বায়ার্ন না সিটি—কাকে এড়াতে চাইবে রিয়াল মাদ্রিদ?

কোয়ার্টার ফাইনালে কাকে চাইবে রিয়াল?ছবি: রয়টার্স

চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালের আট দল নিশ্চিত হয়ে গেছে কাল রাতে। ম্যানচেস্টার সিটি ও বায়ার্ন মিউনিখের আরও একবার শেষ আট নিশ্চিত করার পর এখন সবার দৃষ্টি আগামীকালে। শুক্রবারই যে জানা যাবে শেষ আটে কারা পাচ্ছে কাকে।

গত সপ্তাহেই এই টুর্নামেন্টের সবচেয়ে বড় দুই তারকা ছিটকে পড়েছেন। লিওনেল মেসি ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর বিদায়ের পর তারকাদ্যুতি কিছুটা হলেও কমে গেছে। ইউরোপের সেরা টুর্নামেন্টের আকর্ষণ এখন ক্লাবগুলো ঘিরেই। আর সেদিক থেকে সবচেয়ে বড় নাম তো রিয়াল মাদ্রিদ।

২০১৮ মৌসুমের পর থেকে চ্যাম্পিয়নস লিগে ব্যর্থ রিয়াল আবারও আশা করছে এই টুর্নামেন্ট জেতার। তবে সে লক্ষ্য পূরণ করতে হলে সেমিফাইনালে ওঠার পথে কঠিন প্রতিপক্ষকে এড়িয়ে যেতে চাইবে দলটি। দল এখনো সেভাবে গুছিয়ে উঠতে না পারায় ফর্মে থাকা দলের সঙ্গে যত দেরিতে দেখা হয়, ততই ভালো। আর সে ক্ষেত্রে কাকে এড়াতে চাইবে রিয়াল?

বেনজেমাই শুধু রিয়ালের হয়ে নিয়মিত গোল করছেন।
ছবি: রয়টার্স

জিনেদিন জিদান এমন প্রশ্নে আপত্তি তুলতে পারেন। বহু দিন পর আতালান্তার বিপক্ষে ভালোই প্রাধান্য বিস্তার করতে দেখা গেছে রিয়ালকে। সাধারণত প্রেসিং ফুটবলের বিপক্ষে পা হড়কালেও সেদিন আতালান্তার প্রেসকে নখদন্তহীন বানিয়ে ফেলেছিলেন রিয়াল কোচ। সে ম্যাচ দেখে এতটাই আত্মবিশ্বাসী হয়েছেন যে লিগ ও চ্যাম্পিয়নস লিগ—দুই শিরোপা জেতার কঠিন লক্ষ্যকেই এখন সম্ভব বলে জানিয়েছেন জিদান। এমন অবস্থায় তাই কোনো দলকেই এড়াতে চাওয়ার জন্য খুব বেশি আগ্রহ প্রকাশ করার কথা নয় তাঁর।

বাস্তবতা অবশ্য ভিন্ন কিছু বলতে পারে। চ্যাম্পিয়নস লিগের সবচেয়ে সফল দলটি ইউরোপে গত কিছুদিন ভালো ফল পাচ্ছে না। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো চলে যাওয়ার পর টানা দুই বছর কোয়ার্টার ফাইনালেই উঠতে পারেনি দলটি। এবার তো গ্রুপ পর্ব থেকেই ছিটকে যাওয়ার সম্ভাবনা জেগেছিল। গ্রুপে নিজেদের শেষ ম্যাচ জিতে তবেই ইউরোপা লিগে খেলার সম্ভাবনাটা চাপা দিয়েছে রিয়াল। দলে করিম বেনজেমা বাদে পরীক্ষিত গোল স্কোরার নেই। এর প্রভাব লিগ ও চ্যাম্পিয়নস লিগে ভালোভাবেই টের পাচ্ছে রিয়াল। গত মৌসুমে বেনজেমার পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা ছিলেন পেনাল্টির দায়িত্ব নেওয়া সের্হিও রামোস। এ মৌসুমে বেনজেমার চেয়ে ১৫ গোল কম করে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা এখন পর্যন্ত কাসেমিরো।

গোল বের করতে না পারলে শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিপক্ষে জয় পাওয়া কঠিন। এবার চ্যাম্পিয়নস লিগে স্পেন থেকে আর কোনো দল টিকে নেই। এ অবস্থায় রিয়ালের সাতটি দলের সঙ্গেই ম্যাচ পড়ার সম্ভাবনা আছে। অর্থাৎ কোয়ার্টার ফাইনালে পোর্তো, বরুসিয়া ডর্টমুন্ড, প্যারিস সেন্ট জার্মেই, লিভারপুল, চেলসি, ম্যানচেস্টার সিটি ও বায়ার্ন মিউনিখ—সবার সঙ্গেই খেলার সম্ভাবনা আছে রিয়ালের। কাল বাংলাদেশ সময় বিকেল পাঁচটাতেই জানা যাবে। সেখানেই সেমিফাইনালের সম্ভাব্য প্রতিপক্ষের নামও জানা যাবে।

বায়ার্নের মুখোমুখি হতে চাইবে না কেউই।
ছবি: রয়টার্স

চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাস চিন্তা করলে এখন অবশিষ্ট দলগুলোর মধ্যে রিয়াল ছাড়া আর প্রভাবশালী দল বাকি আছে বায়ার্ন মিউনিখ ও লিভারপুল। সাবেক চ্যাম্পিয়ন হিসেবে পোর্তো, ডর্টমুন্ড ও চেলসিও আছে। আর ঐতিহাসিকভাবে সবচেয়ে পিছিয়ে আছে পিএসজি ও ম্যানচেস্টার সিটি। নেইমার-এমবাপ্পেদের দল গতবার অন্তত ফাইনালে উঠেছিল। ওদিকে ম্যানচেস্টার সিটির এ টুর্নামেন্টের সেরা সাফল্য বলতে ২০১৬ সালে সেমিফাইনাল খেলা। এই রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষেই। পেপ গার্দিওলার অধীনে গত চারবারে সে অর্জনটাও আর ছোঁয়া হয়নি দলটির।

রিয়াল মাদ্রিদ যদি কোনো দলকে এড়াতে চায়, সেটা অবশ্যই বায়ার্ন মিউনিখ। গত মৌসুমে সম্ভাব্য সব শিরোপা জেতার পথে বার্সেলোনাকে ৮-২ গোলে উড়িয়ে দেওয়া বায়ার্ন এবার অতটা ভয়ংকর রূপে নেই। তবু ইতালির লাৎসিওকে ঘরের মাঠে ৪-১ গোলে হারিয়েই তারা কোয়ার্টার ফাইনালে এসেছে। আর ফর্ম বিবেচনা করলে যেকোনো বিচারেই আপাতত ম্যানচেস্টার সিটিকে এড়াতে চাইবে রিয়াল। গতবার শেষ ষোলোতে সিটির কাছে দুই লেগেই ২-১ ব্যবধানে হেরেছিলেন জিদান ও তাঁর শিষ্যরা। জানুয়ারির পর থেকেই দুর্দান্ত ফর্মে থাকা সিটি মাঝে টানা ২১ ম্যাচ জয় ছাড়া মাঠ ছাড়েনি। শেষ ষোলোতে ম’গ্লাডবাখকে যেভাবে হারিয়েছে, সেটাও ভীতি জাগানিয়া। প্রথম ২০ মিনিটের মধ্যে ২-০ গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর প্রতিপক্ষের কথা ভুলে নিজেদের মধ্যে রীতিমতো অনুশীলন করেছে পেপ গার্দিওলার দল।

ঐতিহ্যের দিক থেকে আরেক রিক্ত দলেরও মুখোমুখি হওয়ার ইচ্ছা না জাগতে পারে রিয়ালের। গত মৌসুমে সর্বশেষ পিএসজির দেখা পেয়েছিল লস ব্লাঙ্কোরা। পার্ক দে প্রিন্সেসে এমবাপ্পে-নেইমারবিহীন পিএসজির কাছে ৩-০ গোলে হেরেছিল রিয়াল। ঘরের মাঠেও ২-২ গোলে ড্র করেছিল তারা। আর পিএসজি চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের জন্য কতটা মরিয়া, সেটা ক্যাম্প ন্যুতে টের পাওয়া গেছে। গত মাসের শেষে বার্সেলোনাকে তাদেরই মাঠে ৪-১ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে পিএসজি, সেটাও চোটাক্রান্ত নেইমারকে ছাড়াই। কোয়ার্টার ফাইনালে দলের মূল তারকাকে নিয়েই নামবে দলটি।

সিটিও ভয় জাগানো ফুটবল খেলছে।
ছবি: রয়টার্স

এদের তুলনায় দুই ইংলিশ ক্লাব চেলসি ও লিভারপুলের মুখোমুখি হওয়াটাই হয়তো সুবিধাজনক হবে রিয়ালের জন্য। নতুন কোচ টমাস টুখেলের অধীনে এখনো অপরাজিত চেলসি। কিন্তু তাদের খেলার ধরন নিয়ে এখনো প্রতিপক্ষের দুশ্চিন্তায় পড়ার মতো উপকরণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। আর ইউরোপে চোটাক্রান্ত খেলোয়াড়ের তালিকায় রিয়ালের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার দৌড়ে থাকা লিভারপুল এখনো তাদের সেরা ডিফেন্ডারকে ফিরে পায়নি। ভার্জিল ফন ডাইকবিহীন দলটিও রিয়ালের মতোই ভুগছে গোলখরায়। আর ঘরের মাঠে টানা ছয় লিগ ম্যাচ হারা লিভারপুল তাদের সবচেয়ে শক্তির জায়গাটা হারিয়ে ফেলেছে। অ্যানফিল্ড এখন আর ভয় জাগাচ্ছে না প্রতিপক্ষের মনে—যে মাঠে আক্রমণের মূল খেলোয়াড়দের ছাড়াই বার্সাকে ৪ গোল দিয়েছিল লিভারপুল।

জিনেদিন জিদান সবচেয়ে খুশি হবে ডর্টমুন্ড বা পোর্তোকে পেলে। সেভিয়াকে হারিয়েই কোয়ার্টার ফাইনালে এসেছে ডর্টমুন্ড। দলে আরলিং হরলান্ড নামের এক গোলমেশিন আছে। জুড বেলিংহাম, মার্কো রয়েস ও থরগান হ্যাজার্ডের মতো প্লেমেকারও আছে দলটিতে। তবু বুন্দেসলিগায় শীর্ষ চারে থাকতে হিমশিম খাচ্ছে দলটি। শুধু হরলান্ডের গতি আর গোল–ক্ষুধাই একমাত্র ভয়। দুর্দান্ত একটি দলের চেয়ে দুর্দান্ত একজনের মুখোমুখি হওয়া সহজ। ওদিকে পোর্তো প্রমাণ করে দিয়েছে তাদের নিয়েও হেলাফেলা করা ঠিক হবে না। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর জুভেন্টাসকে হারিয়ে দিয়েছে তারা।

আবার দলটি জুভেন্টাস বলেই পোর্তোকে পেতে চাইবে রিয়াল। জুভেন্টাস যে কারণে পোর্তোর সঙ্গে পেরে ওঠেনি, সে দিকটা যে শক্তিশালী রিয়ালের। ফুটবলের অন্যতম সেরা মিডফিল্ড হাতে পাওয়া জিদান তাই কায়মনোবাক্যে হয়তো পোর্তোকেই চাইবেন।