বার্সা-আতলেতিকোকে আবারও সুযোগ দিল রিয়াল

আসেনসিওর এক গোলই বাঁচিয়েছে রিয়ালকেছবি : টুইটার

জিতলেই আতলেতিকো আর বার্সেলোনাকে টপকে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে ওঠা যাবে। জিতলেই টানা দুবছর লিগ জেতার লক্ষ্যটা অনেকটাই পূরণ হয়ে যাবে।

এমন চিন্তা নিয়েই সেভিয়ার বিপক্ষে লিগের মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে মাঠে নেমেছিল রিয়াল মাদ্রিদ। যে সেভিয়া কিছুদিন আগেও লিগের লড়াইয়ে বেশ ভালোভাবেই ছিল, সেই সেভিয়ার সঙ্গে ড্র করে নিজেদের লিগ জয়ের আশাটা আরও কঠিন বানিয়ে ফেললেন বেনজেমা-মদরিচরা।

রিয়ালের মাঠে রিয়ালের শিরোপা স্বপ্নকে ম্লান করতে এসেছিলেন, সে লক্ষ্যে রিয়ালের সাবেক কোচ হুলেন লোপেতেগি বেশ সফল। সেভিয়ার সঙ্গে ২-২ গোলে ড্র করেছে রিয়াল।

সেভিয়ার হয়ে গোল করেছেন ব্রাজিলিয়ান রক্ষণাত্মক মিডফিল্ডার ফের্নান্দো রেগেস ও ক্রোয়েশিয়ার মিডফিল্ডার ইভান রাকিতিচ। দুবার পিছিয়ে পড়া রিয়ালের হয়ে সমতা ফিরিয়েছেন স্প্যানিশ উইঙ্গার মার্কো আসেনসিও ও এডেন হ্যাজার্ড।

গোটা ম্যাচে রিয়ালকে ছাড় দেয়নি সেভিয়া
ছবি : টূইটার

আগের রাতে বার্সা আতলেতিকো নিজেদের মধ্যে ড্র করে রিয়ালের জন্য কাজটা সহজ করে দিয়েছিল। সহজ কাজটা কঠিন বানিয়ে আবারও নিজেদের শিরোপাস্বপ্নটাকে ধূসর করে ফেলল রিয়াল।

রিয়াল যে খুব ভালো খেলেছে, একদমই বলা যাবে না। গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচে ৪-৪-২ ছকে দলকে খেলিয়েছেন জিনেদিন জিদান। আসেনসিওর মতো একজন উইঙ্গারকে বসিয়ে মদরিচ, ক্রুস, কাসেমিরো, ভালভার্দে- চার মিডফিল্ডারকেই খেলিয়েছেন জিদান।

রামোস, মেন্দি কিংবা ভারান ছিলেন না, ফলে রিয়ালের রক্ষণ ছিল যারপরনাই দুর্বল। যে কারণে রক্ষণের ফাঁক বের করতে কোনো প্রথাগত স্ট্রাইকার না নামিয়ে তিন উইঙ্গারকে নামিয়ে দিয়েছিলেন সাবেক রিয়াল কোচ লোপেতেগি। আর্জেন্টিনার দুই উইঙ্গার লুকাস ওকাম্পোস ও পাপু গোমেজ, ওদিকে স্প্যানিশ উইঙ্গার সুসো - এই তিনজনকে নিয়ে গড়ে উঠেছিল সেভিয়ার আক্রমণভাগ।

প্রথম দিকে বল দখলের লড়াইয়ে অনেক বেশি এগিয়ে ছিল সেভিয়া। কিন্তু স্রোতের বিপরীতে ১২ মিনিটে এগিয়ে গিয়েছিল রিয়াল। রাইটব্যাক আলভারো ওদ্রিওসোলার ক্রসে মাথা ঠেকিয়ে দলকে এগিয়ে দেওয়ার পর স্ট্রাইকার করিম বেনজেমা যদিও দেখেন, অফসাইডে ছিলেন ওদ্রিওসোলা।

২২ মিনিটে সাবেক বার্সা মিডফিল্ডার ইভান রাকিতিচের সহায়তায় গোল করেন সাবেক ম্যানচেস্টার সিটি ও পোর্তো মিডফিল্ডার ফের্নান্দো রেগেস। এই গোল নিয়েই বিরতিতে যায় সেভিয়া।

দ্বিতীয়ার্ধে মারসেলোর জায়গায় মিগেল রদ্রিগেজ ও মদরিচের জায়গায় আসেনসিওকে নামিয়েই সুফল পায় রিয়াল। ক্রুসের পাস থেকে আসেনসিওর গোলে সমতা ফেরে। তবে এই সুখ বেশীক্ষণ সয়নি রিয়াল শিবিরে। ৭৮ মিনিটে পেনাল্টিতে গোল করে দলকে আবারও এগিয়ে দেন রাকিতিচ। ওই পেনাল্টির আগে বেশ নাটক হয়েছে, রিয়ালকে যা খেপিয়ে তুলেছে।

৭৫ মিনিটে পাল্টা আক্রমণে সেভিয়া রক্ষণকে ফাঁকি দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া মাদ্রিদ ফরোয়ার্ড করিম বেনজেমাকে বক্সে ফেলে দেন সেভিয়া গোলকিপার, রেফারি প্রথমে সে জন্য মাদ্রিদের পক্ষে পেনাল্টি দিয়েছিলেন। পেনাল্টির ক্ষেত্রে ভিএআর তো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবেই। করেছেও। কিন্তু ভিএআরে যাওয়ার পর গল্পে ১৮০ ডিগ্রি বদল! টিভি পর্দায় দেখার পর রেফারি দিলেন পুরো উল্টো সিদ্ধান্ত—সেভিয়ার পক্ষে পেনাল্টি! কেন? সেভিয়ার যে কর্নার থেকে পাল্টা আক্রমণে উঠে মাদ্রিদ পেনাল্টি পেয়েছিল, সেটির শুরুতে নিজেদের বক্সে কর্নার ঠেকাতে গিয়ে বল লেগেছিল মাদ্রিদ ডিফেন্ডার মিলিতাওয়ের হাতে।

রাকিতিচের উজ্জীবিত খেলা দেখেই কি না, শেষ ৩০ মিনিটে দুর্দান্ত খেলা শুরু করেন ক্রুস। আর তাতেই শেষ মূহুর্তে গোল পেয়ে যায় রিয়াল। যোগ করা ছয় মিনিট সময়ের চতুর্থ মিনিটে ক্রুসের বক্সের বাইরে থেকে শট নেন। কিন্তু তাঁর শট বক্সে দাঁড়িয়ে থাকা হ্যাজার্ডের পায়ে লেগে দিক পরিবর্তন করে সেভিয়া গোলরক্ষক বোনোকে বোকা বানায়। ২-২ স্কোরলাইন নিয়ে মাঠ ছাড়ে রিয়াল।

এই ড্রয়ের ফলে ৩৫ ম্যাচ শেষে দ্বিতীয় স্থানে থাকা রিয়ালের পয়েন্ট এখন ৭৫, যা তৃতীয় স্থানে থাকা বার্সেলোনার সমান। লা লিগার নিয়মানুযায়ী পয়েন্ট সমান হলে গোল ব্যবধান নয়, প্রথমে দেখা হয় ওই দুই দলের মুখোমুখি লড়াইয়ে কে জিতেছে। আর এখানেই মেসিদের চেয়ে এগিয়ে বেনজেমারা। ৭৭ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে আতলেতিকো।

শীর্ষে থাকা আতলেতিকো শেষ তিন ম্যাচ খেলবে রিয়াল সোসিয়েদাদ, ওসাসুনা ও রিয়াল ভায়াদোলিদের বিপক্ষে। তৃতীয় স্থানে থাকা বার্সেলোনা লড়বে লেভান্তে, সেলতা ভিগো ও এইবারের বিপক্ষে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা রিয়ালের বাকি লিগ ম্যাচগুলো গ্রানাদা, অ্যাথলেটিক বিলবাও ও ভিয়ারিয়ালের সঙ্গে।