জেমি ডেকে সরিয়ে হঠাৎ অস্কার ব্রুজোনের হাতে জাতীয় দলের দায়িত্ব দিয়েছিল বাফুফে। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ভালো কিছু করার চ্যালেঞ্জটাও নিয়েছিলেন স্প্যানিশ কোচ। প্রথম ২ ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে বাংলাদেশকে ভালো অবস্থানেই নিয়ে গেছেন ব্রুজোন। শ্রীলঙ্কাকে হারানোর পর আজ ১০ জন নিয়েও ভারতের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করেছে বাংলাদেশ।
সেই ড্র আসলে জয়েরই সমান। ম্যাচের পর মালে জাতীয় স্টেডিয়ামের সংবাদ সম্মেলনেকক্ষে এসে ব্রুজোন প্রথমেই নিজের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেন। ম্যাচ ছাপিয়ে চলে গেলেন বৃহত্তর পরিসরে। বললেন, ‘বাংলাদেশের ফুটবল এখনো বেঁচে আছে। চলুন আমরা চেষ্টা করি। চেষ্টা থাকলে ভালো কিছু করা যে সম্ভব, সেটা আজকের ম্যাচে প্রমাণ হয়েছে। আমি সত্যিই খুব খুশি।’
ব্রুজোন যেকোনো প্রশ্নেই বাংলাদেশ ফুটবল, ফুটবলারদের সামর্থ্য ইত্যাদি টেনে আনেন বরাবর। বলতে থাকেন বাংলাদেশের ফুটবলের নানা প্রসঙ্গে। আজ ভারতের সঙ্গে ড্রয়ের পর শুধুই পরিতৃপ্তি তাঁর মুখে, ‘১০ জন নিয়েও আমরা হারিনি। বরং আমরা ইতিবাচক খেলেছি। পরিস্থিতির দাবি মেনে ছেলেরা সেরাটা দিয়েছে। আমরা আজ প্রমাণ করতে পেরেছি যে বাংলাদেশের ফুটবলারদের ভালো খেলার সামর্থ্য আছে।’
কিন্তু ১০ জনের দলের পক্ষে গোল করা কঠিনই। সেই কঠিন কাজটিই আজ করেছে বাংলাদেশ। কোচ বলছেন, ‘আমি অবশ্যই আশাবাদী ছিলাম ম্যাচে ফিরে আসার ব্যাপারে। ছেলেদের বলেছিলাম, হাল ছেড়ো না। চেষ্টা করতে থাকো। ওরা আমার কথামতো খেলতে পেরেছে।’
সুনীল ছেত্রীকে নিয়ে ভয় ছিল বাংলাদেশের। ভারত অধিনায়ক ঠিকই ১টি গোল করে এগিয়ে নেন তাঁর দলকে। সেই প্রসঙ্গ টেনে ব্রুজোনের কথা, ‘আমরা বিশেষ পরিকল্পনা নিয়েছিলাম ছেত্রীকে নিয়ে। তারপরও আমাদের ভুলে প্রথমার্ধে সে গোল করে ফেলেছে। এটা আনন্দের যে আমরা সেই গোল শোধ দিতে পেরেছি।’
এই মালে স্টেডিয়াম ব্রুজোনের হাতের তালুর মতো চেনা। এখানে ক্লাব পর্যায়ে তিনি কাজ করেছেন। গত আগস্টে এএফসি কাপে এই মাঠেই বসুন্ধরা কিংস এগিয়ে থেকেও ১০ জন নিয়ে ড্র করেছিল মোহনবাগানের সঙ্গে। আজ পিছিয়ে থেকে ড্র। স্বাভাবিকভাবেই ব্রুজোন তৃপ্ত, ‘১০ জনে পরিণত হলে আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে ম্যাচের কৌশল ঠিক করেছিলাম। ছেলেদের ধন্যবাদ যে সেটা কাজে এসেছে।’
এ সময় কোচের পাশে বসা তরুণ ডিফেন্ডার ও বাংলাদেশের সমতাসূচক গোলদাতা ইয়াসিন আরাফাতও ছিলেন খুশি। এই প্রথম গোল করেছেন, জাতীয় দলকে সাফের মতো বড় মঞ্চে ১ পয়েন্ট এনে দিয়েছেন। নিজের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেন এভাবে, ‘সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ যে আমি গোল পেয়েছি। ধন্যবাদ দেব সমর্থকদের, যাঁরা মাঠে এসে আমাদের সমর্থন দিয়েছেন। আসলে গোল করার অনুভূতিটা আমার কাছে অসাধারণ।’
ভারতীয় কোচ ইগর স্টিমাচ ছিলেন হতাশ। প্রায় ৩৫ মিনিট একজন বেশি নিয়ে খেলেও গোল হজম তাঁর ভালো লাগেনি। এটাই মূলত ভারতীয় কোচের হতাশার কারণ। তাঁর অধীন বাংলাদেশের বিপক্ষে ৩ ম্যাচে মাত্র ১টি জিতেছে ভারত। ২০১৯ সালে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে সল্টলেকের পর এবার ড্র মালেতে।
বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানিয়ে ভারতীয় কোচ নিজেদের খেলায় অসন্তুষ্টিই প্রকাশ করলেন শুরুতে। বললেন, ‘আমরা ৯০ মিনিটের মধ্যে ৭৫ মিনিট ভালো খেলেছি। বাকি ১৫ মিনিট ছেলেরা নার্ভাস ছিল। ফলে ওরা ভুল করেছে। এই পর্যায়ে ১০০ ভাগ সঠিক পাস খেলা কঠিন। এ ম্যাচে আমাদের প্রচুর মিস পাস হয়েছে। এটা ঠিক হয়নি। ভুলের শাস্তিই আমরা পেয়েছি। বাংলাদেশের এই ড্রয়ের পেছনে প্রবাসীদের সমর্থনও প্রভাব ফেলেছে।’
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রাপ্ত লাল কার্ডকে হাস্যকর বলেছিলেন স্টিমাচ। আজ সংবাদ সম্মেলনে তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়, বিশ্বনাথের লাল কার্ড ঠিক আছে? ক্রোয়েশিয়ান কোচ একটু মজা করলেন, ‘ওকে একবার লাল কার্ড দেওয়া ঠিক হয়নি। দুটি দেখানো উচিত ছিল। অথবা তিন দিনের জেল।’ এ সময় হাসির রোল ওঠে সংবাদ সম্মেলনকক্ষে। স্টিমাচও না হেসে পারেননি। তবে তাঁর হাসির আড়ালে একটু হতাশাও লুকিয়ে ছিল।