বার্সেলোনায় থাকার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন মেসি

বার্সেলোনাতেই থাকতে চান মেসি।ছবি: রয়টার্স

শুধু আদালতেই যেতে চাননি লিওনেল মেসি। আর সবকিছুই করতে রাজি ছিলেন।

বার্সেলোনার তৎকালীন সভাপতি জোসেপ মারিয়া বার্তোমেউ ও তাঁর বোর্ডের ওপর চরম বিরক্ত হয়ে গত আগস্টে বার্সেলোনা ছাড়ার চেষ্টা করেছিলেন ৩৩ বছর বয়সী আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড। তাঁর ক্লাব ছাড়ার ইচ্ছের কথা ক্লাব সভাপতিকে আগেই জানিয়েছিলেন, কিন্তু তাতে লাভ না হওয়ায় বুরোফ্যাক্স পাঠিয়েছিলেন। মাঝে এক সপ্তাহ তো ফুটবল বিশ্ব কেঁপেছে কাতালান শহরের স্পন্দনে। বার্সেলোনা থেকে একবার মেসির ছাড়ার খবর আসছে, আবার পরক্ষণেই মেসির থেকে যাওয়ার খবর বের হয়।

১০ দিন এমনভাবে চলার পর মেসি এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, তিনি থাকছেন। কারণ, ক্লাব সভাপতি যে ব্যবস্থা করেছেন, তাতে মামলা না করে তাঁর ক্লাব ছাড়ার উপায় নেই। কিন্তু তাঁকে আজকের ‘মেসি’ বানানো ক্লাবের বিপক্ষে মামলা করতে ইচ্ছা হয়নি মেসির।

মেসির চুক্তির যে অবস্থা, তাতে আসছে জুনেই ক্লাব ছাড়তে পারবেন। এ নিয়ে বার্সেলোনা সমর্থকদের শঙ্কা দিন দিন বাড়ছে বই কমছে না। ক্লাবের সভাপতি হওয়ার আশায় থাকা হোয়ান লাপোর্তা মেসিকে ধরে রাখার চেষ্টায় নিত্যনতুন আশার বাণী শোনাচ্ছেন। এবার নতুন এক আশার কথা জানিয়েছেন—মেসির ক্লাব ছাড়ার ইচ্ছা আর নেই। বরং মেসি নাকি এখন নিজ থেকেই চেষ্টা করবেন বার্সেলোনায় থেকে যাওয়ার!

গত কিছুদিনে মেসি ও বার্সেলোনার খেলায় পুরোনো দাপট দেখা যাচ্ছে।
ছবি: রয়টার্স

লাপোর্তা তাঁর নির্বাচনী প্রচারণায় মেসিকে ধরে রাখার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাস দেখাচ্ছিলেন বেশ। কিন্তু করোনার কারণে বার্সেলোনার সভাপতি নির্বাচন ২৪ জানুয়ারির বদলে পিছিয়ে মার্চের প্রথম সপ্তাহে চলে গেছে। এতেও লাপোর্তার আত্মবিশ্বাসে কোনো ঘাটতি দেখা যাচ্ছে না। স্পোর্তের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে মেসির ব্যাপারেই বেশি কথা বলেছেন ২০০৩ সাল থেকে সাত বছর বার্সার সভাপতিত্ব করা লাপোর্তা।

লাপোর্তার দাবি, সব ভুলে এখন আবার বার্সেলোনাকে নিয়ে সম্ভাব্য সব শিরোপা জেতার স্বপ্নে বিভোর মেসি, ‘এখন লা লিগায় আতলেতিকো মাদ্রিদকে ধরা এবং চ্যাম্পিয়নস লিগে পিএসজির সঙ্গে ম্যাচ খেলায় পুরো মনোযোগ মেসির। আমি জানি না ও রোববার (আজ স্প্যানিশ সুপারকাপের ফাইনালে অ্যাথলেটিক বিলবাওয়ের বিপক্ষে) খেলবে কি না। তবে বেঞ্চে ঠিকই থাকবে এবং মেসি সতীর্থদের অনুপ্রেরণা দিচ্ছে, এটাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’

বিলবাওয়ের বিপক্ষে আজ বার্সার ম্যাচটি বাংলাদেশ সময় রাত দুইটায়। এর আগে গত বুধবার রিয়াল সোসিয়েদাদের বিপক্ষে সুপারকাপের সেমিফাইনালে চোটের কারণে খেলা হয়নি মেসির। ফাইনালেও দলের অধিনায়ককে পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদ দেখাননি বার্সা কোচ রোনাল্ড কোমান। এ ম্যাচ না খেললেও মৌসুমের বাকি সময়টা মেসির সেরা রূপ দেখবেন বলেই আশাবাদী লাপোর্তা।

লাপোর্তার ধারণা, সভাপতি পদে তাঁর মতো কাউকে পেলে এবং বর্তমান সতীর্থদের মধ্যে জয়ের ক্ষুধা খুঁজে পেলেই বার্সেলোনাতেই থেকে যাবেন মেসি, ‘দিন দিন ওকে আমি আগের চেয়ে আনন্দিত অবস্থায় পাচ্ছি। সে উপভোগ করছে। আমি জানি সে থাকতে চায় এবং এটাও জানি সে নিজের ক্ষমতার সবকিছু দিয়ে এই ক্লাবে যত দিন সম্ভব থাকার চেষ্টা করবে, যদি ক্লাব ওকে খুশি করার মতো প্রস্তাব দিতে পারে।’

গত কয়েক মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগে বার্সার একের পর এক লজ্জাজনক হার আর মাঠে দল হিসেবে বার্সার ছন্নছাড়া হয়ে পড়ায় বার্সার ‘স্পোর্টিং প্রজেক্ট’ নিয়ে অখুশি ছিলেন মেসি। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতেও এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, বার্সা সব সময় জেতার মতো স্পোর্টিং প্রজেক্ট থাকলে তিনিও ক্লাবে থাকবেন। আগস্টে তাঁর দল ছাড়তে চাওয়ার বড় কারণই ছিল সেই স্পোর্টিং প্রজেক্টের অনুপস্থিতি। কিন্তু মেসি দল ছাড়তে চাওয়ার পরও মেসির ক্ষোভ কমানোর কোনো চেষ্টা বার্তোমেউ করেননি।

আগের মৌসুমেই নেইমারকে আনার কথা ছিল। সেটা করেননি বার্তোমেউ। মেসি নিজেই এ ব্যাপারে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ক্লাব সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে কি না, তাঁর সন্দেহ আছে। আর এই আগস্টে তাঁর অন্য প্রিয় দুই বন্ধুকে ক্লাব বিদায় করে দিয়েছে। প্রথমে আর্তুরো ভিদালকে ইন্টার মিলানের কাছে ছেড়ে দিয়েছে বার্সেলোনা। আর লুইস সুয়ারেজের বিদায়ের অংশটি তো বেশ ন্যক্কারজনকই। ক্লাবের ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতাদের একজনকে মুফতে ছেড়ে দেওয়ার পাকা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আবার সুয়ারেজ যখন আতলেতিকো মাদ্রিদে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, তখন আবার সে দলবদল আটকানোর চেষ্টা চালান বার্তোমেউ।

লাপোর্তা ও মেসির জুটি বার্সেলোনাকে গত দশকে সাফল্য এনে দিয়েছিল।
ছবি: টুইটার

ক্লাবের ইতিহাসের সেরাদের একজনের সঙ্গে এমন আচরণ নিয়েও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ জানিয়েছেন মেসি। এরপর বার্তোমেউর পদত্যাগের ঘটনায় মেসির ক্লাবে থাকার সম্ভাবনা বাড়ালেও নতুন করে ঝামেলা বাড়িয়েছেন কার্লেস তুসকেতস। কোনো নির্বাচিত বোর্ড দায়িত্বে না থাকায় আপৎকালীন দায়িত্ব সারছে একটি কমিটি। সেই কমিটির নেতৃত্বভার তুসকেতসের কাছে। সেই তুসকেতস প্রকাশ্যে বলেছেন, আগস্টে মেসিকে ছেড়ে দেওয়াই উচিত ছিল বার্সেলোনার! কারণ, মেসির বেতন তখন আর দিতে হতো না বার্সেলোনাকে। আর দলবদলের সুবাদেও কিছু অর্থ পেত ক্লাব।

এভাবে ক্লাবের আর্থিক সমস্যার কথা সবার কাছে বলে ফেলা এবং তাতে মেসির বেতনকে এভাবে সমস্যা হিসেবে দেখানোটা ভালোভাবে নেওয়ার কথা নয় কারওরই। মৌসুমের শুরুতে মেসির ঠিক মেসির মতো না খেলাটাও যেন এসব কথাবার্তারই প্রতিফলন। মেসি অবশ্য ধীরে ধীরে কোচ রোনাল্ড কোমানের অধীনে ছন্দ ফিরে পেয়েছেন। দলও গত কিছুদিন দারুণ খেলছে। লাপোর্তাও তাই তাঁর নির্বাচনী প্রচারণায় মেসিকে ধরে রাখার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাস দেখাচ্ছেন।