বিতর্কিতভাবে রোনালদোর গোল বাতিলের পর ক্ষমা চাইলেন রেফারি

রোনালদোর এই গোল বাতিল হয়েছে কাল।ছবি: টুইটার

যোগ করা সময়ের খেলা চলছে। ২-২ গোলে ম্যাচ শেষ হওয়ার অপেক্ষা। এই সময় সত্যিকারের নেতার মতোই দলকে জয় এনে দেওয়া গোল এনে দিয়েছিলেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। সার্বিয়ার বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে দলকে জেতানোর আনন্দে উদ্‌যাপনও শুরু করেছিলেন ৩৬ বছর বয়সী পর্তুগিজ ফরোয়ার্ড। এমন সময় কোত্থেকে ছুটে এলেন আলেক্সান্দর মিত্রোভিচ। গোললাইন পেরিয়ে যাওয়ার মুহূর্তে পা বাড়িয়ে দিলেন।

প্রথম দেখায় মনে হয়েছে গোল হওয়া আটকাতে পারেননি মিত্রোভিচ। রিপ্লে দেখেও তেমনটা মনে হয়েছে। কিন্তু গোললাইনে থাকা সহকারী রেফারি গোলের সিদ্ধান্ত দিলেন না! মূল রেফারিও সে সিদ্ধান্তের পক্ষে থাকলেন। রাগে–ক্ষোভে ফেটে পড়লেন পর্তুগিজ অধিনায়ক। কিন্তু রেফারির তাতে বয়েই গেছে। বরং সিদ্ধান্ত না মেনে উচ্চবাচ্য করায় রোনালদোকে হলুদ কার্ড দেখানো হয়। মেজাজ হারিয়ে অধিনায়কের আর্মব্যান্ড ছুড়ে ফেলে তখনই মাঠ ছেড়ে চলে যান রোনালদো। অথচ তখনো ম্যাচে শেষ হয়নি!

ম্যাচ শেষে পরে ইনস্টাগ্রামে নিজের এ আচরণের ব্যাখ্যা দিয়েছেন। বলেছেন, রেফারির সিদ্ধান্তে তাঁর দেশকে বঞ্চিত করায় মাথা ঠান্ডা রাখতে পারেননি। নিজের পক্ষে যতটুকু সম্ভব সেভাবেই প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

কালও হতাশ হতে হয়েছে রোনালদোকে।
ছবি: এএফপি

বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের শুরুটা ইতিবাচক হয়েছিল পর্তুগালের। নিজেদের মাঠে গত বুধবার আজারবাইজানের বিপক্ষে প্রত্যাশিতভাবে ভালো খেলতে না পারলেও অন্তত জয় নিয়ে ফিরেছিলেন রোনালদোরা। গতকাল প্রথমার্ধের পর মনে হয়েছিল, দ্বিতীয় ম্যাচ শেষেও শতভাগ জয়ের রেকর্ড টিকে থাকবে পর্তুগালের। দিয়োগো জোতার জোড়া গোলে ২-০ গোলে এগিয়ে গিয়েছিল ২০১৬ ইউরো চ্যাম্পিয়নরা। কিন্তু স্বাগতিক সার্বিয়া দ্বিতীয়ার্ধে দুই গোল শোধ করে দেয়।

এরপর ম্যাচ শেষ হওয়ার একদম আগমুহূর্তে নুনো মেন্দেজের দারুণ এক ক্রস পেয়েছিলেন রোনালদো। গোলকিপারকে ফাঁকিও দিয়েছিলেন, কিন্তু রেফারিদের ভুল সিদ্ধান্তে গোলই পেলেন না।

হতাশা থেকে আর খেলায় অংশ নেওয়ারই আগ্রহ পাননি জুভেন্টাসে খেলা পর্তুগিজ অধিনায়ক। ওদিকে যখন সার্বিয়া গোলকিপার বলে কিক নিচ্ছিলেন, মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যান রোনালদো। মাঠ থেকে বেড়িয়ে যেতে যেতে রাগে-ক্ষোভে অধিনায়কের আর্মব্যান্ডও ছুড়ে মারেন মাঠে। রাগ-ক্ষোভ হবে না-ই বা কেন! যোগ করা তিন মিনিট সময়ের শেষ মিনিটে গোলটা করেছিলেন রোনালদো, গোল হলে দল জিতে যায়, সে গোল এভাবে অন্যায্যভাবে বাতিল হলো!

যদিও রোনালদোর এভাবে আর্মব্যান্ড ছুড়ে মারা অনেকের পছন্দ হয়নি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই এতে দেশকে অপমান করা হচ্ছে বলে মনে করেছেন। অনেকে বলেছেন, অধিনায়ক হিসেবে এমনটা করতে পারেন না রোনালদো। সেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকেই জবাব দেওয়ার অস্ত্র মেনেছেন জুভেন্টাস তারকা।
ইনস্টাগ্রামে বেশ আবেগী এক পোস্ট দিয়েছেন রোনালদো, ‘পর্তুগাল দলের অধিনায়ক হওয়া আমার জীবনের অন্যতম বড় পাওয়া এবং এটা আমাকে গর্বে ভরিয়ে দেয়। দেশের জন্য আমি সব সময় নিজের সর্বোচ্চ দিই এবং সব সময় দিব; এটা কখনোই বদলাবে না। কিন্তু কিছু সময় ঠিক থাকা (মাথা ঠান্ডা রাখা) যায় না, বিশেষ করে যখন টের পান, একটা পুরো জাতিকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।’

এ ব্যাপারে পর্তুগালের কোচ ফার্নান্দো সান্তোসও অধিনায়কের কোনো দোষ খুঁজে পাচ্ছেন না। রোনালদোর আর্মব্যান্ড ছুড়ে ফেলার ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে ইউরো জেতানো এই কোচ বলেছেন, ‘আমাকে বলা হয়েছে সে ঘটনাটি ভালোভাবে নিতে পারেনি। পর্তুগালকে জয় এনে দেওয়া গোল এনে দেওয়ার পরও সেটা যদি বাতিল হয়, তখন এমনটা স্বাভাবিক।’

কাল ভালোই খেপেছিলেন রোনালদো।
ছবি: টুইটার

গোল বাতিল নিয়ে এমন বিতর্কের পেছনে ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থার দায় খুঁজে নিতে পারেন। বিশ্বকাপ বাছাইয়ে এত গুরুত্বপূর্ণ সব ম্যাচে ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারিং (ভিএআর) নেই। তা ভিএআর নিজেই বিতর্কিত এক পদ্ধতি, সেটি না হয় না রাখতে পারে। কিন্তু ফুটবলে সর্বজনস্বীকৃত, নিখুঁত গোললাইন প্রযুক্তিও রাখবে না উয়েফা!
এই প্রযুক্তিতে বল গোললাইন পেরোলে সঙ্গে সঙ্গে, সেকেন্ডের ভগ্নাংশ সময়ের মধ্যেই রেফারির হাতে থাকা ঘড়ির মতো যন্ত্রে ‘গোল’ লেখা ওঠে। গতকাল প্রযুক্তিটা থাকলেই আর এত বিতর্কের জন্ম হয় না। কিন্তু বিস্ময়করভাবে বিশ্বকাপের ভাগ্যনির্ধারণী ম্যাচগুলোতে সে প্রযুক্তি রাখা হয়নি। রেফারির সহকারীদের ওপরই সে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আর গতকাল সহকারী গোলের সিদ্ধান্ত দিতে পারেননি বলে রেফারি পানি ম্যাক্কেলি গোলবঞ্চিত করেছেন রোনালদোকে।

ম্যাচ শেষে এই ডাচ রেফারি নাকি নিজের সিদ্ধান্তের ভুল বুঝতে পেরেছেন। পর্তুগাল কোচ ফার্নান্দো সান্তোসের দাবি তেমনই, ‘রেফারি এ ব্যাপারে ক্ষমা চেয়েছেন এবং আমি এ কারণে তাঁকে শ্রদ্ধা করি। কিন্তু এটা মানা যায় না, এমন একটি প্রতিযোগিতায় কোনো ভিএআর নেই, গোললাইন প্রযুক্তি নেই। বলটা আধা মিটার ভেতরে চলে গিয়েছিল। গোলকিপার ও গোললাইনের মধ্যে কোনো বাধা ছিল না। এটা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিল। তিনি (ম্যাক্কেলি) আমার কাছে ক্ষমা চেয়েছেন, কিন্তু এতে সমস্যার সমাধান হয়নি। রেফারিরা ভুল করবেনই, তাঁরা মানুষ। কিন্তু এ কারণেই তো ভিএআর আনা হয়েছে।’

এদিকে গোল বাতিলের হতাশা ভুলে আগামী মঙ্গলবার লুক্সেমবার্গের বিপক্ষে মাঠে নামবেন রোনালদোরা। কালই আয়ারল্যান্ডকে নিজেদের মাঠে হারিয়ে চমকে দেওয়া তথাকথিত দুর্বল লুক্সেমবার্গের বিপক্ষেই ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন রোনালদো, ‘মাথা উঁচু করো এবং পরবর্তী চ্যালেঞ্জের জন্য প্রস্তুত হও। পর্তুগাল, এগিয়ে চলো।’