বাফুফে-শেখ জামাল মুখোমুখি

কাজী সালাউদ্দিন
কাজী সালাউদ্দিন
মনজুর কাদের
মনজুর কাদের

নজিরবিহীন এক ঘটনা! অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের আগের দিন জাতীয় দলের ক্যাম্প থেকে নিজেদের ১০ খেলোয়াড় নিয়ে যায় শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব। উদ্দেশ্য ছিল খেলোয়াড়দের সঙ্গে নিজের ব্যবসায়িক অফিসে ক্লাব সভাপতি মনজুর কাদেরের মধ্যাহ্নভোজ। জাতীয় ফুটবল স্বার্থের পরিপন্থী বিষয়টিকে ভালোভাবে নিতে পারেনি বাফুফে। আর এটি নিয়েই বাফুফে-শেখ জামাল দ্বন্দ্ব পৌঁছেছে চরমে। দুই পক্ষ মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। বাফুফের বিরুদ্ধে তোপ দাগছেন মনজুর কাদের।
বাফুফের জেলা লিগ কমিটির প্রধানের পদ সাগ্রহেই নিয়েছিলেন, সেই পদ ছাড়ার ঘোষণাও কাল দিলেন শেখ জামালের সভাপতি। বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের সঙ্গে মনজুর কাদেরের ‘বন্ধুত্ব’ই এতে গুরুতর চোট পেয়েছে। টিভির টক শোসহ নানা জায়গায় শেখ জামাল অনুসারীরা হঠাৎ মুণ্ডুপাত করতে শুরু করেছেন সালাউদ্দিনের। শেখ জামাল কর্তাদের কাছে রাতারাতি ‘খারাপ’ হয়ে গেলেন বাফুফে সভাপতি!
অথচ কাদের নিজেই বিভিন্ন সময়ে বলেছেন, সালাউদ্দিন বাফুফে সভাপতির চেয়ারে বসার কারণেই তিনি ফুটবলে ফিরে এসেছেন। জেলার ফুটবলে দেদার টাকাও খরচ করেছেন নিজের উদ্যোগে। কয়েক দিন আগেও বলতেন সালাউদ্দিন ছাড়া এ দেশের ফুটবলে কিছু হবে না। সেই কাদের কাল ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেলেন, ‘এই ফুটবল ফেডারেশন দিয়ে ফুটবলের কোনো উন্নতি হবে না। সাত বছরে সালাউদ্দিনের আমলে আমরা আরও ডাউন হয়েছি।’
অনেকেই ভাবতে পারেন হঠাৎ করে এসব বলার কারণ কী? ফেডারেশনে নির্বাচন করবেন কাদের? না, জানিয়েছেন নির্বাচনে দাঁড়ানোর ইচ্ছা তাঁর নেই। সংবাদমাধ্যমের আলোচনায় থাকতেই সালাউদ্দিন ও বাফুফেকে আক্রমণ করছেন কাদের, এমনটাও বলাবলি হচ্ছে বাফুফে ভবনে। সালাউদ্দিন ও তাঁর পারিষদ অবশ্য বসে নেই। কাল ফুটবল ভবনে পা দিয়েই উত্তাপটা টের পাওয়া গেল। শেখ জামালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কর্মকর্তারা রণকৌশল নির্ধারণে দফায় দফায় আলোচনায় বসছেন। আগামীকাল বাফুফের নির্বাহী কমিটি জরুরি সভায় বসছে, ওখানেই শেখ জামালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।

>বাফুফের বিরুদ্ধে তোপ দাগছেন মনজুর কাদের। বাফুফের জেলা লিগ কমিটির প্রধানের পদ সাগ্রহেই নিয়েছিলেন, সেই পদ ছাড়ার ঘোষণাও কাল দিলেন শেখ জামালের সভাপতি। বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের সঙ্গে মনজুর কাদেরের ‘বন্ধুত্ব’ই এতে গুরুতর চোট পেয়েছে

পাতানো খেলার অভিযোগে এর আগে বাফুফে ২০ লাখ টাকা জরিমানা করেছিল শেখ জামালকে। এবার কী হবে বলা কঠিন। তবে সালাউদ্দিনের কণ্ঠে বেশ দৃঢ়তা, ‘কেউ নিয়ম ভাঙলে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে। এ ব্যাপারে কোনো ছাড় নয়।’ তবে এও বলছেন, কাদেরের সঙ্গে তাঁর কোনো ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব নেই।
তবে যত যা-ই হোক, শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে ঠিকই অভিযুক্ত হচ্ছে শেখ জামাল। ফিফা-এএফসির যেকোনো বড় টুর্নামেন্টের ম্যাচের সময় চার দিন ফেডারেশনের অধীনে থাকেন খেলোয়াড়েরা। ওই সময় কোনো ক্লাব জাতীয় দলের ক্যাম্প থেকে খেলোয়াড়দের নিয়ে যেতে পারে না। অথচ শেখ জামাল ‘জোরজবরদস্তি’ করে কাজটিই করল!
কিন্তু প্রশ্ন এসেছে ম্যাচের আগের দিন ১৬ নভেম্বর খেলোয়াড়দের শেখ জামালের লাঞ্চে কেন যেতে দিল বাফুফে? আটকাল না কেন? যদিও বাফুফে বলেছে, টিম হোটেলে গাড়ি পাঠিয়ে খেলোয়াড়দের জোর করেই নিয়ে গেছেন মনজুর কাদের। সালাউদ্দিন তাতে বাধা দেওয়ার না-দেওয়ার কারণটা বললেন, ‘ওই দিন আমরা বাধা দিলে লঙ্কাকাণ্ড ঘটতে পারত। সারা পৃথিবীতেই এটা বড় খবর হয়ে যেত। খেলোয়াড়েরা মানসিক ও শারীরিকভাবে আরও বিধ্বস্ত হতে পারত। আমি তো বলব, বাধা না দিয়ে আমরা ভালো করেছি। একটা দুর্ঘটনা এড়িয়েছি।’
কোচ ফাবিও লোপেজ অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ঘরের মাঠে ৪ গোলে হারের পর বলেছেন, ‘অবশ্যই ওই ঘটনার প্রভাব পড়েছে ম্যাচে।’ সালাউদ্দিনও তেমনটাই মনে করেন। জাতীয় দলের কাছে তাঁর প্রত্যাশা ছিল আরও ভালো পারফরম্যান্স, ‘ম্যাচের আগের দিন ১০ জন খেলোয়াড় অনুশীলনে পরে এসে যোগ দিলে ম্যাচে ওটার ছায়া পড়তে বাধ্য। আমি তো খেলোয়াড়দের দোষ দিতে পারছি না।’