বার্সা-রিয়াল-জুভ চ্যাম্পিয়নস লিগে না থাকলেও খারাপ লাগবে না

সের্হিও রামোস আর মেসি—দুজনই আর নেই, রিয়াল ও বার্সেলোনায়। তাই বলে চ্যাম্পিয়নস লিগেও থাকবে না?ফাইল ছবি

ইউরোপিয়ান সুপার লিগ শুরু হতে না হতেই শেষ হয়ে গেছে। গত এপ্রিলে নতুন এই টুর্নামেন্ট শুরু করার ঘোষণা দিয়েছিল ১২টি ক্লাব। দুই দিন না পেরোতেই এক ধাক্কায় সংখ্যাটা অর্ধেক হয়ে গিয়েছিল। আর কয়েক দিনের মধ্যেই পড়ে রইল শুধু তিনটি ক্লাব—রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনা ও জুভেন্টাস। এই প্রকল্প এখনো শেষ হয়নি বলে মাঝেমধ্যে হুংকার দেওয়া হয় বটে, তবে অন্তত আরও বেশ কিছুদিন সুপার লিগের চেহারা দেখার কোনো সম্ভাবনা নেই।

এদিকে সুপার লিগ নিয়ে গোঁ ধরে থাকায় রিয়াল, বার্সা ও জুভেন্টাসকে বড় শাস্তি দিতে চেয়েছিল উয়েফা। প্রাথমিক শাস্তি হিসেবে চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে তিন ক্লাবকে বের করে দেওয়ার একটা চেষ্টা করা হবে বলে শোনা গিয়েছিল। সেটা আর হয়নি। এ মৌসুমেও চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলছে তিন দল। তবে এই তিন দল না খেললেই ভালো লাগত উয়েফা সভাপতি আলেক্সান্দর সেফেরিনের।

উয়েফা সভাপতি আলেক্সান্দার সেফেরিন সুপার লিগের তিন ক্লাবকে বড় শাস্তি দেওয়ার পক্ষে
ছবি: টুইটার

উয়েফার আর্থিক বণ্টন নীতি পছন্দ না হওয়ায় চ্যাম্পিয়নস লিগের বিকল্প হিসেবে নিজেদের মতো করে একটি নতুন টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে চেয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ, জুভেন্টাস ও বার্সেলোনা। ইউরোপের শীর্ষ ক্লাবগুলো নিজেদের মতো করে একটি লিগে প্রতিবছর খেলবে, প্রায় প্রতি সপ্তাহেই রিয়াল মাদ্রিদ-ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, বার্সেলোনা-লিভারপুলের মতো বড় বড় দলের ম্যাচ দেখা যাবে, এমন লোভনীয় প্রস্তাব নিয়ে হাজির হয়েছিল তারা। কিন্তু ছোট দলগুলোর সুযোগ না থাকা ও ফুটবলে বিভেদ সৃষ্টির এই চেষ্টা সমর্থকদের কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি। তীব্র প্রতিবাদের মুখে সুপার লিগ আয়োজনের ঘোষণার দুই দিনের মধ্যেই ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ছয় ক্লাব সরে এসেছিল।

এরপরই এই প্রকল্প ধাক্কা খেয়েছে এবং এই চিন্তা আঁকড়ে ধরে রাখা তিন ক্লাব উয়েফার ক্ষোভ বাড়িয়ে চলেছে। তিন ক্লাবকে চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে বাদ দেওয়ার চিন্তা করলেও আইনিভাবে সেটা সম্ভব নয়। তবে সেফেরিন সেটা করতে পারলে যে খুশি হতেন, সেটা জানিয়েছেন জার্মান পত্রিকা ডের স্পিগেলের কাছে। ‘ওরা যদি উয়েফা থেকে চলে যেত আমার খারাপ লাগত না। এটা খুবই হাস্যকর যে তারা একটা নতুন প্রতিযোগিতা বানাতে চায়, আবার এ মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগও খেলতে চায়’—বলেছেন উয়েফা সভাপতি।

জুভেন্টাস চেয়ারম্যান আন্দ্রেয়া আনিয়েল্লি (বাঁয়ে), রিয়াল মাদ্রিদ সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ (মাঝে) ও বার্সেলোনা সভাপতি হোয়ান লাপোর্তা - সুপার লিগের তিন মূল হোতা
ছবি: টুইটার

নতুন এই প্রতিযোগিতা চালু করার এ চেষ্টায় তিন ক্লাবের সভাপতির প্রতি তাঁর রাগ লুকানোর কোনো চেষ্টা করেননি সেফেরিন, ‘এই তিন ক্লাবের নেতৃত্বে যাঁরা আছেন, আসলে তাঁরাই অযোগ্য। এই লোকগুলো (রিয়াল সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ, বার্সা সভাপতি হোয়ান লাপোর্তা ও জুভেন্টাস সভাপতি আন্দ্রেয়া আনেয়েল্লি) ফুটবলকে খুন করতে চেয়েছিল।’ সুপার লিগের স্বপ্নটা রিয়াল সভাপতি পেরেজ ও জুভেন্টাস সভাপতি আনেয়েল্লির। একবার আলোচনা শুরু হতেই এতে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন বার্সেলোনার সাবেক সভাপতি জোসেফ মারিয়া বার্তোমেউ। বার্তোমেউ গত বছর দায়িত্ব থেকে সরে গেছেন, তবে নতুন সভাপতি লাপোর্তাও সুপার লিগ আয়োজনের পক্ষে মত দিয়েছেন।

ইউরোপিয়ান সুপার লিগ থেকে বেরিয়ে গেছে নয়টি ক্লাব
ফাইল ছবি: রয়টার্স

করোনাভাইরাসের কারণে ফুটবল বিশ্ব আর্থিকভাবে ধাক্কা খেয়েছে। এর আগেও যে ক্লাবগুলো আর্থিকভাবে খুব একটা ভালো অবস্থায় ছিল তা নয়। টিকে থাকার জন্যই সুপার ক্লাব দরকার এমন এক আরজি শুনিয়ে আসছিলেন রিয়াল সভাপতি পেরেজ। কিন্তু এবারের দলবদলে পিএসজি থেকে কিলিয়ান এমবাপ্পেকে টেনে নিতে ২০ কোটি ইউরোর প্রস্তাব দিয়েছিল রিয়াল। এ নিয়েও খোঁচা দিয়েছেন সেফেরিন, ‘তিনি (পেরেজ) উয়েফার সমালোচনা করে বলেছেন সুপার লিগই শুধু তাদের বাঁচাতে পারে। আবার এদিকে ঠিকই ১৮ কোটি ইউরো দিয়ে এমবাপ্পেকে কিনতে চেয়েছেন।’

সেফেরিনের দাবি, এই প্রকল্পসংশ্লিষ্ট লোকজন তাঁকে হুমকিও দিয়েছে। তাঁকে নাকি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, উয়েফাই সুপার লিগ আয়োজন করুক। কিন্তু সেফেরিন তাতে রাজি হননি। এরপর নাকি তাঁকে হুমকি দিয়ে বলা হয়েছে, এই ক্লাবগুলোর অনেক টাকা এবং উয়েফা হার না মানলে তারা মামলা করে দেবে।