বান্ধবীর ‘না’ বলার সুযোগই রাখেননি তিনি

হাঁটু গেড়ে বসে বিয়ের প্রস্তাব ইয়োরেন্তেরছবি: টুইটার

মাঠে বিয়ের প্রস্তাব শুনলে যেমন আচমকা, খেলার মধ্য দিয়ে বসা কোনো প্রস্তাব মনে হয়, মার্কোস ইয়োরেন্তের প্রস্তাব সে রকম ছিল না। আতলেতিকো মাদ্রিদ মিডফিল্ডারের প্রস্তাবে পরিকল্পনার ছাপ ছিল যথেষ্ট।

খেলার মধ্যে খেলোয়াড়ের কিংবা দর্শক সারিতে দর্শকের প্রস্তাবের ঘটনার সাক্ষী কম হয়নি ক্রীড়াঙ্গন, তার মধ্যে একটু ব্যতিক্রম হয়ে এল ইয়োরেন্তের প্রস্তাব। হাঁটু গেড়ে বসে, আংটি পরিয়ে, পরিবার-বন্ধুদের সাক্ষী রেখে...সম্ভাব্য সেরা উপায়েই বান্ধবী পাত্রিসিয়া নোয়ারবেকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন স্প্যানিশ মিডফিল্ডার।

তবে এভাবে পরিকল্পনা করে বিয়ের প্রস্তাবে সবাই যেখানে রোমান্টিক কোনো জায়গা খুঁজে নেন; সমুদ্রপার, শপিং মল, কিংবা আইফেল টাওয়ারের মতো রোমান্টিক জায়গায় চলে যান, ইয়োরেন্তে সেখানে ব্যতিক্রম।

বান্ধবীকে তাঁর ঘরনি হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন তাঁর আরেক ‘ঘরে’ দাঁড়িয়ে। ওয়ান্দা মেত্রোপলিতানো তাঁর ‘ঘর’ কিনা!

হাসিমুখে দুজন, আংটি দেখাচ্ছেন পাত্রিসিয়া।
ছবি: টুইটার

যতই রিয়াল মাদ্রিদের একাডেমিতে বেড়ে ওঠা হোক তাঁর, রিয়াল মাদ্রিদে যতই অভিষেক হোক, এখন তো ইয়োরেন্তে আতলেতিকো মাদ্রিদেরই খেলোয়াড়, আর আতলেতিকোর মাঠ ওয়ান্দা মেত্রোপলিতানোকেই ইয়োরেন্তে মেনেছেন ঘর। সেই ঘরে দাঁড়িয়েই গতকাল বান্ধবী পাত্রিসিয়াকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন ২৬ বছর বয়সী স্প্যানিশ মিডফিল্ডার।

উল্লেখ্য, প্রস্তাবে সায় দিয়েছেন ইয়োরেন্তের পাত্রিসিয়া! এভাবে প্রস্তাবের পর 'না' বলতে কঠোর হৃদয়েরই হতে হয়!

কী দারুণ এক আবহই না তৈরি করেছিলেন ইয়োরেন্তে! স্টেডিয়ামের দৈত্য পর্দায় দেখানো হয়েছে দুজনের রোমান্টিক কিছু মুহূর্ত। কখনো মরুভূমির বালুকাবেলায় দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত উপভোগ করছেন ইয়োরেন্তে ও পাত্রিসিয়া। কখনো সমুদ্রসৈকতে, আইফেল টাওয়ারের সামনে কিংবা ব্যস্ত রাস্তায় দুজন পরস্পরকে আলিঙ্গনে বেঁধেছেন। ওয়ানদা মেত্রোপলিতানোয় দাঁড়িয়ে সেই দৃশ্যগুলো দুজন দেখছিলেন, পাত্রিসিয়ার চোখে নোনাজল তখন আর বাঁধ মানেনি।

এর একটু পরই এল একজন নারীর অনেক প্রত্যাশিত মুহূর্তটি। আর সেটার জন্য মনে হয় মনে মনে অপেক্ষাই করছিলেন নোয়ারবে! মাঠের একপাশে হাঁটু গেড়ে বসলেন ইয়োরেন্তে। একটু পর হাতের মুঠো থেকে একটা আংটির বাক্স বের করলেন লরেন্তে। বাক্স থেকে আংটি বের করে নোয়ারবের দিকে এগিয়ে এসে বললেন, ‘তুমি কি আমাকে বিয়ে করবে?’ প্রস্তাব পেয়ে নোয়ারবে আবেগে কেঁদে ফেলেন এবং জড়িয়ে ধরেন ইয়োরেন্তেকে।

আবেগী আলিঙ্গন ইয়োরেন্তে-পাত্রিসিয়ার।
ছবি: টুইটার

কোনো রোমান্টিক সিনেমার দৃশ্য নয় এগুলো। কিন্তু ঠিক এই মুহূর্তগুলো এভাবেই ক্যামেরায় ধারণ করা হয়েছে। আর দুজনের বিয়ের আনুষ্ঠানিক প্রস্তাবের দৃশ্যগুলো দুই পরিবারের সদস্যরা পাশে দাঁড়িয়ে দারুণভাবে উপভোগ করেছেন। এরপর আংটি পরানোর দৃশ্য শেষ হতেই দুই পরিবারের সদস্যরা দৌড়ে এসে দুজনকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। ওই সময় করতালিতে মুখর হয়ে ওঠে পরিবেশ।

অবশ্য এভাবে মাঠে বা খেলার মাঝখানে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার ঘটনা এই প্রথম নয়। মাঝমধ্যেই এমন দৃশ্য দেখা যায় ক্রীড়াঙ্গনে। এই তো সপ্তাহ দুয়েক আগে যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটায় এ রকম একটা ঘটনা ঘটেছিল। সেদিন অবশ্য মাঠে ফুটবল চলছিল। মিনেসোটা ইউনাইটেড এফসির মিডফিল্ডার হাসানি ডটসন সেদিন এমন কাণ্ড করেছিলেন।

সেদিন ম্যাচ শেষে বান্ধবী পেত্রা ভুচকোভিচকে সাইডলাইনে ডেকে হাঁটু গেড়ে বসে দর্শকদের সামনে বিয়ের প্রস্তাব দেন হাসানি। এরপর পকেট থেকে আংটি বের করে পরিয়ে দেন বান্ধবীর অনামিকায়। এরপর একে অন্যকে জড়িয়ে ধরেন। ডটসনের বিয়ের প্রস্তাবের ওই ভিডিওটা অবশ্য ভাইরাল হয়েছিল।

ভাইরাল হওয়া না হওয়া নিয়ে মনে হয় না ইয়োরেন্তের কোনো ভ্রুক্ষেপ আছে! মাঠের মতো মাঠের বাইরেও যে বড় অর্জন হলো তাঁর! রিয়াল মাদ্রিদের একাডেমিতে বেড়ে ওঠার পর রিয়ালেরই মূল দলে চার মৌসুম ছিলেন ইয়োরেন্তে, এর মধ্যে এক মৌসুম ধারে খেলেছেন আলাভেসে।

রিয়ালে ক্রুস-মদরিচ-কাসেমিরোদের মাঝমাঠে সুযোগ তো আর তেমন মিলত না, আলাভেসে আলো ছড়িয়েই নজর কাড়েন ইয়োরেন্তে। আলাভেস থেকে ফিরেও দুই মৌসুমে মাঝেমধ্যে সুযোগ পেয়েছেন রিয়ালে। কিন্তু তাতে ইয়োরেন্তের তৃপ্তি মেটেনি। ২০১৯ সালে যোগ দেন রিয়ালেরই নগর প্রতিদ্বন্দ্বী আতলেতিকো মাদ্রিদে।

সেখান থেকেই ক্যারিয়ার আর ভাগ্যের চাকা ঘুরে গেল তাঁর। গত মৌসুমে আতলেতিকোর শিরোপা জয়ে বড় অবদান ইয়োরেন্তের, স্পেন জাতীয় দলেও এখন নিয়মিত। মাঠের বাইরেও জীবনটা পূর্ণাঙ্গ হতে যাচ্ছে তাঁর!