বাফুফে যা পারেনি, ভারত–আফগানিস্তান সেটিই পেরেছে

কাতারে কিংবা সৌদি আরবে নয়, দেশেই চলছে বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের প্রস্তুতি।ছবি: প্রথম আলো

ফিলিপাইনের মতো দলও বিশ্বকাপ বাছাইয়ের জন্য কাতারে গিয়ে প্রস্তুতি ক্যাম্প করছে। অথচ দু–দুবার বিদেশে প্রস্তুতি ক্যাম্প করতে যেতে ব্যর্থ হয়ে জামাল ভূঁইয়ারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন দেশে। ফুটবল অঙ্গনে কান পাতলেই এ নিয়ে আলোচনা–সমালোচনা শোনা যাচ্ছে। অন্যান্য দল যখন করোনাভাইরাসের মধ্যেই বিদেশে গিয়ে প্রস্তুতি ক্যাম্প করছে, প্রস্তুতি ম্যাচ খেলছে; সেখানে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) কেন ব্যর্থ হলো জামাল ভূঁইয়াদের যথাযথ প্রস্তুতির সুযোগ দিতে?

বাংলাদেশ দল অবশেষে কাতারের উদ্দেশে কাল দেশ ছাড়বে। কিন্তু ম্যাচের আগে হাতে যে সময় আছে, তাতে প্রস্তুতির খুব বেশি সুযোগ পাওয়া যাবে না। যাওয়া উচিত ছিল আরও আগেই। শুরুতে বাংলাদেশ দলের কাতার যাওয়ার কথা ছিল ২১ বা ২২ মে। দোহায় প্রথম ম্যাচ ৩ জুন হলেও মূলত প্রস্তুতি ম্যাচ ও সেখানকার কন্ডিশনে অনুশীলন করতেই একটু আগে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল। শেষ পর্যন্ত সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে বাফুফে। এর কারণ হিসেবে বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন বলেছেন, ক্যাম্প করতে কাতার গিয়ে কোনো লাভ হতো না। শুধু মাঠ আর হোটেলেই সময় কাটাতে হবে। জিম, সুইমিংপুল ব্যবহার করা যেত না। অথচ অন্য দলগুলো ঠিকই নতুন স্বাভাবিকতার সঙ্গে মানিয়ে দেশের বাইরে প্রস্তুতি ক্যাম্প করছে। যত দূর জানা গেছে, সেখানে তারা সব রকম সুযোগ–সুবিধাই পাচ্ছে।

করোনাকালে বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা, কোয়ারেন্টিনের বাধ্যবাধকতা—এসব সবার জন্যই। আবার আলোচনার মাধ্যমে এই নিয়মগুলো শিথিলও করা যায়। অন্য দেশগুলো সেটাই করেছে। পারেনি শুধু বাংলাদেশ। সেটা হতে পারে সদিচ্ছার অভাবে, হতে পারে যোগাযোগ বিভ্রাটের কারণে, হতে পারে ফুটবল কূটনীতিতে অদক্ষতার জন্যও।

ভারতীয় দল প্রস্তুতির সব সুযোগ–সুবিধা নিশ্চিত করেই ১৯ মে কাতারে ঘাঁটি গেড়েছে। পরদিন থেকেই নেমে গেছে অনুশীলনে। কোভিড পরিস্থিতিতে অবশ্য ভারতকেও দোহায় ক্যাম্প করতে দিতে রাজি হচ্ছিল না কাতার। কিন্তু নাছোড় অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন কূটনীতির জোরে ঠিকই কাতারকে রাজি করিয়েছে। এখানেই ব্যর্থতা বাফুফের। আন্তর্জাতিক ফুটবলে এক দেশের ফেডারেশনের সঙ্গে আরেক দেশের ফেডারেশেনর পারস্পরিক বোঝাপড়া থাকাটা জরুরি। বাফুফে যেন সেখানেই পিছিয়ে!

ভারত শুধু নয়, কাতারে গিয়ে প্রস্তুতি ক্যাম্প করছে ফিলিপাইনও। বাছাইপর্বের আগে ভারতীয় দলের সঙ্গে সেখানে প্রস্তুতি ম্যাচও খেলবে তারা। ওদিকে আফগানিস্তান দলও ১৫ মে থেকে দুবাইয়ে ক্যাম্প করছে। গত পরশু সেখানে ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলে তারা জিতেছে ৩-২ গোলে। বাংলাদেশ দলের আরেক গ্রুপ প্রতিপক্ষ ওমানও পরশু দুবাইয়ে থাইল্যান্ডের সঙ্গে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছে। এমনকি নেপালের মতো দেশও ২৯ মে বসরায় প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে ইরাকের সঙ্গে।

ভারত, আফগানিস্তান প্রস্তুতির জন্য আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ খেলে, বাংলাদেশ খেলে স্থানীয় ক্লাবের সঙ্গে।
ছবি: প্রথম আলো

অথচ দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, বাংলাদেশ দল আজ ঢাকায় প্রস্তুতি ম্যাচ খেলছে শেখ জামাল ধানমন্ডির মতো দলের বিপক্ষে। বিশ্বকাপ বাছাইয়ের মতো মহাগুরুত্বপূর্ণ লড়াইয়ের আগে এমন দুর্বল প্রস্তুতির ম্যাচ যে কোনো কাজেই আসবে না, জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার হিসেবে বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের সেটি ভালোই জানা। কিন্তু জেনেই–বা লাভ হচ্ছে কী! প্রস্তুতি নিয়ে প্রকাশ্যে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন জাতীয় দলের কোচ জেমি ডে ও এবং অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়াও।

কাতারের ক্যাম্প বাতিল হওয়ার পর বাফুফে উদ্যোগ নিয়েছিল বাংলাদেশ দলকে সৌদি আরবের দাম্মামে পাঠাতে। দোহার আবহাওয়ার সঙ্গে অনেকটাই মিল আছে সেখানকার আবহাওয়ার। দাম্মামে একটি প্রস্তুতি ম্যাচও খেলার পরিকল্পনা ছিল। পরদিন (গত সোমবার) বেলা ১১টায় ফ্লাইট, এটা জেনেই গত রোববার রাতে ঘুমাতে গিয়েছিলেন ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে থাকা বাংলাদেশ দলের ফুটবলাররা। কিন্তু ভোরবেলা তাঁদের জানানো হলো দাম্মাম যাত্রাও বাতিল। সৌদি আরব থেকে নাকি কোয়ারেন্টিন ছাড়ের নিশ্চয়তাই মেলেনি!

জামাল ভূঁইয়া প্রকাশ্যেই প্রস্তুতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
ছবি : প্রথম আলো

কোয়ারেন্টিন ছাড় না পাওয়া, জিম–সুইমিংপুল ব্যাবহারে বাধা—এসব যেন শুধু বাংলাদেশের জন্যই! কারণ, বাফুফে যা পারেনি, ভারত-আফগানিস্তান–ফিলিপাইন সেটা ঠিকই করে দেখিয়েছে। আসলে ৩–১৫ জুন কাতারে অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের জন্য ভালো প্রস্তুতির গুরুত্বটা তারা উপলব্ধি করতে পেরেছে, যেটা পারেনি বাফুফে।

বাছাইপর্বের আগে কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতেই কাতার বা ওই অঞ্চলের কোনো দেশে প্রস্তুতি ক্যাম্প করা প্রয়োজন ছিল বাংলাদেশ দলের। অভ্যস্ততা না থাকলে দোহার দ্রুতগতির মাঠে খেলা কতটা কঠিন, সেটা তো গত ৪ ডিসেম্বরের ম্যাচেই দেখেছেন বাংলাদেশের খেলোয়াড়েরা।

প্রস্তুতি নিয়ে বিরক্ত জেমি ডে’ও
ফাইল ছবি

করোনাকালে বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা, কোয়ারেন্টিনের বাধ্যবাধকতা—এসব সবার জন্যই। আবার আলোচনার মাধ্যমে এই নিয়মগুলো শিথিলও করা যায়। অন্য দেশগুলো সেটাই করেছে। পারেনি শুধু বাংলাদেশ। সেটা হতে পারে সদিচ্ছার অভাবে, হতে পারে যোগাযোগ বিভ্রাটের কারণে, হতে পারে ফুটবল কূটনীতিতে অদক্ষতার জন্যও। বাফুফের অবশ্য দাবি, যোগাযোগে ঘাটতি ছিল না। তাদের এ দাবিকে ঠিক ধরে নিলেও প্রশ্ন—সৌদি আরবযাত্রার মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে কেন তা বাতিল হবে? কোয়ারেন্টিন শর্ত যে শিথিল হবে না, সেটা তো আরও আগেই জানা উচিত ছিল বাফুফের!

বিশ্বকাপ বাছাইয়ের প্রস্তুতি নিয়ে বাফুফের কাণ্ড তাদের আন্তর্জাতিক যোগাযোগের সক্ষমতা নিয়ে বড় প্রশ্নই তুলে দিয়েছে। ফুটে উঠছে যথাযথ পরিকল্পনার অভাবও। সেটার মাশুল হয়তো দিতে হবে বাংলাদেশ দলকেই। সাফল্যের ভাগ সবাই নিতে চায়, কিন্তু ব্যর্থতার দায় বয়ে বেড়াতে হয় কোচ–খেলোয়াড়দেরই।