বার্তোমেউ গেলেই বার্সায় থেকে যাবেন মেসি

লিওনেল মেসি ও লুইস সুয়ারেজ—যখন দুজনে একসঙ্গে ছিলেন বার্সেলোনায়।ছবি: টুইটার

লুইস সুয়ারেজের জন্য পুরোনো কথা টানতে হচ্ছে। গত আগস্টে বার্সেলোনা ছাড়ার ঘোষণা দিয়ে অনেক জল ঘোলা হওয়ার পর সিদ্ধান্ত পাল্টান লিওনেল মেসি। প্রশ্ন উঠেছিল, থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও বার্সায় ঠিক কতদিন থাকবেন মেসি?

চলতি মৌসুম শেষে তাঁর বার্সা ছাড়ার সম্ভাবনা দেখছেন অনেকেই। সুয়ারেজ অবশ্য অন্য চিত্র দেখছেন। কাতালান ক্লাবটি নতুন পরিচালনা–পর্ষদ গঠন করলে বার্সায় মেসির থাকার সম্ভাবনা দেখেন উরুগুয়ে তারকা।

বার্সেলোনা সভাপতি জোসেপ মারিয়া বার্তোমেউয়ের ওপর ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন মেসি। সুয়ারেজকে একরকম গলা ধাক্কা দিয়ে বার্সা থেকে বের করে দেওয়াতেও বার্তোমেউয়ের প্রশাসনকে দুষেছেন আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড। সুয়ারেজ নিজেও বার্সার এমন আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সংবাদমাধ্যমে। কাল বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচ শেষে এমন কথা বলেন আতলেতিকো মাদ্রিদের এই উরুগুয়ে ফরোয়ার্ড। আর মেসি তো প্রকাশ্যেই বলেছেন, মাঠে বার্সেলোনার দাপট নিশ্চিত করতে বার্তোমেউ প্রশাসনের ‘কোনো দীর্ঘমেয়াদি ভবিষ্যত পরিকল্পনা নেই।’

মাঠের বাইরেও মেসি–সুয়ারেজ অন্তরঙ্গ বন্ধু।
ছবি: টুইটার

সে যা-ই হোক, মেসি যখন বার্সা ছাড়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিলেন তখন তাঁর পাশে ছিলেন সুয়ারেজ। দুজনে অন্তরঙ্গ বন্ধু হওয়ায় সে সময় মেসির সঙ্গে খেলোয়াড়দের মধ্যে সুয়ারেজই তাঁর বাসায় গিয়ে সময় কাটিয়েছেন, কথা বলেছেন নিবিড়ভাবে। বন্ধুত্বকে মর্যাদা দিয়েই ইএসপিএনের সঙ্গে আলাচারিতায় সেসব কথা বলেননি গত মাসে বার্সা ছেড়ে মাদ্রিদের ক্লাবে নাম লেখানো সুয়ারেজ, ‘লিও–র সম্পর্কের প্রতি মর্যাদা থেকেই কী কথা হয়েছিল সেসব বলতে পারব না। তবে ও খুব কঠিন ও জটিল পরিস্থিতির মধ্যে ছিল। ও চলে যেতে চেয়েছিল, ক্লাব ছাড়েনি। আমি ওকে সমর্থন দেওয়ার চেষ্টা করেছি, ওর খেয়াল রেখেছি।’

রোনাল্ড কোমান বার্সার নতুন কোচ হয়ে আসার পর পরিষ্কার বলে দেন, সুয়ারেজ তাঁর পরিকল্পনায় নেই। তখন বার্সা বোর্ড কিংবা ক্লাবের পক্ষ থেকে সুয়ারেজকে আগলে রাখার চেষ্টা করা হয়নি। সে সব অভিজ্ঞতা থেকেই সুয়ারেজ মনে করেন, বার্সার তাঁকে ছেড়ে দেওয়ার অন্যতম কারণ হলো মেসির সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, ‘তারা মেসির পাশ থেকে সরাতে চেয়েছিল আমাকে। মেসির সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্কটা তাদের ভালো লাগেনি। আমার সঙ্গে মেসির ভালো সম্পর্ক তারা হয়তো পছন্দ করেনি।’

বার্সার ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ এ গোলদাতা মনে করেন, আর্জেন্টাইন তারকার চলে যাওয়ার সিদ্ধান্তকে সম্মান করা উচিত ছিল ক্লাবটির। মেসি শেষ পর্যন্ত যেখানেই যোগ দিন না কেন তা সম্মানের চোখেই দেখবেন সুয়ারেজ। তবে বার্সার প্রশাসনিক কাঠামো বদলালে মেসি থেকে যেতেও পারেন বলে মনে করেন সুয়ারেজ, ‘হ্যাঁ, মেসির হয়তো অন্য ক্লাবের হয়ে খেলার সম্ভাবনা আছে। কিন্তু ও যদি ক্লাবে নিজেকে সুখী মনে করে, নতুন বোর্ড আসে—তাহলে সেখানে (বার্সায়) চালিয়ে যেতে চাইবে ও। বন্ধু হিসেবে ও সেখানে ভালো করলে খুশি হবো, অন্য ক্লাবে যোগ দিলেও খুশি হবো।’

কাতালান ক্লাবটির আচরণে ভীষণ কষ্ট পেয়েছেন সুয়ারেজ। কোমানের পরিকল্পনায় তিনি নেই—এ কথা ডাচ কোচের মুখ থেকে শোনার আগেই জানতেন তিনি। সংবাদমাধ্যমে আগেই চাউর হয়ে যায় সে কথা।

কিন্তু সেটি ক্লাবের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সুয়ারেজকে জানানোর ধরন একেবারেই অপেশাদার ছিল। সেটির সমালোচনাও হয়েছে এন্তার। সুয়ারেজ বলেন, ‘ওরা যা করেছে তাতে আমি এবং আমার পরিবার খুব কষ্ট পেয়েছি। কোমান আমাকে ফোনে কথাটা বলার ১০ দিন আগেই জানতাম কী ঘটতে যাচ্ছে। বার্সায় আমি ছয় বছর থেকেছি, সব সময় বলেছি তরুণ স্ট্রাইকার দরকার, কিন্তু তারা কাউকে নিয়ে আসেনি আমার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করার মতো। সংবাদমাধ্যম থেকে কথাটা (ছেড়ে দেওয়ার) জানার আগে তাদের মুখ থেকে কথাটা শোনাটা আমার প্রাপ্য ছিল।’

আতলেতিকোয় যোগ দেওয়ায় লা লিগায় বার্সার মুখোমুখি হতে হবে সুয়ারেজকে। গোল উদযাপন করবেন কি না—এ প্রশ্নের জবাবে উরুগুয়ে তারকা বলেন, ‘বার্সার জালে গোল করলে আনন্দে ভেসে যাব না কিংবা উল্লাস করব না—তবে কোনো একদিকে আঙুল তো দেখাবই।’
সেটি কি বার্তোমেউর দিকেই?