বাহরাইনের কাছে এই হারে গ্লানি নেই বাংলাদেশের

বাংলাদেশের গোল পোস্টে বাহরাইনের আক্রমণছবি: এএফসি

ম্যাচ শুরু হয়নি তখনো। হালকা গা গরম শেষে বাংলাদেশ দল ড্রেসিংরুমে যাওয়ার পথে একদল প্রবাসী বাংলাদেশি স্লোগান তোলে, ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ।’ জামাল ভূঁইয়াকে দেখে তাঁর নাম ধরে স্লোগান দিতে থাকেন প্রবাসীরা। কোচ হাভিয়ের কাবরেরা আঙুল উঁচিয়ে শুভেচ্ছা জানান তাঁর দলকে সমর্থন দিতে আসা এই প্রবাসী বাংলাদেশিদের।

ততক্ষণে এই প্রতিবেদক প্রেসবক্সে এবং বাংলাদেশি পরিচয় জেনে বাহরাইনের স্পোর্টস নিউজের সাংবাদিক মাজিন আল হাম্মাদি নিজ থেকেই আরবি উচ্চারণে বলে ওঠেন, ‘বাহরাইন উইন ফোর-নিল। আই অ্যাম শিওর।’

তাঁর দাবির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার উপায় থাকে না। কারণ, বাহরাইনের সঙ্গে বাংলাদেশের র‌্যাঙ্কিংয়ের পার্থক্য প্রায় ১০০। গত ৫টি এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্বে টানা খেলা এই দলটির বাংলাদেশের বিপক্ষে সহজে জিতবে, এটাই ধরে নিয়েছিলেন সবাই।

কার্যত হয়েছেও তা-ই। শারীরিক শক্তি আর দক্ষতায় অনেক এগিয়ে থাকা বাহরাইন বুঝিয়ে দিয়েছে পার্থক্যটা। কুয়ালালামপুরের বুকিত জলিল জাতীয় স্টেডিয়ামে দুই অসম শক্তির লড়াইয়ে ফল তাই অবাক করছে না। অনুমিতভাবেই এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বের প্রথম ম্যাচে বাহরাইন জিতেছে। তবে ‘মাত্র’ ব্যবধান ২-০।

বাংলাদেশের গোলকিপার আনিসুর আবারও বারের নিচে ছিলেন বিশ্বস্ত প্রহরী। দুটি গোল তাঁর বিপক্ষে হলেও আনিসুর দলকে রক্ষা করেছেন অন্তত ৫ থেকে ৬ বার। তাঁর গোলকিপিং নজর কেড়েছে সবারই।

বাহরাইন অ্যাটাকিং থার্ডে প্রচুর পাস খেলেছে। পাসিংয়ে গোলকধাঁধায় ফেলে দেয় তারা বাংলাদেশের রক্ষণকে। তবে গোলে শট নেওয়ার মতো জায়গা বের করতে পারছিল না প্রথম ৩০ মিনিট। যে কয়বার বের করেছে, আনিসুর ছিলেন প্রস্তুত।

বাহরাইনের বিপক্ষে বল দখলের লড়াইয়ে বিপলু আহমেদ
ছবি: এএফসি

৯ মিনিটে কর্নার থেকে ডিফেন্ডার মোহাম্মদ বেনাদির হেড আনিসুর আটকান দারুণভাবে। ১৪ মিনিটে আরেকটি শট আটকান। ২১ মিনিটে ডি-বক্সের একটু সামনে চেক রিপাবলিকে খেলা নাম্বার নাইন আবদুল্লাহ ইউসুফকে ফাউল করেন বিশ্বনাথ। খুব ভালো জায়গা থেকে ফ্রি-কিক পেয়েও গোল করতে পারেনি বাহরাইন। কমাইল হাসানের শট গোলকিপার ধরে নেন। পরের মিনিটে আনিসুর আরেকটি শট আটকান।

অনুমিতভাবেই ফটোগ্রাফাররা সব ক্যামেরা তাক করে বসেছিলেন বাংলাদেশের পোস্টের দিকে। ফটোগ্রাফাররা গোলের দৃশ্য অবশেষে পেয়েছেন ৩৪ মিনিটে। কমাইল হাসানের কর্নারে কুয়েত লিগে খেলা আলী হারাম দারুণ হেডে করেন ১-০।

গোলকিপার আনিসুর বুঝতেই পারেননি। নিখুঁত এক গোল। ৪২ মিনিটে মিডফিল্ডার কোমাইল আল আসওয়াদ বক্সের বাইরে থেকে দারুণ এক গড়ানো শটে করে দেন ২-০।

প্রথমার্ধে প্রবল আক্রমণ সামলে সুযোগ পেলে বাংলাদেশও উঠেছে আক্রমণে। ২৬ মিনিটে জামাল ভূঁইয়া বলটা ভালোই বাড়িয়ে দেন বাঁ দিকের উইংয়ে রাকিবকে। রাকিবের ক্রস থেকে সাজ্জাদ বলের নাগাল পাননি।

বলে-পায়ে সংযোগ হলে হয়তো গোলের একটা সুযোগ থাকত। ৩০ মিনিটে বক্সের সামনে ফ্রি-কিক পায় বাংলাদেশ। জামালের ফ্রি-কিক পোস্টে বাতাস লাগিয়ে চলে যায় বাইরে।

দ্বিতীয়ার্ধে তুলনামূলক বাংলাদেশ বল পায়ে রেখেছে বেশি। প্রথমার্ধে যা একেবারেই পারেনি। ফলে বাহরাইন আরও বেশি চড়াও হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। আসলে মাঠে নামার আগেই যদি প্রতিপক্ষের আক্রমণ রোখাই হয় মূল লক্ষ্য, তাহলে বল পায়ে না রাখতে পারাই স্বাভাবিক। এই সময় বাংলাদেশ কোচ চেয়েছিলেন ‘লো ব্লক’ করে বাহরাইনকে আটকাতে। সেটা অনেকটাই পেরেছেন তিনি।

রক্ষণ সামালাতে ব্যস্ত বিশ্বনাথ ঘোষ
ছবি: এএফপি

বাংলাদেশকে আসলে অনেকটা মনের বাঘেই খেয়েছে। একটু সাহস করে বল পায়ে রাখতে পারলে যে প্রতিপক্ষ সুযোগ কম পায়, সেটা দেখা গেছে দ্বিতীয়ার্ধে। তবে আরও বড় ব্যবধান হলেও বলার কিছু ছিল না।

দ্বিতীয়ার্ধে নিজেরা একটু বল চালাচালি করার ফলেই কি না, বাহরাইন এই অর্ধে কোনো গোল পায়নি। ফলে শেষ পর্যন্ত বাহরাইনকে ২-০ গোলে রুখে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। এটা এক ধরনের মানসিক জয়ও বাংলাদেশের। তাই ম্যাচ শেষে করতালি পেয়েছেন বাংলাদেশের খেলোয়াড়েরা।

তবে ম্যাচ শুরুর আগে বাহরাইনের যে সাংবাদিক বলেছিলেন ফোর-নিল, ম্যাচ শেষ কিছুটা মুখ কালো তাঁর। এবার বললেন, ‘টু মেনি মিস ফ্রম বাহরাইন।’ তবে বাংলাদেশকে কৃতিত্ব দিতে ভোলেননি, ‘বাংলাদেশ তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী ভালো রক্ষণ করেছে।’

গোলের পর বাহরাইনের খেলোয়াড়েরা
ছবি: এএফপি

ঠিক বলেছেন ওই সাংবাদিক। ভালো রক্ষণ করে আজ হেরেছে বাংলাদেশ, এই হারে কোনো গ্লানি নেই! তবে মাঠের খেলায় ভুল পাস, বল পায়ে রাখতে না পারার দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠা জরুরি।

বাংলাদেশ দল: আনিসুর , ইয়াছিন আরাফাত, টুটুল হোসেন, বিশ্বনাথ ঘোষ, রিমন হোসেন, জামাল ভূঁইয়া, আতিকুর রহমান, বিপলু আহমেদ, মোহাম্মদ ইব্রাহিম, রাকিব হোসেন, সাজ্জাদ হোসেন।

হলুদ কার্ড: রাকিব (বাংলাদেশ)।