বার্সেলোনাকে বাঁচিয়েই হাহাকার বাড়ালেন পিকে

পিকে পড়েছেন চোটে।ছবি: রয়টার্স

বার্সেলোনাকে খাদের কিনার থেকে কালই রক্ষা করেছেন জেরার্ড পিকে। কোপা দেল রের সেমিফাইনাল থেকে ছিটকে যাওয়ার শঙ্কা পেয়ে বসেছিল বার্সেলোনাকে। ৯৪তম মিনিটের খেলা চলছিল। দুই লেগ মিলিয়ে তখনো ২-১ ব্যবধানে পিছিয়ে বার্সেলোনা। এমন অবস্থায় পিকের হেডই বার্সেলোনাকে এনে দিয়েছে লাইফলাইন। ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। পিকের গোলে উজ্জীবিত বার্সা অতিরিক্ত সময়ে পেয়ে গেছে জয় এনে দেওয়া গোলটিও।

প্রথম লেগে ২-০ গোলে হেরে যাওয়া বার্সেলোনাই কাল নিজেদের মাঠে সেভিয়াকে ৩-০ গোলে হারিয়ে উঠে গেছে কোপা দেল রের ফাইনালে। দলের শিরোপা জয়ের স্বপ্ন বাঁচানোর পরই বার্সেলোনা সমর্থকদের চোখের মণি হয়ে গেছেন পিকে। চোটের কারণে তিন মাসের অনুপস্থিতি শেষে কয়েক দিন আগেই ফেরা পিকের সে আনন্দ আজ ফিকে করে দিল আরেক দুঃসংবাদ। কাল অতিরিক্ত সময়ে পাওয়া চোট অন্তত তিন সপ্তাহের জন্য আবার তাঁকে ছিটকে দিয়েছে মাঠের বাইরে।

গত বছরের শেষ দিকে আতলেতিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে ডান হাঁটুতে চোট পেয়ে তিন মাস মাঠের বাইরে ছিলেন পিকে। চ্যাম্পিয়নস লিগে শেষ ষোলোতে পিএসজির সঙ্গে ম্যাচ বলে একটু তড়িঘড়ি করেই ফিরে এসেছিলেন। সে ম্যাচে অবশ্য এমন নিবেদনের ফল পাননি। শেষ ষোলোর প্রথম লেগে ঘরের মাঠে পিএসজির কাছে ৪-১ গোলে হেরেছে বার্সেলোনা। তবে দলের জন্য পিকের ভালোবাসা টের পেতে কারও অসুবিধা হয়নি। আর কাল রাতে তো সবাই হাতে-কলমেই দেখল।

কোপা দেল রের ফাইনালে উঠে গেছে দল, লা লিগার দৌড়েও আচমকা আশা ফিরে পেয়েছে বার্সেলোনা। একসময় লিগ শিরোপার দৌড়ে ১০ পয়েন্ট পিছিয়ে পড়া বার্সেলোনা এখন লিগে আতলেতিকোর চেয়ে এক ম্যাচ বেশি খেলে ৫ পয়েন্ট পিছিয়ে। পিকের মতো অনুপ্রেরণাদায়ী একজনের প্রত্যাবর্তনের পর হঠাৎ করেই আলো ফিরেছে বার্সা ক্যাম্পে।

পিএসজির বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফিরতি লেগে পিকের উপস্থিতিটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। কারণ, চ্যাম্পিয়নস লিগের এই ধাপগুলোয় মাঠের খেলার চেয়েও মানসিক শক্তি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। খেলোয়াড়দের হার মানতে না চাওয়ার মানসিকতাই ম্যাচের ভাগ্য বদলে দেয়। পিএসজির মাঠে অন্তত চার গোল ব্যবধানের জয়ের চ্যালেঞ্জের সামনে পিকেকে খুব করেই দরকার বার্সেলোনার।

এমন অবস্থাতেই মন খারাপ করা খবরটি পেলেন এই ৩৩ বছর বয়সী স্প্যানিশ ডিফেন্ডার। ডান হাঁটুতে লিগামেন্টে আবার টান পড়েছে তাঁর। এতে তিন সপ্তাহের মতো তাঁকে বাইরে থাকতে হবে বলে জানাচ্ছে স্প্যানিশ ক্রীড়া দৈনিক এএস। আনুষ্ঠানিক এক বিবৃতিতে ক্লাব কর্তৃপক্ষ অবশ্য জানিয়েছে, ‘আজ সকালে করা পরীক্ষা ও মেডিকেল অনুসন্ধানে জানা গেছে, জেরার্ড পিকের ডান হাঁটুর মিডিয়াল কোলাটেরাল লিগামেন্টে টান পড়েছে। তিনি খেলা থেকে ছিটকে গেছেন এবং পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শেষেই কবে তাঁকে পাওয়া যাবে সেটা জানা যাবে।’

চোটে পড়ে কাতরাচ্ছেন পিকে।
ছবি: রয়টার্স

নভেম্বরে ডান হাঁটুর লিগামেন্টেই তৃতীয় মাত্রার চোট পেয়েছিলেন পিকে। এবার চোটটা দ্বিতীয় মাত্রার। সাধারণত দ্বিতীয় মাত্রার চোট থেকে সেরে উঠতে তিন সপ্তাহ সময় লাগে।
১০ মার্চ চ্যাম্পিয়নস লিগে পিএসজির সঙ্গে ফিরতি ম্যাচ বার্সেলোনার। পিকের এ চোট সে ম্যাচের রক্ষণ নিয়ে আবার নতুন করে ভাবতে বাধ্য করবে বার্সা কোচ রোনাল্ড কোমানকে।

এই সপ্তাহে সেভিয়ার বিপক্ষে দুই ম্যাচে, অর্থাৎ শনিবার লিগের ম্যাচে আর গতকাল কোপা দেল রের ম্যাচে রক্ষণের কেন্দ্রে পিকের দুই পাশে ক্লেমঁ লংলে ও অস্কার মিঙ্গেসাকে রেখে দল সাজিয়েছিলেন কোমান। ৩-৪-১-২ ছকে বার্সার ফুটবলও বেশ কার্যকর ছিল, বিশেষ করে প্রতিপক্ষের কাছ থেকে বল দখলের ক্ষেত্রে প্রেসিংয়ে।

সেভিয়ার বিপক্ষে কাল শেষ মুহূর্তে পিকের এই হেডেই বেঁচে গেছে বার্সা।
ছবি: রয়টার্স

পিএসজির বিপক্ষে এখন আবার হয়তো ছক বদলাতে হতে পারে কোমানকে। অবশ্য ছক তো প্রতিপক্ষ অনুযায়ী ম্যাচে-ম্যাচেই বদলাতে পারে, তবে পিকের অনুপস্থিতি বার্সার রক্ষণকে যে ভোগাবে, তা নিয়ে শঙ্কায় প্রায় সব বার্সা সমর্থকই।

পিকে চোট থেকে ফিরে আসার পরই মাঠে ফিরতে পারবেন না। কারণ, এরপরই আন্তর্জাতিক ফুটবল শুরু হবে। আবার বার্সেলোনার জার্সিতে পিকেকে দেখার সম্ভাবনা ৪ এপ্রিল রিয়াল ভায়াদোলিদের বিপক্ষে ম্যাচে। অর্থাৎ চ্যাম্পিয়নস লিগে পিএসজি ম্যাচ ছাড়াও লিগে ওসাসুনা, উয়েস্কা ও রিয়াল সোসিয়েদাদের সঙ্গে দেখা যাবে না পিকেকে।

এমনিতেই দলের রক্ষণে খেলোয়াড় সংকটে ভুগছেন কোমান। লংলে ও সামুয়েল উমতিতির ওপর আস্থা রাখতে পারছেন না বলে একাডেমির রোনাল্ড আরাউহো এবং মিঙ্গেসাকে খেলিয়েছেন মাঝে। এর মধ্যে আরাউহো চোটে পড়েছেন এই সপ্তাহের শুরুতেই। ফলে আগামী ম্যাচে লংলে, উমতিতি ও মিনগেসার মধ্যে থেকে রক্ষণের সমন্বয় ঠিক করতে হবে কোমানকে।