বার্সেলোনাকে হারিয়ে দিল দাপুটে রিয়াল

আরেকটি গোল, জয়ের আরেকটু কাছে রিয়াল।ছবি: রয়টার্স

টানা দুই হারে বিপর্যস্ত রিয়াল মাদ্রিদ। ওদিকে চ্যাম্পিয়নস লিগে কদিন আগেই ৫-১ গোলে জয়ের স্বাদ পাওয়া বার্সেলোনা। এ ম্যাচে কে ফেবারিট ছিল, এ নিয়ে খুব বেশি প্রশ্ন ছিল না। বরং এ ম্যাচে হারলে জিনেদিন জিদান চাকরি হারাবেন কি না সে কথা হচ্ছিল। কিন্তু জিদানকে এত সহজে হারাতে রাজি নন রামোসেরা। বার্সাকে তাদেরই মাঠে ৩-১ গোলে হারিয়ে দিল রিয়াল। লিগে বার্সেলোনার মাঠে চার বছর পর জয় পেল রিয়াল।

কী ছিল না ম্যাচে? শুরু থেকে দম আটকানো ফুটবল, টান টান উত্তেজনা। মাঠের এপার থেকে ওপারে গতিময় ফুটবল। মেসি-বেনজেমাদের স্কিল, দেস্ত-ভিনিসিয়ুসদের গতি। আর এল ক্লাসিকোর অবিচ্ছেদ্য অংশ বিতর্ক। আজও বিতর্ক জাগানো দুটি ঘটনা ছিল ম্যাচে। তাতে একটিতে পেনাল্টি পেয়েছে রিয়াল। আরেকটিতে বার্সেলোনার পেনাল্টির আবেদনে কোনো ফল মেলেনি।

এ ম্যাচে দুই তরুণের ওপর নজর ছিল। নতুন যুগের সূচনা নাকি আনসু ফাতি ও ভিনিসিয়ুস জুনিয়রকে দিয়ে হবে। একুশ শতকে ক্লাসিকোর সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় ফাতি, আর সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতা ভিনিসিয়ুস। কিন্তু ভিনিসিয়ুসের সে গর্বটা ম্যাচের অষ্টম মিনিটেই কেড়ে নিলেন ফাতি। প্রায় মাঝমাঠে নেমে দারুণ এক লব করেছিলেন মেসি। রিয়াল রক্ষণ স্তব্ধ হয়ে দেখল কীভাবে তাদের অতিক্রম করে গেলেন মাত্রই চোট কাটিয়ে ফেরা জর্দি আলবা। তাঁর মাপা পাস থেকে অনায়াসে বল জালে পাঠিয়েছেন ফাতি।

নতুনের কেতন ওড়ানোয় অবশ্য ফাতিকে পেছনে ফেলে দিয়েছেন আরেকজন। ম্যাচের পঞ্চম মিনিটেই বার্সেলোনাকে চমকে দিয়েছেন ফেদেরিকো ভালভার্দে। নিজেদের অর্ধ থেকে করিম বেনজেমার দিকে বল বাড়িয়ে দিয়েছিলেন নাচো। সে বল দারুণ নিয়ন্ত্রণে রেখে ড্রিবলিং করে প্রতিপক্ষের রক্ষণের দিকে এগিয়েছেন বেনজেমা। যখন দেখলেন বার্সার দুই রক্ষণ ও বুসকেতস তাঁকে নিয়েই ব্যস্ত, একদম মেপে বক্সে বল ঠেলে দিয়েছেন ভালভার্দের দিকে। গোলরক্ষককে একা পেয়ে দূরে পোস্টে বল পাঠিয়েছেন এই উরুগুইয়ান।

ভিএআরে দেখা হচ্ছে পেনাল্টি ছিল কি না।
ছবি: রয়টার্স

দুই দলের ফরমেশন ও খেলোয়াড় নির্বাচনই নিশ্চিত করেছে এমন জমজমাট শুরুর। গত বছরই সবচেয়ে বয়স্ক দল নিয়ে মাঠে নামার রেকর্ড গড়া বার্সেলোনা একাদশের গড় বয়স ছিল আজ ২৬, ওদিকে রিয়ালের গড় বয়সটাও ছিল ২৭। তাই প্রথমার্ধে প্রাণ উজাড় করে খেলতে সমস্যা হয়নি কোনো দলের। মৌসুমের শুরু থেকেই ৪-২-৩-১ ফরমেশনে বার্সেলোনাকে খেলিয়েছেন কোচ রোনাল্ড কোমান। কিন্তু ক্লাসিকোতে ফরমেশন বদলে ফেলেছেন কোমান। কুতিনিওকে বাঁদিকে পাঠিয়ে স্ট্রাইকারের ভূমিকায় পাঠানো হয়েছিল ফাতিকে। আর ৪-৪-২ ফরমেশনে মেসিকে নাম্বার টেনের ভূমিকায় পাঠিয়েছিলেন কোমান। ডানদিকে একটু নিচের দিকে দায়িত্বটা ছিল ১৭ বছর বয়সী পেদ্রির। জিনেদিন জিদান সে তুলনায় খুব বেশি চমক দেখাননি। প্রিয় ৪-৩-৩ ফরমেশনেই নামিয়েছেন দলকে। আক্রমণে বেনজেমা-ভিনিসিয়ুসের সঙ্গে ছিলেন মার্কো আসেনসিও। আর মাঝমাঠে ভালভার্দের সঙ্গে ক্রুস ও কাসেমিরো।

জমজমাট এমন ফুটবলেও গোল না বাড়ার দায়টা একটু বয়স্কদের। ফাতি ও ভালভার্দে যেখানে নিজেদের প্রথম সুযোগেই গোল করেছেন, সেখানে দুই তরুণের ঠিক উল্টোটাই করেছেন দুই অভিজ্ঞ। দুই দলেরই মূল গোল ভরসা মেসি ও বেনজেমা গোলের সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করেছেন। ২২ মিনিটে মেসির শট দারুণভাবে ফিরিয়েছেন থিবো কোর্তোয়া। পরের মিনিটেই প্রতি আক্রমণে ওঠা রিয়াল গোল পেতে পারত যদি না বেনজেমা সহজতম এক সুযোগ হাতছাড়া করতেন।

মাঠ এপ্রান্ত ওপ্রান্ত করা এমন ফুটবল খুব বেশিক্ষণ চালাতে পারেনি দুই দল। ২৫ মিনিট যাওয়ার পর দুই দলই খেলা নিয়ন্ত্রণে মন দিয়েছিল। কিন্তু তাতে খেলার সৌন্দর্য কমেনি এতটুকু। গোছানো ফুটবল দিয়েই বারবার আক্রমণে উঠেছে দুই দল। এক মুহূর্তের জন্য মনে হয়নি এ ম্যাচে ছড়ি ঘোরাচ্ছে কোনো দল। বহুদিন পর সমানে সমান লড়া এক ক্লাসিকোর দেখা মিলল প্রথমার্ধে।

দ্বিতীয়ার্ধেও খেলার তীব্রতায় কোনো ছেদ পড়েনি। শুরুটা রিয়াল করলেও ৮ মিনিটের মধ্যেই দুটি গোলের দারুণ সুযোগ পেয়েছিল বার্সেলোনা। ৫৩ মিনিটে প্রায় ফাঁকায় বল পেয়েও হেডটা লক্ষ্যে রাখতে পারেননি কুতিনিও। দ্বিতীয়ার্ধের ১০ মিনিট পেরোতেই মাঝমাঠে বাড়তি একজন থাকার সুবিধা নিতে শুরু করে বার্সেলোনা।

আরেকটু নতুন রেকর্ড গেল ফাতির কাছে।
ছবি: এএফপি

কিন্তু ৫৯ মিনিটে অনেকটা আচমকা খেলার বিপরীতে পেনাল্টি পেয়ে যায় রিয়াল। ক্রুসের এক ফ্রি কিক থেকে হেড নেওয়ার জন্য লাফ দিয়েছিলেন রামোস। তাঁর জার্সি টেনে ধরেন ক্লেমঁ লংলে। প্রথমে রেফারির চোখ এড়ালেও ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি সেটা পেনাল্টি বলেই রায় দেয়। আর পেনাল্টি থেকে গোল করায় তো ইদানীং বিশ্বের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় বলেই বিবেচিত হন রামোস।

৬৯ মিনিটেই উপহার ফিরিয়ে দেওয়ার উপক্রম হয়েছিল রামোসের। কুতিনিওর জোরালো এক শট দারুণভাবে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন কোর্তোয়া। সে বল বক্স থেকে বের করার জন্য মারতে গিয়ে ভারানের গায়ে মেরেছিলেন রামোস। বার্সেলোনা পেনাল্টির দাবি রেফারি মানেননি, ভিএআরও আমলে নেয়নি সে দাবি।

দ্বিতীয় গোলের পরই কিছুটা রক্ষণাত্মক হয়ে পড়ে রিয়াল। মাঠে বাড়তি জায়গা পেয়ে আক্রমণের পর আক্রমণ চালাতে থাকে বার্সেলোনা। কিন্তু গোলের সেরা সুযোগ রিয়ালই পেয়েছে। ৮৫ মিনিটে ক্রুসের দুটি শট দারুণভাবে ঠেকিয়েছেন নেতো। পরের মিনিটেই আবারও বার্সেলোনাকে বাঁচিয়েছেন নেতো।

৯০ মিনিটে আর নেতোও পারলেন না দলের পতন ঠেকাতে। রদ্রিগোর গোল ঠেকাতে গিয়ে ভুল করে বসেন নেতো। সেখানে বল পেয়ে অনেক সময় নিয়ে তবেই বল জালে পাঠিয়েছেন বদলি নামা মদরিচ।