বাংলাদেশের এক ‘১০’ নম্বরের নিখোঁজ সংবাদ

২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ভূটানের বিপক্ষে ম্যাচে রবিউল।ছবি: প্রথম আলো

‘একটি নিখোঁজ সংবাদ! উদীয়মান ফুটবলার রবিউল হাসান হারিয়ে গিয়েছেন। তাঁর গায়ে ছিল জাতীয় ফুটবল দলের ১০ নম্বর জার্সি।’ ফুটবলার রবিউলকে খুঁজে পেতে এমন নিখোঁজ সংবাদের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের বোধ হয় সময় হলো।

জাতীয় দলের ১০ নম্বর জার্সি সর্বশেষ ছিল তাঁর গায়েই। অথচ এবার ফেডারেশন কাপ ও প্রিমিয়ার লিগের প্রথম পর্ব মিলিয়ে বসুন্ধরা কিংসের ১৭ ম্যাচের একটিতেও খেলেননি রবিউল। ছিলেন না অতিরিক্ত তালিকাতেও।

স্বাভাবিকভাবেই আসন্ন নেপাল সফরের ২৪ জনের বাংলাদেশ জাতীয় দলে ডাক পাননি ২১ বছরের এই তরুণ। ২০১৮ সালে জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার পর এই প্রথম বাদ পড়লেন রবিউল। তবে তাঁর নাকি আশা ছিল ডাক পাবেন, ‘ক্লাবের হয়ে না খেলতে পারলেও আশা ছিল জাতীয় দলে ডাক পাব। কিন্তু পাইনি। তবে কোচ জেমি যা করেছেন, সেটা ঠিকই আছে।’

রবিউল হাসান।
ছবি: সংগৃহীত

বসুন্ধরার জার্সিতে রবিউলের সুযোগ না পাওয়ার দৃশ্যমান কারণ তাঁর পড়তি ফর্ম ও দলে ভালো ভালো খেলোয়াড়ের আধিক্যের সঙ্গে উঁচু মানের বিদেশিদের উপস্থিতি। কিন্তু ক্লাবের কোচ, কর্মকর্তা ও সতীর্থদের ভাষ্য—ব্যক্তিজীবনে শৃঙ্খলার অভাবেই রবিউলের এই পরিণতি। ঠিকমতো অনুশীলন করেন না। খেলায় মনোযোগ নেই। রয়েছে আরও কিছু অভিযোগ। শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে রবিউলকে ক্লাব থেকে পেতে হয়েছে কারণ দর্শানোর নোটিশও।

২০১৮ সালে আরামবাগের স্বাধীনতা কাপ জয়ের অন্যতম নায়ক ছিলেন রবিউল। পরের বছরই আরামবাগের অধিনায়কত্ব পান। ২০১৮–১৯ মৌসুমে হন প্রিমিয়ার লিগের সেরা উদীয়মান ফুটবলার।

২০১৯ সালে মোটা অঙ্কে রবিউলকে দলে নেয় বসুন্ধরা। যেকোনো মূল্যে তাঁকে পেতে চেয়েছিলেন বসুন্ধরার স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রুজোন। সেই ব্রুজোনই এখন রবিউলকে ছাড়তে পারলে বেঁচে যান!

বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, মধ্যবর্তী দলবদলে রবিউলকে ছেড়ে দিতে চায় বসুন্ধরা। যদিও এ নিয়ে ব্রুজোনের কৌশলী জবাব, ‘রবিউল তার আগের অবস্থানে আসতে পারলে দলের জন্য ভালো হবে।’

ক্লাবের কোচ, কর্মকর্তা ও সতীর্থদের ভাষ্য—ব্যক্তিজীবনে শৃঙ্খলার অভাবেই রবিউলের এই পরিণতি। ঠিকমতো অনুশীলন করেন না। খেলায় মনোযোগ নেই। শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে রবিউলকে ক্লাব থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশও পেতে হয়েছে।

ব্রুজোনের আগে রবিউল দৃষ্টি কাড়েন জাতীয় দলের কোচ জেমি ডের। উইঙ্গার বা আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার হিসেবে তিনি হয়ে ওঠেন জেমির বড় ভরসা। ২০১৯ সালে তাঁর একমাত্র গোলেই লাওসকে হারিয়ে বিশ্বকাপের মূল বাছাইপর্বে নাম তোলে বাংলাদেশ। একই বছর নমপেনে কম্বোডিয়ার বিপক্ষে আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচেও রবিউলের একমাত্র গোলে জিতেছিল বাংলাদেশ দল।

বিদেশের মাটিতে টানা দুই ম্যাচে বদলি নেমে গোল করে জেতানো শিষ্যেকে ১০ নম্বর জার্সি দেওয়া জেমিই এখন রবিউলকে নিয়ে হতাশ, ‘বাকি সবার মতো ওকেও ক্লাবের জার্সিতে খেলতে হবে। না খেলতে পারলে জাতীয় দলের জন্য বিবেচনায় আসবে না।’

রবিউলের পথ হারানো নিয়ে বসুন্ধরা কিংসের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর জোবায়ের নিপু বলছিলেন, ‘রবিউল ঠিকমতো অনুশীলন করে না। অনুশীলনে দুই দলের মধ্যে যে ম্যাচ হয়, সেখানেও সুযোগ দেওয়া যাচ্ছে না তাকে। আরও কিছু ব্যাপার আছে। ওকে অনেক বুঝিয়েছি আমরা। কিন্তু কাজ হয়নি। অথচ ওর মতো প্রতিভাবান খেলোয়াড় পাওয়া কঠিন।’

গত বছর লকডাউনের সময়ে নিজ ঘরে অনুশীলনে রবিউল।
ছবি: সংগৃহীত

এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে কোনো কথা বলতে চাননি রবিউল। পেছনে না তাকিয়ে তিনি দৃষ্টি ফেলতে চান ভবিষ্যতে, ‘আমাকে না খেলানো কোচের সিদ্ধান্ত। খেলতে না পারলে কষ্ট লাগে। তবে আশা করি, সামনে খেলতে পারব। ভবিষ্যতে সে রকম দলেই যাব।’

তাহলে কি বেশি পারিশ্রমিকে বসুন্ধরায় নাম লেখানো ভুল ছিল? রবিউলের উত্তর, ‘আত্মবিশ্বাস ছিল বলেই বসুন্ধরায় গিয়েছিলাম।’

রবিউলের সামর্থ্য নিয়ে কারোরই সন্দেহ নেই। তবে পথটা যে হারিয়ে ফেললেন, এটাই আফসোস।