রুজোন: অনেক কঠিন। ৬ সপ্তাহেরও বেশি সময় আমরা খেলার বাইরে। কাজেই এত দিন পর মাঠে নামা বড় চ্যালেঞ্জ। শারীরিক ও মানসিকভাবে ফুটবলারদের আবার আগের জায়গায় যেতে হবে। এত দিন পর মাঠে ঠিকঠাক পারফর্ম করা সহজ ব্যাপার নয়। আমাদের অনেক বেশি সতর্ক হতে হবে।

বসুন্ধরার কোচ অস্কার ব্রুজোন।
ছবি: প্রথম আলো

প্রশ্ন :

প্রশ্ন: তবে বসুন্ধরার জন্য এটা খুব কঠিন হবে না মনে করছেন অনেকে...

ব্রুজোন: আমরা টেকনিক্যালি অনেক ভালো ঠিক আছে। আমাদের একঝাঁক মেধাবী ফুটবলার রয়েছে। ম্যাচের সময় আমরা পায়ে বল রাখতে পছন্দ করি। তবে সব ম্যাচে এটা সম্ভব নয়। মাঠের অবস্থার ওপর নির্ভর করবে অনেক কিছু। এখন বৃষ্টির সময়। ফলে, মাঠ ভারী থাকবে। ভারী মাঠে আপনাকে খেলার কৌশল বদলাতে হবে।

প্রশ্ন :

সম্প্রতি আপনারা নতুন কয়েকজন বাংলাদেশি খেলোয়াড় নিয়েছেন। তাদের মধ্যে বাংলাদেশি কোটায় পেয়েছেন নাইজেরিয়ার এলিটা কিংসলিকে। আজ কি এলিটার অভিষেক হচ্ছে?

ব্রুজোন: আমাদের নতুন সংযোজিত খেলোয়াড়দের নিয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে। আমরা এলিটা কিংসিলকে নিয়েছি। সে সম্প্রতি নাইজেরিয়ার নাগরিকত্ব ছেড়ে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব নিয়েছে। এখন সে বাংলাদেশি ফুটবলার। আমরা কাতার ও ইংল্যান্ডপ্রবাসী দুজন তরুণকেও নিয়েছি। এই খেলোয়াড়দের এখন আমরা অনুশীলনে পরখ করছি। তবে হ্যাঁ, এলিটাকে সম্ভবত আজ আমরা মাঠে নামাব।

প্রশ্ন :

এলিটাকে অনুশীলনে কেমন দেখলেন?

ব্রুজোন: এলিটা বাংলাদেশের কন্ডিশন ভালো জানে। সে এখানে প্রায় ১০ বছর ধরে খেলছে। ভারী মাঠে কীভাবে খেলতে হয় জানা আছে ওর। ফিনিশার হিসেবেও সে খুব ভালো। পায়ে শক্তিশালী শট আছে। এই কন্ডিশনে ওকে আমি দেখতে পারি।

প্রশ্ন :

এলিটার সংযোজন বসুন্ধরা কিংসের শক্তি কতটা বাড়াবে মনে করেন?

ব্রুজোন: এলিটার সংযোজন অবশ্যই আমাদের শক্তি বাড়াবে। দলে এখন আমাদের প্রথাগত নম্বর নাইন আর্জেন্টাইন রাউল বেসেরা। সে তার ভূমিকা খুবই ভালোভাবে পালন করছে। তবে আমি আগেই বলেছি, বৃষ্টির সময় মাঠের অবস্থা ভিন্ন থাকবে। কিছু ম্যাচে এলিটা এবং রাউল দুজনই একসঙ্গে স্ট্রাইকারের ভূমিকা নিতে পারে। কোনো কোনো ম্যাচে শুধু রাউল। এলিটাও নম্বর নাইন। এখন আমাদের কিছু কৌশলগত সমন্বয় করতে হবে। আমরা দুজন স্ট্রাইকার নিয়ে খেললে মাঠে আমাদের কাজটা হবে পুরোপুরি ভিন্ন। একজন গোল করার কাজেই বেশি মনোযোগ দেবে অন্যজন বক্সের আশপাশে মুভ করবে। এলিটাকে নিয়ে আমরা সেভাবেই পরিকল্পনা করছি। এলিটা শুধু ভালো নম্বর নাইনই নয়, সে বল পায়ে রাখতে পারে। আক্রমণে অন্য ভূমিকায়ও ভালো। দ্বিতীয় স্ট্রাইকার হিসেবেও তাকে আমরা ব্যবহার করতে পারি।

বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পেয়েছেন এলিটা কিংসলি।
ছবি: প্রথম আলো

প্রশ্ন :

বসুন্ধরার পজিশনেই অনেক খেলোয়াড়। বিশেষ করে আক্রমণভাগ নিয়ে তো মনে হয় আপনি মধুর সমস্যায় পড়ে গেলেন...?

ব্রুজোন: হ্যাঁ, মধুর সমস্যাই। আমাদের আক্রমণে রয়েছে দুই ব্রাজিলিয়ান রবসন ও জোনাথন, আর্জেন্টাইন বেসেরা। এখন যোগ হলো এলিটা। স্থানীয়দের মধ্যে আছে মতিন, সুফিল, ইব্রাহিম, তৌহিদুলরা।

প্রশ্ন :

কারা সুযোগ পাবেন ম্যাচে?

ব্রুজোন: আমরা সেরা খেলোয়াড়দেরই মাঠে নামাব। যে-ই ভালো করবে, তাকেই সুযোগ দেব। এখানে কারও মুখ দেখার কিছু নেই। তবে এটা ঠিক, খেলোয়াড়দের জন্য বর্তমান অবস্থাটা খুবই চ্যালেঞ্জিং। নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা ফুটবলারদের মানোন্নয়নে অনেক সহায়ক হবে। অনেকই বলে, আমাদের অনেক খেলোয়াড় বেঞ্চে বসে থাকে। ওই খেলোয়াড়দের জন্য এটা ভালো নয়। আমি বলতে পারি, এটা স্থানীয় খেলোয়াড়দের জন্য ভালো। কারণ, তারা ভালো ভালো বিদেশির সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারছে। অনুশীলন করতে পারছে। কাজেই আমি বলব, বসুন্ধরার বাংলাদেশি ফুটবলাররা প্রতিদিনই উন্নতি করছে। তা যেমন ওদের জন্য ভালো, বাংলাদেশের ফুটবলের জন্যও ইতিবাচক।

প্রশ্ন :

কাতার ও ইংল্যান্ডপ্রবাসী দুই তরুণকে কেমন দেখলেন?

ব্রুজোন: বসুন্ধরায় সুযোগ পাওয়া ওদের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ এবং চ্যালেঞ্জটা প্রতিদিনই আসছে সামনে। কাতারপ্রবাসী নবাব এবং ইংল্যান্ডপ্রবাসী মাহদি কোনো পেশাদার লিগ খেলে আসেনি, এসেছে একাডেমি থেকে। এখানে ওদের কঠিন পরিশ্রম করতে হবে। নিজেদের সিনিয়র খেলোয়াড়দের পর্যায়ে নিতে সচেষ্ট থাকতে হবে। তবে ভালো করলে অবশ্যই সুযোগ পাবে। আমরা আসলে লিগে সেরা ফলটাই চাই। এ কারণে আমরা এমন কিছু করব না, যা দলের জন্য ক্ষতিকারক হয়। আমরা ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চাই। ধারাবাহিকতা রেখেই আমরা মৌসুমে ২০ ম্যাচের ১৯টিই জিতেছি। লিগে একটা মাত্র ড্র শেখ জামালের সঙ্গে। কাজেই দলে বড় কোনা পরিবর্তন আনার প্রয়োজন নেই।

প্রশ্ন :

চট্টগ্রাম আবাহনীর কোচ মারুফুল হক বলেছেন, ১৫ ম্যাচে ৪৩ পয়েন্ট পাওয়া বসুন্ধরা কিংস ৮০ ভাগ চ্যাম্পিয়ন হয়েই গেছে। আপনারও কি সেটাই মনে হয়?

ব্রুজোন: আমরা এতটা ভাবছি না। কারণ, সামনে অনেক পথ বাকি। আমাদের প্রথম চিন্তা আজ বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে রহমতগঞ্জকে হারানো। তবে এটা ঠিক শিরোপার ওপরই আমাদের নজর।

এলিটার অর্ন্তভুক্তিতে আক্রমণভাগ নিয়ে মধুর সমস্যায় পড়েছেন বসুন্ধরা কোচ ব্রুজোন।
ছবি: ফেসবুক

প্রশ্ন :

শিরোপা জিততে বসুন্ধরা কিংস কতটা প্রস্তুত?

ব্রুজোন: বিরতির এই সময়ে আমারা ৩ সপ্তাহ প্রস্তুতি নিয়েছি। তবে জাতীয় দলে খেলতে যাওয়া আমাদের নয় থেকে দশজন ফুটবলারকে মাত্র তিন থেকে চারটি অনুশীলন সেশনে পেয়েছি। দেখা যাক, মাঠে আমরা কতটা কী করতে পারি। দলে চোট সমস্যা তেমন নেই। ডিফেন্ডার বিশ্বনাথ ঘোষ এখন ফিট। সে খেলার জন্য তৈরি। তারিক কাজী এবং বিশ্বনাথ দুজনই দলে জায়গা পেতে লড়াই করছে। আমি আগেই বলেছি, আমাদের দলে সব পজিশনেই ফুটবলাররা প্রতিদিনই লড়ছে দলে জায়গা পেতে। এটা ইতিবাচক ওদের জন্য। একজন কোচ হিসেবে এটা আমার জন্যও খুব ভালো।

প্রশ্ন :

বসুন্ধরা কিংস অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগোচ্ছে। এর রহস্য কী?

ব্রুজোন: ক্লাব সভাপতি ইমরুল হাসানের চেষ্টা এবং পেশাদারত্ব বড় ভূমিকা রাখছে। আমরা এ মৌসুমে ফেডারেশন কাপ জয়ের পথে ৫ ম্যাচই জিতেছি। লিগে ১৫ ম্যাচের ১৪ টি। গত তিন বছরে আমার অধীনে বসুন্ধরা খুব কমই হেরেছে। ২০১৮ সালের ফেডারেশন কাপের ফাইনালে আমরা হারি আবাহনীর কাছে। লিগ ম্যাচে শেখ রাসেলের কাছে হেরেছি সিলেটে। গত পরিত্যক্ত লিগে আমরা দুটি ম্যাচ হেরেছি। একটি কুমিল্লায় মোহামেডানের কাছে। বসুন্ধরার অগ্রযাত্রা ধরে রাখতেই আমরা কাজ করছি এখন।