বার্সেলোনাকে হারাতে রিয়ালে নেইমার-এমবাপ্পেকে চান গুতি

এ দুজনের মতো কেউ নেই রিয়ালের আক্রমণে।ছবি: রয়টার্স

মৌসুমের শুরুটা রিয়াল মাদ্রিদের ভালো হয়েছে, এটা বলা যাবে না। তবু আন্তর্জাতিক ফুটবলের বিরতির আগে লিগে শীর্ষে ছিল দলটি। দলবদলে কোনো খরচ না করার সিদ্ধান্তটা তখনো পর্যন্ত মেনে নেওয়া যাচ্ছিল। কিন্তু বিরতি থেকে ফেরার পরই রিয়াল স্কোয়াডের নগ্ন রূপ বেরিয়ে পড়েছে। সপ্তাহের শুরুটাই রিয়ালের হয়েছে ইতিহাস দিয়ে। ঘরের মাঠে এই প্রথম কাদিজের কাছে হেরেছে রিয়াল।

গতকাল চ্যাম্পিয়নস লিগের ধাক্কাটা তো এখনো তাজা। ঘরের মাঠে কাল শাখতার দোনেৎস্কের কাছে প্রথমার্ধেই তিন গোল খেয়ে বসে জিনেদিন জিদানের দল। দ্বিতীয়ার্ধে দুই গোল ফিরিয়ে দিলেও টানা দ্বিতীয় বছর হার দিয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপ পর্ব শুরু করা থামাতে পারেনি রিয়াল। এ অবস্থায় আগামী শনিবার এল ক্লাসিকোতে বার্সেলোনার মুখোমুখি হতে হবে তাদের। এ অবস্থায় বার্সেলোনাকে হারাতে সম্ভব হলে নেইমার ও কিলিয়ান এমবাপ্পেকে রিয়ালে নিয়ে যেতেন ক্লাবের সাবেক তারকা গুতি।

কাল প্রথমার্ধে নিজেদের রক্ষণের ভুলেই তিন গোল খেয়েছে রিয়াল। দ্বিতীয়ার্ধে ভাগ্য ও থিবো কোর্তোয়া বাধা হয়ে না দাঁড়ালে আরও কিছু গোল পেতে পারত শাখতার। কিন্তু জিদানের মূল দুশ্চিন্তা রক্ষণ নয়, তাঁর সব চিন্তা এখন আক্রমণ নিয়ে। গত মৌসুমে লিগ জিতলেও ম্যাচ প্রতি দুটি করে গোল করতে ব্যর্থ হয়েছে দল। এ মৌসুমেও আক্রমণে নতুন কোনো মুখ নেই। যে দুজনের কাঁধে গোল না হোক, গোলের সুযোগ সৃষ্টি করার সব আশা সঁপেছিলেন জিদান সে দুজনই ছিলেন না কাল। মার্টিন ওডেগার্ড চোটের আগেও রিয়াল সোসিয়েদাদের জার্সির সেই ফর্ম দেখাতে পারেননি। আর ক্লাব রেকর্ড গড়ে যাঁকে আনা হয়েছিল সেই এদেন হ্যাজার্ডকে তো রিয়ালের জার্সিতে সুস্থ দেখার আশাই হয়তো ছেড়ে দিচ্ছে ক্লাবের সমর্থকেরা।

গতকাল রিয়ালের আক্রমণের ভোঁতা রূপ ভালোভাবেই টের পাওয়া গেছে। ম্যাচ শেষে দুই গোল মনে করাতে পারে, তারা দ্বিতীয়ার্ধে ভালোই করেছে। কিন্তু রিয়ালের প্রথম গোলটি এসেছে সম্পূর্ণ একক কৃতিত্বে। ডি-বক্সের বাইরে থেকে লুকা মদরিচ বহুদিন পর তাঁর ট্রেডমার্ক দূর পাল্লার শোটে গোল করেছেন। ভিনিসিয়ুসের গোলটিও একক প্রচেষ্টার। প্রতিপক্ষের রক্ষণের অমনোযোগিতার সুযোগে বল কেড়ে নিয়ে গোল করেছেন ব্রাজিলিয়ান। আক্রমণের বাদবাকি করিম বেনজেমা, লুকা ইয়োভিচ, রদ্রিগো ও মার্কো আসেনসিওদের দেখে মনে হয়নি তাঁরা রিয়াল মাদ্রিদের মতো দলে খেলার ক্ষমতা বর্তমানে রাখেন।

এ মৌসুমে রিয়ালের সর্বোচ্চ স্কোরার এখন পর্যন্ত ভিনিসিয়ুস।
ছবি: রয়টার্স

জিদানের পক্ষে জানুয়ারির আগে নতুন কোনো স্ট্রাইকার আনা সম্ভব নয়। ফলে আরও অন্তত দুই মাস এ আক্রমণভাগ নিয়েই তাঁকে কাজ চালাতে হবে। বাস্তবে জিদান যা করতে পারছেন, কল্পনায় গুতির তো সেটা করতে কোনো বাধা নেই। ২৪ তারিখের এল ক্লাসিকোতে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের হারাতে কাদের দলে চাইবেন এমন প্রশ্নের উত্তরে পিএসজির দুই তারকাকেই মনে ধরেছে গুতির। অবশ্য এ দুজন ছাড়াও রিয়ালের জয়ের জন্য আরেকজনের মাঠে থাকা জরুরি মনে হচ্ছে তাঁর, ‘রিয়াল মাদ্রিদের জন্য আমি নেইমার ও এমবাপ্পেকে নেব। আর বার্সেলোনার জন্য নতুন কাউকে নেব না। শুধু চাইব গ্রিজমান যেন থাকে।’

গত মৌসুমে বার্সেলোনায় যোগ দেওয়ার পর থেকেই অস্তিত্ব সংকটে ভুগছেন আঁতোয়ান গ্রিজমান। মেসির জায়গায় খেলতে পছন্দ করেন, কিন্তু সেখানে খেলার উপায় নেই। ফলে বার্সার জার্সিতে দাগ কাটতে পারেননি। নিষ্প্রভ বার্সেলোনা তারকাকে তাই সুযোগ পেয়েই খোঁচা দিয়েছেন গুতি।

চমকে দেওয়াটা অভ্যাস বানিয়ে নিয়েছেন ফাতি।
ছবি: রয়টার্স

আক্রমণের বর্তমানে যে অবস্থা, নেইমার-এমবাপ্পেকে পাওয়ার সুযোগ যেকোনো রিয়াল সমর্থকই দুহাত বাড়িয়ে নেবেন। কিন্তু বাস্তবে তো আর সেটা সম্ভব নয়। তাই বর্তমান একাদশ হিসেবে রেখে এল ক্লাসিকোর সম্ভাব্য তারকা খুঁজে নিতে হচ্ছে গুতিকে। আর সে ক্ষেত্রে আরেক ব্রাজিলিয়ানকে মনে ধরেছে গুতির। এই ক্লাসিকোর ভাগ্য তরুণেরাই ঠিক করে দেবেন বলে ধারণা রিয়ালের হয়ে তিনটি চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতা এই মিডফিল্ডার, ‘এ ম্যাচে অসাধারণ সব খেলোয়াড় আছে। কিন্তু আমি তরুণদেরই বেছে নেব। বার্সেলোনার হয়ে হয় আনসু ফাতি আর রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে ভিনিসিয়ুস জুনিয়রই ব্যবধান গড়ে দেবে, ওরা দারুণ প্রতিভাবান খেলোয়াড় যারা লা লিগায় অনেক কিছু দিচ্ছে।’

গত লা লিগার ভাগ্য গড়ে দিয়েছিলেন ভিনিসিয়ুস। কালও গোল করেছেন এই ব্রাজিলিয়ান। তবে চ্যাম্পিয়নস লিগে কম বয়সের আরেক রেকর্ড গড়া আনসু ফাতিও আছেন দুর্দান্ত ফর্মে।