‘বিদায় করতে চাইলে ডেকে বলে দিক’

ক্লাবের পরিচালকদের আড়াল থেকে বের হতে বলছেন সুয়ারেজ।ছবি: রয়টার্স

ঝড় শুরু হলো বলে! দলের ভেতর বাহির খোলনলচে পাল্টে ফেলতে চাইছে বার্সেলোনা। শিরোপাহীন এক মৌসুমের দায় খেলোয়াড় ও কোচের ঘাড়ে ফেলে দায় সারতে চাইছে বার্সেলোনার পরিচালকেরা। মাঠে নিজেদের ব্যর্থতা মেনে নিতে কোনো আপত্তি দেখাচ্ছেন না ফুটবলাররা। কিন্তু ক্লাবের বাকি সব ব্যর্থতার ঘানি কেন টানবেন তারা? তাই বায়ার্ন মিউনিখ ম্যাচের পরদিন থেকে মুখে কুলুপ আটা খেলোয়াড়েরা অবশেষে মুখ খোলা শুরু করেছেন। সবার আগে তোপ দেগেছেন লুইস সুয়ারেজ।

কেউ তো আমাকে বলেনি যে তারা আমাকে আর চায় না। যদি ক্লাব সত্যি সত্যি এটা চায়, তাহলে এসব সিদ্ধান্ত যিনি নেন, সেই পরিচালক এসে সরাসরি বলুক।
লুইস সিয়ারেজ, বার্সেলোনা ফরোয়ার্ড

বার্সেলোনার ভেতরে যে ক্ষয় দেখা দিয়েছে, সেটা বহু আগেই টের পাওয়া যাচ্ছিল। মৌসুমের মাঝপথে বহুদিন পর কোচ ছাঁটাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। ক্লাবের সভাপতির প্রতি উঠেছে মেসি-পিকেদের নামে কুৎসা রটানোর অভিযোগ। ক্লাব কিংবদন্তিদের সঙ্গে বাজে আচরণের কারণে ক্লাব থেকে ধীরে ধীরে জাভি-পুয়োল-ভালদেসদের দূরত্ব বাড়িয়ে নেওয়া এরই ইঙ্গিত ছিল। এক লিওনেল মেসি সব ফাঁকফোকর ঢেকে রাখছিলেন। কিন্তু রিয়াল মাদ্রিদের কাছে লিগ হারানোর পর চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে ৮-২ গোলে উড়ে যাওয়া বার্সেলোনার দুর্ভোগ সবার কাছে উন্মোচন করে দিয়েছে।

বহু আগ থেকেই বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য বিখ্যাত ক্লাব সভাপতি জোসেপ মারিয়া বার্তোমেউ। এবারও ক্লাবের চেয়ে নিজের স্বার্থই তাঁর কাছে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। আর তাই ক্লাবের পরিচালনার ধরনে কোনো বদল না এনে প্রথমে কোচকে ছাঁটাই করেছেন। এরপর ক্লাবের প্রায় পুরো স্কোয়াডের দুই-তৃতীয়াংশকে বিক্রি করে দেওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েছেন কাছের মানুষ সংবাদমাধ্যমের কাছে। বাতিলের খাতায় আছেন ক্লাবের হয়ে চারটি লিগ ও একটি চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতা লুইস সুয়ারেজও।

নিজেকে বাতিলের খাতায় দেখতে আপত্তি নেই সুয়ারেজের। কিন্তু উরুগুইয়ান স্ট্রাইকারে দাবি, এটা সরাসরি তাঁকে জানানো হোক, ‘সভাপতি বেশ কিছু নাম বলেছেন। এ নিয়ে বেশ কথা হচ্ছে, অনেক পরিবর্তন দেখা যেতে পারে। কিন্তু কেউ তো আমাকে বলেনি যে তারা আমাকে আর চায় না। যদি ক্লাব সত্যি সত্যি এটা চায়, তাহলে এসব সিদ্ধান্ত যিনি নেন, সেই পরিচালক এসে সরাসরি বলুক। বাইরে গুঞ্জন ছড়ানোর চেয়ে ভালো হয় সেটা। আমরা দেখি না কী হয়। আমিও ক্লাবের ভালোই চাই। আপাতত ক্লাবে থাকারই ইচ্ছা। কিন্তু ক্লাবের যদি মনে হয় আমাকে দরকার নেই, তাহলে এ নিয়ে কথা বলতে আমার কোনো আপত্তি নেই। কোম্যান? তাঁর সঙ্গে এখনো কথা বলিনি আমি।’

ক্লাবের রেকর্ড হারের ক্ষত এখনো শুকায়নি। আট গোল খাওয়ার সে ঘটনাকে ক্লাবের বর্তমান অবস্থার চিত্র বলে মানতে নারাজ সুয়ারেজ। বরং এমন এক ম্যাচকে দুর্ঘটনাই বলছেন, ‘লিসবনে যেভাবে হেরেছি, তাতে সবাই দায়ী থাকব। শুধু একজন খেলোয়াড়কে দায়ী করা ঠিক হবে না। কিছু মানুষ একে ব্যক্তিগত বানিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু আমার মনে হয় না বার্সেলোনার প্রতি আমার নিবেদন নিয়ে প্রশ্ন তোলা সম্ভব। এটা এমন এক দিন, যেদিন সবকিছু ভুলভাবে ঘটেছে। ওরা আমাদের চেয়ে ভালো ছিল এবং আমরা ঘুরে দাঁড়াতে পারিনি।’

সুয়ারেজের এভাবে মুখ খোলাতে মনে হচ্ছে আরও বড় ঝড় ধেয়ে আসছে বার্সেলোনাতে। অন্তত সাম্প্রতিক ইতিহাস তাই বলে। মৌসুমের মাঝপথে যখন আরনেস্তো ভালভার্দেকে ছাঁটাই করা হলো, সেবার ক্লাবের ক্রীড়া পরিচালক এরিক আবিদালের বিপক্ষে প্রথমে মুখ খুলেছিলেন সুয়ারেজ। এরপরই রীতিমতো বোমা ফেলেছিলেন মেসি। ক্লাব যেভাবে চলছিল সেটা নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেছিলেন বেশ জোরেশোরে। দল ছাড়ার গুঞ্জন ওঠায় এমনিতেই মেসির কথা শোনার অপেক্ষায় সবাই। দেখা যাক, মেসি এবার কী শোনান সবাইকে!