বার্সার কোনোকিছুতে এখন কিছু যায় আসে না সুয়ারেজের

আতলেতিকো মাদ্রিদ তারকা লুইস সুয়ারেজছবি: এএফপি

লুইস সুয়ারেজ এখন আতলেতিকো মাদ্রিদের। পেছনে ফেলে আসা নিকটতম অতীত কি তাঁকে একটু হলেও টানে? সুয়ারেজ স্বীকার করেননি বটে, তবে লিওনেল মেসির সঙ্গে খেলার স্মৃতি যে কাউকেই টানার কথা। সুয়ারেজ সেই স্মৃতির পাতায় মন সঁপে দিলেও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন বার্সেলোনা থেকে।

স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম ‘এএস’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সাবেক ক্লাব বার্সা নিয়ে ঠিক এ সুরেই কথা বলেছেন সুয়ারেজ। আতলেতিকোর হয়ে এটাই প্রথম মৌসুম চলছে তাঁর। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৭ ম্যাচে ৪ গোল করে শুরুটা ভালোই হয়েছে সুয়ারেজের।

আতলেতিকোর জার্সি পরে মৃত্যু পর্যন্ত লড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন উরুগুয়ে তারকা। ফেলে আসা ক্লাব বার্সার জালে গোল করলে উদ্‌যাপন না করার কথাও বলেছেন তিনি। কিন্তু কাতালান ক্লাবটিতে চলমান অস্থিরতায় সুয়ারেজের কোনোকিছুই যায় আসে না—কথায় এমন সুরটা বুঝিয়েছেন তিনি নিজেই।

চ্যাম্পিয়নস লিগের গত মৌসুমে কোয়ার্টার ফাইনালে বায়ার্ন মিউনিখের কাছে ৮ গোল হজম করে বিদায় নেয় বার্সা। এরপরই ক্লাবটির ভেতরে–ভেতরে চলা অস্থিরতা সবার সামনে চলে আসে।

লিওনেল মেসি ক্লাব ছাড়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। কিকে সেতিয়েনের জায়গায় নতুন কোচ হিসেবে রোনাল্ড কোমান এসেই সুয়ারেজকে জানিয়ে দেন, তাঁর পরিকল্পনায় নেই উরুগুয়ে ফরোয়ার্ড। অর্থাৎ সুয়ারেজকে তাঁর দরকার নেই, বার্সা ছেড়ে দেওয়াই উরুগুয়ে তারকার জন্য ভালো।

আতলেতিকোয় এখন সুখেই দিন কাটছে সুয়ারেজের
ছবি: এএফপি

শেষ পর্যন্ত ‘রিলিজ ক্লজ’ নিয়মের মারপ্যাঁচে সিদ্ধান্ত পাল্টে বার্সায় থেকে যাওয়ার কথা জানান মেসি। সুয়ারেজ অবশ্য থাকতে পারেননি। নানা জায়গায় জল ঘোলা করার পর তাঁর নতুন ঠিকানা হয় আতলেতিকো মাদ্রিদ।

ওদিকে বার্সা সভাপতির পদ ছাড়তে হয় জোসেপ মারিয়া বার্তোমেউকে। ক্লাবটির ডিফেন্ডার জেরার্ড পিকে চুক্তি নবায়নের পর কিছুদিন আগে বলেছেন, বার্তোমেউয়ের সরে দাঁড়ানোটা দরকার ছিল। সুয়ারেজকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, বার্তোমেউয়ের পদত্যাগের দিন তাঁর কেমন লেগেছে?

বার্সায় মেসির সঙ্গে দারুণ সব স্মৃতি রয়েছে সুয়ারেজের।
ছবি: এএফপি

সুয়ারেজের সাফ জবাব, ‘দেখুন, বাস্তবতা হলো বার্সেলোনায় যা কিছুই ঘটুক তাতে আমার আর কিছু যায় আসে না। এখন আমি আতলেতিকোর খেলোয়াড়, তাদের জার্সি পরে লড়াই করছি। সেখানে (বার্সেলোনায়) যা যা ঘটেছে সেসব সাইডলাইনে রাখি।’

তা না হয় বোঝা গেল, কিন্তু স্মৃতি, তা–ও বিশেষ করে সুখস্মৃতি এমন জিনিস যা থেকে চাইলেও দূরে থাকা যায় না।

বার্সাতে শিরোপা জয়ের পাশাপাশি মেসির সঙ্গে দারুণ সব স্মৃতি আছে সুয়ারেজের। আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধুও। যোগাযোগটাও পারিবারিক। মেসির জন্য কি মন পোড়ে না সুয়ারেজের?

আতলেতিকো তারকা বুঝিয়ে বললেন, সম্পর্কটা আগের মতোই আছে, ‘আমরা প্রায়ই কথা বলি। জীবন নিয়ে কথা বলি। সেদিন আমার ছেলের জন্মদিন ছিল, আমরা এসব নিয়ে কথা বলেছি। আমাদের সম্পর্কটা ভালো। শুধু ফুটবল নিয়েই কথা হয় না, ব্যক্তিগত ও আবেগমথিত বিষয়ে একে অপরকে সমর্থন দিই।’

৩৩ বছর বয়সী মেসির এ মৌসুমে শুরুটা বরাবরের মতো স্বচ্ছন্দ হয়নি। বয়সের ভার টানছেন—সেটি এখন বোঝা যায়। মেসির শেষ কি তাহলে দেখা যাচ্ছে?

জবাবে সুয়ারেজ বরাবরের মতোই আগলে রাখলেন মেসিকে, ‘৩৩ বছর বয়সে কীভাবে সব সামলাতে হয় ও সেটা জানে। ওকে আগে যে চোখে দেখেছি এখনো ঠিক সেই চোখেই দেখি। ও উপভোগ করছে, এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। হ্যাঁ, অনেক সময় বল কথা শোনে না কিন্তু চেষ্টা করে যেতে হয়—ওর এই চেষ্টাই সব বুঝিয়ে দেয়।’

বার্সার সাবেক কোচ কিকে সেতিয়েন কিছুদিন আগে বলেছেন, মেসিকে সামলানো খুব কঠিন। এ প্রসঙ্গ তুলতেই সুয়ারেজ বুঝিয়ে দিলেন নিজের অবস্থান, ‘কোনো মন্তব্য না করাই ভালো। কারণ তিল থেকে তাল হয়ে উঠতে পারে। লিও–র আশপাশে যারা থাকে সবাই সাধারণত ওর ব্যাপারে মুগ্ধতাই প্রকাশ করে। মাঠে ও অসাধারণ খেলোয়াড়, মাঠের বাইরে অসাধারণ মানুষ। তরুণদের সব সময় সাহায্য করে। পরামর্শ দেয়। এসব বুঝিয়ে দেয় ড্রেসিং রুমে ও কেমন মানুষ।’