কী শাস্তি হতে পারে বার্সা, রিয়াল, জুভেন্টাসের?

ইউরোপিয়ান সুপার লিগ আয়োজনের চেষ্টা ভেস্তে গেছে। উয়েফা এখন শাস্তি দেওয়ার কথা ভাবছে সুপার লিগের ভাবনা থেকে বেরিয়ে না আসা তিন ক্লাবকে।ছবি: টুইটার

ইউরোপিয়ান সুপার লিগ প্রায় মৃত, এটা বলতে গেলে সর্বজনস্বীকৃত। ‘প্রতিষ্ঠাতা’ ১২ ক্লাবের মধ্যে ৯টি এরই মধ্যে সরে গেছে। কিন্তু রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনা ও জুভেন্টাস এখনো গোঁ ধরে বসে আছে।

উয়েফা কাল তাই ঘোষণা করেছে, যে ৯ ক্লাব ফিরে আসার ঘোষণা দিয়েছে, তাদের অল্প কিছু জরিমানা দিয়ে ছাড় দেওয়া হবে। কিন্তু বার্সা-রিয়াল-জুভের ভাগ্যে অপেক্ষা করছে বড় শাস্তি।

উয়েফা সভাপতি আলেক্সান্দোর সেফেরিন বিবৃতিতে বলেছেন, প্রস্তাবিত ‘সুপার লিগ’ থেকে সরে আসার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করা ক্লাবগুলোর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার সব রকম অধিকার উয়েফার আছে।

ইউরোপিয়ান সংবাদমাধ্যমেও গুঞ্জন, উয়েফার সংশোধনের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে বিদ্রোহী লিগকে আঁকড়ে পড়ে থাকলে বড় শাস্তিই পাবে এই তিন ক্লাব।

তাদের চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হতে পারে, এমন একটা গুঞ্জন তো অনেক আগে থেকেই শোনা যাচ্ছিল। স্প্যানিশ রেডিও কাদেনা কোপেকে উদ্ধৃত করে বার্সেলোনাভিত্তিক স্প্যানিশ দৈনিক স্পোর্তও কাল আবার লিখেছে, বার্সা-রিয়াল-জুভের শাস্তি হবে ইউরোপিয়ান টুর্নামেন্টে দুই বছরের নিষেধাজ্ঞা।

আরও পড়ুন

সেফেরিন নাকি এমন শাস্তি দেওয়ার কথাই ভাবছেন। ইস্তাম্বুলে ২৬ মে এবারের চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালের পর শাস্তির কথা প্রস্তাব করবেন তিনি। যদিও এই তিন ক্লাবকে বাদ দিলে চ্যাম্পিয়নস লিগের আকর্ষণ, বিপণনমূল্য এসবে ধস নামার শঙ্কা থাকেই!

রিয়াল মাদ্রিদ সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ।
ছবি: টুইটার

কিন্তু এসবই তো গুঞ্জন। আসলে কী শাস্তি অপেক্ষা করছে মেসির বার্সা, রামোসের রিয়াল কিংবা রোনালদোর জুভেন্টাসের জন্য? মাদ্রিদভিত্তিক স্প্যানিশ দৈনিক মার্কা সেটা বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেছে। প্রথম আলোর পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরা হলো...

বিদ্রোহী সুপার লিগের ১২টি ক্লাবের মধ্যে ৯টির ফিরে আসার আবেদন উয়েফা মেনে নিয়েছে। তিনি এখনো সুপার লিগকে আঁকড়ে ধরে রাখা তিন ক্লাবের বিরুদ্ধে শাস্তির হুমকি আছে।

রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনা ও জুভেন্টাস এখনো কার্যত সুপার লিগের সদস্য, অন্য ৯ ক্লাব এই টুর্নামেন্ট থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রেখেছে। তো, এরপর কী হবে? এই পরিস্থিতি বুঝতে কোন কোন প্রশ্নগুলোর উত্তর বুঝতে হবে?

উয়েফা সভাপতি আলেক্সান্দার সেফেরিন।
ছবি: টুইটার

১. রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনা ও জুভেন্টাসকে কি আসলেই চ্যাম্পিয়নস লিগের বাইরে রাখা যাবে?

সংক্ষেপে, হ্যাঁ। যদিও এটা কল্পনা করা কঠিন। এমন হতে পারে যে তিন ক্লাবকে ২০২১–২২ (আগামী মৌসুম) চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে বাদ দেওয়া হলো, তবে সেটি না হতে যা করা সম্ভব উয়েফা তা-ই করবে।

উয়েফা খুব ভালো করেই চেষ্টা করে যাবে, যেন এই তিন ক্লাবও বাকি ৯ ক্লাবের মতো একই কাগজে (উয়েফার অধীন টুর্নামেন্টে নিঃশর্তভাবে খেলার চুক্তি) সই করে, কিন্তু সেটাও সহজ হবে না। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি মিটিং হয়েছে দুই পক্ষের, কিন্তু (সমঝোতা না হওয়ায়) তিন ক্লাবকে কড়া ভাষায় চিঠি দেওয়া হয়েছে।

২. সুপার লিগকে ‘গুডবাই?’

উয়েফা আর ১২ বিদ্রোহী ক্লাবের ৯টির হিসাবে সুপার লিগ এরই মধ্যে শেষ হয়ে গেছে। তারা বিশ্বাস করে, তারা (উয়েফার সঙ্গে ক্লাবগুলো) যে চুক্তিতে সই করেছে, সেটাতে এই দিকটি (সুপার লিগ শেষ হয়ে যাওয়া) বেশ ভালোভাবেই ফুটে ওঠে। কিন্তু সবাই একইভাবে দেখছে না। সুপার লিগের প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে অন্য ক্লাবগুলো (অন্য ৯ ক্লাবের কাছে) ক্ষতিপূরণের দাবি নিয়ে ফিরে আসতে পারে। সেটার সঙ্গে অবশ্য উয়েফা এই তিন ক্লাবকে বাদ দেবে কি না, সেটার কোনো সম্পর্ক নেই।

জুভেন্টাস সভাপতি আন্দ্রেয়া আগনেল্লি।
ফাইল ছবি: এএফপি

৩. টিভিস্বত্বের ঝামেলা

তিন ক্লাবকে ইউরোপিয়ান টুর্নামেন্টের বাইরে রাখার যে হুমকি উয়েফা দিচ্ছে, সেটা ফাঁকা বুলি নয়। (সুপার লিগের) অন্য ৯ ক্লাব জরিমানা হিসেবে চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে পাওয়া টিভিস্বত্বের ৫ শতাংশ (চ্যাম্পিয়নস লিগের) অন্য ক্লাবগুলোর জন্য ছেড়ে দেবে। অর্থটা জুভেন্টাস, রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনাকে চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে ছিটকে ফেললে কারণে টিভিস্বত্বে যে ক্ষতির মুখোমুখি হতে হবে, সেটি কিছুটা কমাবে এই অর্থ (সুপার লিগের অন্য ৯ ক্লাবের ৫ শতাংশ জরিমানার অর্থ)।

বাস্তবতা হচ্ছে, স্প্যানিশ বাজারই সবচেয়ে বেশি হারাবে। মুভিস্টার (স্পেনে খেলা সম্প্রচারক কোম্পানি) এরপর রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনার কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ চেয়ে বসবে, কারণ তারা (মুভিস্টার) তখন দাবি করবে, তাদের যে ক্ষতি হচ্ছে, সেটা এই দুই দলের কারণেই (চ্যাম্পিয়নস লিগে না খেলায়) হচ্ছে।

৪. বার্সেলোনার সংশয়

সুপার লিগের বাকি তিন ক্লাবের মধ্যে সংহতিটা দেখতে অলঙ্ঘনীয় মনে হলেও বাস্তবে ব্যাপারটা পুরোপুরি এমন নয়। দেনার দায়ে থাকা বার্সেলোনা তাদের খরচ কমানো ও হিসাবের বইয়ে ভারসাম্য ঠিক করার জন্য সম্ভাব্য সবকিছু করছে। এর পাশাপাশি চেষ্টা করছে মেসির সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করার।

উয়েফা চাইবে সবাইকে এটা দেখাতে যে এই ব্যর্থ প্রকল্প (সুপার লিগ) আঁকড়ে ধরে রাখার কোনো মানে নেই। বিশেষ করে করোনার কারণে এখন ক্লাবগুলো যে আর্থিক অবস্থায় পড়েছে, তাতে তো এই ব্যর্থ প্রকল্প চালিয়ে যাওয়ার অর্থই হয় না। উয়েফা ক্লাবগুলোকে (বার্সা, রিয়াল, জুভেন্টাস) এটা বোঝাতে চায় যে তারা আসলে একে অন্যকে নিচের দিকে টেনে নামাচ্ছে।

কোচ রোনাল্ড কোমানের সঙ্গে বার্সা সভাপতি হোয়ান লাপোর্তা।
ছবি: টুইটার

৫. চ্যাম্পিয়নস লিগ না থাকলে নেইমার ও কিলিয়ান এমবাপ্পে আসবেন?

উয়েফার সঙ্গে কোনো সমঝোতা না হলে রিয়াল মাদ্রিদ, জুভেন্টাস ও বার্সেলোনাকে চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে বাদ দেওয়া হবে। মহামারির কারণে তৈরি হওয়া আর্থিক সংকটের পর এমন কিছুও হলে সেটা ক্লাবগুলোকে আর্থিকভাবে আরও বড় ক্ষতির মুখে ফেলবে।

এখন পর্যন্ত যা অবস্থা, তাতে সামনে কী হবে না হবে, সেটা এখনই বোঝা কঠিন। কী হয়, সেটা দেখতে হলে আগে আরও অনেক প্রশ্নের উত্তর জানতে হবে।