বার্সার সন্দেহ, রিয়াল মরিবাকে ভাগিয়ে নিতে চায়

বার্সেলোনার তরুণ মিডফিল্ডার ইলাইশ মরিবা।
ছবি: ইনস্টাগ্রাম

লা মাসিয়ার সেই দিন আর নেই। যে একাডেমি বিশ্বকে দিয়েছে মেসি, জাভি, ইনিয়েস্তা, বুসকেতস, পুয়োল, পিকে, ফাব্রেগাসের মতো খেলোয়াড়, সে একাডেমি থেকে উঠে আসা খেলোয়াড়দের সামর্থ্যের ব্যাপারে এখন বার্সাই সন্দিহান থাকে।

আবার অনেক সময় বার্সায় সুযোগ পাবে না জেনে, না হয় বেতনাদির ব্যাপারে সন্তুষ্ট না হয়ে ক্লাব ছাড়েন লা মাসিয়ার একাধিক খেলোয়াড়।

জাভি সিমন্সের কথাই ধরুন। বার্সার সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় মূল একাদশের অংশ হওয়ার আগেই পিএসজিতে যোগ দিয়েছে প্রতিভাবান এই তরুণ। আগে জাভি-বুসকেতস-ফাব্রেগাসদের জন্য সুযোগ পাওয়া হবে না জেনে বায়ার্নে পাড়ি জমিয়েছিলেন থিয়াগো আলকানতারা।

এই দলে এবার আরেকজন নাম লেখাতে পারেন। তিনি আর কেউ নন, তরুণ মিডফিল্ডার ইলাইশ মরিবা।

কিন্তু এই মরিবাকে নিয়েই বার্সা পড়েছে বিপদে। গত মৌসুমে বার্সার মূল দলে অভিষিক্ত মরিবার সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করতে চায় বার্সা, কিন্তু মরিবা গড়িমসি করছেন। কিন্তু সেখানেই একটা মজার টুইস্ট আছে।

বার্সার ধারণা, গিনিয়ান বংশোদ্ভূত ১৮ বছর বয়সী মিডফিল্ডারের চুক্তি নবায়নে এই গড়িমসির পেছনে হাত আছে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদের! মরিবাকে রিয়াল বেশি বেতনের লোভ দেখানোতেই মরিবা এখন বার্সায় চুক্তি নবায়ন করছেন না, এমনই ধারণা বার্সার।

মরিবাকে নিয়ে বিপদে পড়েছে বার্সা।
ছবি: ইনস্টাগ্রাম

এর আগে জাভি সিমন্সের মতো প্রতিভাবান তরুণকে ধরে রাখতে পারেনি বার্সা। কাতালানরা আগামীর তারকা হিসেবে দেখেছিল তাঁকে, সেই সিমন্সকে নিয়ে গেছে পিএসজি। সিমন্সের অবশ্য কখনো মূল একাদশে খেলা হয়নি। তবে মরিবার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা তা নয়।

গত মৌসুমেই বার্সার কোচ রোনাল্ড কোমান বেশ সুযোগ দিয়েছিলেন ‘নতুন পগবা’খ্যাত তরুণকে। ১৮ ম্যাচে মোট ৬৭২ মিনিট মেসিদের সঙ্গে মাঠে ছিলেন মরিবা। কিন্তু পরবর্তী পগবাকে বার্সেলোনা আগামী মৌসুমে পাবে তো? প্রশ্ন উঠে গেছে।

বার্সার সঙ্গে মরিবার চুক্তি ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। ২০১৯ সালে মরিবার সঙ্গে তিন বছরের জন্য চুক্তি করে বার্সা। তিন বছরে দশ লাখ ইউরো পাবেন মরিবা, চুক্তিতে এমন শর্ত ছিল। বয়সভিত্তিক দলে খেলা একজনের জন্য যেটা বেশ দামি চুক্তি।

সেই চুক্তির আর এক বছর বাকি। এর মধ্যে নতুন করে চুক্তি না করলে আগামী মৌসুমেই ফ্রি-তে দল ছাড়তে পারবেন মরিবা। আর এই নতুন চুক্তি করতে গিয়েই গড়িমসি করছেন এই মিডফিল্ডার, এমনটাই খবর।

বেতনের দাবিতে নাকি বার্সার সঙ্গে মিলছে না তাঁর। ওদিকে বার্সাও সাফ জানিয়ে দিয়েছে, চুক্তিসংক্রান্ত জটিলতার অবসান না ঘটলে মেসিদের সঙ্গে অনুশীলন করতে দেওয়া হবে না মরিবাকে। এই সময়ে কোচ রোনাল্ড কোমানের পরিকল্পনায়ও থাকবেন না মরিবা।

বার্সা মরিবার সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করতে চাইলেও তিনি গড়িমসি করছেন।
ছবি: ইনস্টাগ্রাম

এখানে রিয়াল মাদ্রিদের ভূমিকা কী? মাদ্রিদভিত্তিক ক্রীড়াদৈনিক মার্কা লিখেছে, বার্সেলোনার সন্দেহ, মরিবার চুক্তি নবায়ন না করার পেছনে ইন্ধন আছে রিয়াল মাদ্রিদের। মরিবার প্রতিভা নিয়ে সংশয় নেই, আর এমন খেলোয়াড়কে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর ডেরা থেকে ফ্রি-তে পাওয়া গেলে রিয়ালেরই লাভ! যদিও মরিবার মুখপাত্র ব্যাপারটা অস্বীকার করেছেন। এই সপ্তাহের শেষে আবার বার্সার সঙ্গে বসতে চাইবেন মরিবার মুখপাত্র, এমন গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত যদি বার্সা-মরিবা সমঝোতা না হয়? যদি রিয়ালে চলে যান মরিবা? কোনোভাবে যদি এই দলবদল হয়েই যায়, সে ক্ষেত্রে লুইস ফিগোর পর এই প্রথম বার্সেলোনার মূল একাদশের হয়ে খেলা কেউ সরাসরি রিয়াল মাদ্রিদে নাম লেখাবেন।

ফুটবলবিষয়ক ওয়েবসাইট গোলডটকমের দুই স্প্যানিশ প্রতিবেদক আদ্রিয়া সলদেভিলা ও মারিও কোর্তেগানার প্রতিবেদনে এই সন্দেহের কথাই উঠে এসেছে।
বার্সেলোনা যে মরিবাকে ঘিরে ভবিষ্যতের পরিকল্পনা করছে, এটা বোঝা গিয়েছিল মূল একাদশের হয়ে তাঁর অভিষেকের সময়েই। প্রথমবার ক্লাবের মূল দলে ডাক পাওয়া উপলক্ষে একটা ভিডিও নিজেদের টুইটারে দিয়েছিল বার্সেলোনা।

সেই ছোট্টটি থেকে ক্লাবের বিভিন্ন বয়সভিত্তিক দল হয়ে মরিবার উঠে আসার গল্পই চিত্রিত ছিল ভিডিওতে। সেখানে প্রথমেই দুটি ব্যাপার চোখে পড়েছিল। এক, বয়সভিত্তিক দলগুলোতে শারীরিক গড়নে, শক্তিতে মরিবার সঙ্গে প্রতিপক্ষ দলের খেলোয়াড়েরা যেন পাত্তাই পেতেন না! আর দুই, দূর থেকে জোরালো শটে মরিবার গোল করার সামর্থ্য।

বার্সেলোনার অন্যান্য মিডফিল্ডারের তুলনায় মরিবার একটু আলাদা।
ছবি: ইনস্টাগ্রাম

পরে মূল একাদশের হয়ে বিভিন্ন ম্যাচে মরিবা নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়েছেন। বুঝিয়েছেন, বার্সেলোনার অন্যান্য মিডফিল্ডারের তুলনায় তিনি একটু আলাদা। আধুনিক মিডফিল্ডারদের মতো খেলা বানিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি প্রেস করা, নব্বই মিনিট টানা দৌড়ে যাওয়া, শট নেওয়া, ট্যাকল করা—সবকিছুই করতে পারেন। যে কারণে বার্সার অনেকেই জর্জিনিও ভাইনালডমকে লিভারপুল থেকে দলে না এনে মরিবাকে আরও বেশি সুযোগ দেওয়ার পক্ষপাতী ছিলেন। পরে যদিও ভাইনালডম বার্সেলোনায় না এসে পিএসজিতে পাড়ি জমান।

এখন মরিবারও বার্সায় না থাকার শঙ্কা!